ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান থানায় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়েরের পর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল গাঢাকা দিয়েছেন। গ্রেফতার আতঙ্কে বৃহস্পতিবার অফিসেও যাননি রাসেল।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল বুধবার রাতে মামলার গুঞ্জনের পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন ইভ্যালির এমডি-চেয়ারম্যান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, মামলা যেহেতু হয়েছে, তারা এখন এজাহারনামীয় আসামি। তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রাসেলের বাসায় অভিযান চালাচ্ছে র্যাব।
এদিন দুপুরে আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মোহাম্মদ রাসেলের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা করেন। এর আগে গতকাল বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে আরিফ বাকের নামের ওই ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন।
Advertisement
দুপুরে মামলার বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামান।
মামলায় লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অভিযোগকারী আরিফ বাকের ও তার বন্ধুরা চলতি বছরের মে ও জুন মাসে কিছু পণ্য অর্ডার করেন। পণ্যের অর্ডার বাবদ বিকাশ, নগদ ও সিটি ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে পুরোপুরি পরিশোধ করা হয়। পণ্যগুলো ৭ থেকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে ডেলিভারি ও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠান সমপরিমাণ টাকা ফেরত দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে পণ্যগুলো ডেলিভারি না পাওয়ায় বহুবার ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধিকে ফোন করা হয়। সবশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর যোগাযোগের মাধ্যমে অর্ডার করা পণ্যগুলো পাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তারা।
এতে আরও বলা হয়, একপর্যায়ে ইভ্যালি পণ্য প্রদান ও টাকা প্রদানে ব্যর্থ হওয়ার পর ৯ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির ধানমন্ডির অফিসে যায়। এসময় এমডি রাসেলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। একপর্যায়ে অফিসের ভেতরে অবস্থান করা রাসেল উত্তেজিত হয়ে তার রুম থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে (আরিফ বাকের) ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন এবং আমাদের পণ্য অথবা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। ভয়-ভীতি ও হুমকিসহ আমাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করে, এতে আমরা চরম আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দিনযাপন করছি এবং পণ্যগুলো বুঝে না পাওয়ায় আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর ধানমণ্ডির ১৪ নম্বর সড়কে অবস্থিত ইভ্যালির প্রধান কার্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির কাস্টমার কেয়ারে ফোন করা হলে পাভেল নামের একজন জাগো নিউজকে বলেন, তাদের অফিস খোলা রয়েছে এবং অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই আছেন। মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, মামলার বিষয়টি সম্পূর্ণই মিথ্যা, বিভ্রান্ত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
Advertisement
এ বিষয়ে ইভ্যালির জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) সোলায়মান হোসেন শাওন জাগো নিউজকে বলেন, মামলা হয়েছে কি না জানি না, তবে শুনেছি থানায় অভিযোগ দিয়েছে একজন। ইভ্যালির সিইও রাসেল স্যার আজ অফিসে যাননি। স্যার যাননি, তাই আমিও অফিসে যাইনি।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ওহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, একটি মামলা রেকর্ড হয়েছে। মামলা রেকর্ড হওয়ার পরে নিয়মিত যে কার্যক্রম হয়, সবগুলোই আমরা শুরু করেছি।
গ্রেফতার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ইভ্যালির একজন গ্রাহক বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেছেন। এজাহারে ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলা যেহেতু হয়েছে, এখন তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, মামলার এজাহারে রাসেল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে তিনটি ধারায় অপরাধের কথা বলা হয়েছে। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ধারাগুলো হচ্ছে- ৪২০, ৫০৬ ও ৪০৬।
দণ্ডবিধির ৪২০ নম্বর ধারায় প্রতারণা করে সম্পত্তি বা অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ অপরাধে একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড ও উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
এছাড়া ৪০৬ নম্বর ধারায় বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে সর্বোচ্চ তিন বছর জেল, অর্থ জরিমানা ও উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। আর ৫০৬ নম্বর ধারায় ভুক্তভোগীকে হত্যা বা আঘাত করার ভয়ভীতি দেখানোর অপরাধের কথা বলা হয়েছে। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
টিটি/এমকেআর/এএসএম