জাতীয়

থানায় হচ্ছে মহিলা হাজতখানা

রাজধানীর অপরাধীদের আতুরঘর বলা হয় পল্লবীকে। মিরপুর জোনের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাও পল্লবী। এছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশের বড় থানাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। অপরাধের মধ্যে মাদকের বিষয়ে বলতে গেলে প্রথম দিকেই আসবে পল্লবীর নাম। সেই পল্লবীকে মাদক মুক্ত এবং অপরাধীদের ছাড় না দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন থানাটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার(ওসি) দাদন ফকির। চলতি বছরের ১৬ মে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানা থেকে বদলি হয়ে পল্লবী থানার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। পল্লবীতে এসেই থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছেন। নিয়েছেন মহিলা অপরাধীদের জন্য আলাদা হাজতখানা তৈরির কাজ। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে ওসি দাদন ফকিরের একান্ত আলাপচারিতায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। পাঠকদের উদ্দেশ্যে এর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো। জাগো নিউজ : জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা। কেমন আছেন? দাদন ফকির : জাগো নিউজকেও শুভেচ্ছা। ভালো আছি। ওসিদের সাক্ষাৎকার নেয়ার বিষয়টি আমি পজিটিভলি নিচ্ছি। ওসিদের অর্জন যা তা সবই মিডিয়াতে আসে না। এটা একটা সুযোগ হতে পারে(হেসে)। জাগো নিউজ : পল্লবীর নাম আসলে বিহারী ক্যাম্পে বর্বরোচিত হামলা ও ১১ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি উঠে আসে। শুধু দেশে নয় বিদেশেও ব্যাপক সমালোচিত এ ঘটনাটি। তবে এবারে তেমন কিছু ঘটেনি। এবার কি এমন ব্যবস্থা নিয়েছিলেন?  দাদন ফকির : আমি আসার পর শুধু এ কেন্দ্রিক চাপবোধ করেছি। এখানে ৪০টি বিহারী ক্যাম্প। এসময়টায় দেশ জুড়ে নাশকতা, জঙ্গি উস্কানি চলছিল। গত বছরের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্য আমি স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। স্থানীয় এমপি, পাড়া মহল্লার সবার সহযোগিতা চেয়েছি। শবে বরাতের রাতে ব্যাপক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছিলাম বিহারি ক্যাম্প জুড়ে। কিছু নির্দেশনাও আগাম দিয়েছিলাম। বলেছিলাম নিয়মের মধ্যে বরাতের রাত উদযাপন করতে। নইলে কোনো অঘটনের দায় নিতে হবে তাদের। আল্লাহর রহমতে টু শব্দটিও হয়নি। এমন কৌশলী চাপে রমজান ও কুরবানির ঈদেও এখানে কোনো সমস্যা হয়নি। জাগো নিউজ : দুর্গা পূজা ও মহররম উপলক্ষে রাজধানীতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও পুরান ঢাকায় হতাহত হয়েছে। মহররমে সবচেয়ে বড় তাজিয়া মিছিল পল্লবী এলাকা থেকে বের হয়। অথচ এখানে কোনো সমস্যা হয়নি। এখানে শৃ্ঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আপনি কি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন? দাদন ফকির : এখানে আগে থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। র‌্যাব সদস্যরাও কাজ করেছেন। শিয়া মতাবলম্বী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কথা শোনা হয়েছে। আমরাও নিরাপত্তার নিরিখে পরামর্শ দিয়েছি। সে কারণে মূলতঃ সমস্যা হয়নি। তবে হামলার বিষয়ে আমাদের আরও সক্ষমতা ও পেশাদারিত্ব, দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি ভালবাসা বাড়ানো উচিত। নিরাপত্তার প্রশ্নে সবারই সহযোগিতা দরকার। জাগো নিউজ : আপনার থানা এলাকায় চেকপোস্ট রয়েছে কিনা? দাদন ফকির : আছে। স্থায়ী চেকপোস্ট বলতে কালশী মোড়ে। এছাড়াও আমাদের মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক টহল দেয়। মোবাইল টিমের মাধ্যমে সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নজরদারি রাখি। প্রয়োজন পড়লে মিরপুর-১০, পপুলার মোড়, ইয়াংথাই, কালশী-২২ তলা মোড় অস্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয়। জাগো নিউজ : আপনার থানা এলাকার অপরাধ মানচিত্র আছে দেখলাম। অপরাধ মানচিত্র অনুযায়ী কোন কোন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ? দাদন ফকির : অপরাধ মানচিত্র অনুযায়ী পল্লবীতে মাদকের হয়রানিটা বেশি ছিল। ১৯৯৩ সালের পর থেকে এখানে স্পট মাদক বিক্রি হতো। আমি আসার পর তা বন্ধ হয়েছে। তদন্তে বিশেষ করে মাদক ব্যবসায় বেশ কিছু নারীর অংশগ্রহণ জানা গেছে। তবে অপরাধী যেই হোক ছাড় দেয়া হবে না। এ থানায় আগে প্রতিদিন মামলা ও জিডি হতো। এখন মামলা ও জিডির সংখ্যা কমে গেছে। জাগো নিউজ : মহিলা অপরাধীদের জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছেন কিনা? দাদন ফকির : অবশ্যই নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা উঠান বৈঠক করেছি। মাদক মুক্তর জন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছি। নারী অপরাধীদের জন্য থানায় আলাদা হাজতখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নারী সেবা ও তদন্ত বিভাগের মাধ্যমে এখানে নারী অপরাধীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাউনসেলিংয়ের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। জাগো নিউজ : আপনার থানার জনবল, সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন? দাদন ফকির : মামলা ও জিডির পরিমাণে জনবল কমই বলতে পারেন। আমরা পরিকল্পনা করে কাজ করার চেষ্টা করছি। তাতে সফলতাও আসছে। তবে জনবল বাড়ানো দরকার। পল্লবী থানার নিজস্ব ভবন নেই। ভাড়া বিল্ডিংয়ে কাজ চলছে। তবে নিজেদের কাজের সুবিধার্থে শাগুপ্ত-ইসিবি ক্যান্টিন চত্বরে নিজস্ব ভবন হচ্ছে। খুব শিগগিরই আমরা নিজস্ব ভবনে কাজ শুরু করতে পারবো। জাগো নিউজ : অপরাধী কিংবা রাজনৈতিক চাপ বোধ করেন কিনা? দাদন ফকির : না। আমি আসার পর গত ৬ মাসে ১ কোটি ২৮ লাখ জাল টাকা জব্দ করেছি। ভেজাল পানি বিরোধী অভিযান চলেছে। নাশকতাকারীদের বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেটের ২২ সদস্য গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরাধী যেই হোক ছাড় পাবে না। জাগো নিউজ : ছোট বেলা সবার স্বপ্ন বড় থাকলেও বেড়ে উঠা ও মন-মানসিকতার পরিবর্তনের কারণে স্বপ্নেও আসে পরিবর্তন। আপনার জীবনের কি লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন? দাদন ফকির : আমার বাড়ি মাদারীপুর শিবচরে। এখন পল্লবীর পাশেই কাফরুলে থাকা। ৩ ছেলে। আমার সহধর্মিনী শিক্ষকতা করেন। তিন ছেলেই পড়ছে। ছোট বেলা থেকেই পুলিশে দুর্বলতা ছিল। তাই ১৯৯১ সালে এসআই হিসেবে পুলিশে যোগদান। চাকুরিটা ভীষণ এনজয় করছি। দেশের সেবায় কাজ করতে পারাটা সৌভাগ্যবান মনে হয়। জাগো নিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।দাদন ফকির : আপনাকেও ধন্যবাদ।জেইউ/এএইচ/এমএস

Advertisement