এবার নিজ দেশের কৃষ্টি-কালচার বহন করা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে তালেবানের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ শুরু করেছেন আফগান নারীরা। ‘ডুনটটাচমাইক্লথস’ ও ‘আফগানিস্তানকালচার’ নামে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে থাকা নারীরা অংশ নিচ্ছেন এ আন্দোলনে।
Advertisement
সম্প্রতি তালেবানের নতুন সরকারের উচ্চ শিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রী আব্দুল বাকি হাক্কানি শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আফগানিস্তানের নারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারবেন, এমনকি স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়তে পারবেন তারা। তবে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে বসে নয়, আলাদা ক্লাসরুমে বসে পড়তে পারবেন এবং অবশ্যই হিজাব পড়তে হবে। মেয়েদের জন্য আলাদা ড্রেসকোডও থাকবে বলে জানান তিনি।
দেশটিতে নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বেশ কিছুদিন ধরে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন আফগান নারীরা। তালেবানের এ কর্মকর্তার বক্তব্যের পর এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আন্দোলন শুরু করেছেন তারা।
তালেবানের নতুন সরকারে উচ্চ পর্যায়ে শুধু পুরুষরা রয়েছেন। নারীদের ঠাঁই হয়নি সেখানে। ১৯৯৬ সালেও শরিয়াহ আইনের অজুহাতে তালেবান আফগান নারীদের শিক্ষা, খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত করে। সেটি নিয়ে এবারও শঙ্কা আফগান নারীদের।
Advertisement
আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব আফগানিস্তানের ইতিহাসের সাবেক অধ্যাপক ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ড. বাহার জালালি প্রথম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যাশট্যাগ দিয়ে আন্দোলনের সূচনা করেন। তিনি ছবি পোস্ট করে হ্যাশট্যাগে লিখেন, ‘ডুনটটাচমাইক্লথস’। তার এ বক্তব্য দ্রুত ছড়িয়ে পরে এবং অন্যদের আন্দোলনে অংশ নিতে উৎসাহিত করে।
ড: বাহার জালালি বলেন, আফগানিস্তানের পরিচয় ও সার্বভৌমত্ব এখন হুমকির মুখে বলে তার মনে হয়েছে, এটা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। সে কারণেই তিনি এ আন্দোলন শুরু করেন। তিনি অন্য আফগান নারীদেরকেও "আফগানিস্তানের আসল চেহারা' তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি বিশ্বকে বলতে চাই, গণমাধ্যমে যেসব পোশাকের ছবি আপনারা দেখছেন সেগুলো আমাদের সংস্কৃতির নয়, আমাদের পরিচয় সেটা নয়।
ফেমানা আসাদ নামে এক আফগান নারী যিনি যুক্তরাজ্যে আছেন, ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ছবি শেয়ার করেন এবং এতে লিখেন, এটি আফগান কালচার, আমার ঐতিহ্যবাহী পোশাক।
Advertisement
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি শেয়ার করা আরেক আফগান নারী ৩৭ বছর বয়সী লিমা হালিমা আহমাদ একজন গবেষক ও পায়ওয়ান্দ আফগান অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি নারী অধিকার সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। তিনিও হ্যাশট্যাগ দিয়ে প্রতিবাদ করেছেন।
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সামিরা বলেন, তালেবান এরই মধ্যে নারীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা শুরু করেছে। তিনি বলেন, হয় আমাকে লড়াই করতে হবে অথবা বাসায় বসে থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, নীরব থাকার চেয়ে তাদের হাতে গুলি খেয়ে মরাই ভালো।
১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল দখলে নেওয়ার পর সবচেয়ে বেশি শঙ্কা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন দেশটির নারীরা। তালেবানের নতুন সরকার ঘোষণা দেওয়ার পর নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করছেন তারা।
সূত্র: দ্যা গার্ডিয়ান, বিবিসি
এসএনআর/জেআইএম