অবশেষে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার প্রতিবন্ধী শরিফুল ইসলাম মারুফ। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে মারুফের হাতে ভোটার তালিকার অনলাইন কপি হস্তান্তর করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহজাহান মানিক। পরেরদিন তার হাতে জন্মনিবন্ধন সনদ তুলে দেন ঘোড়াঘাট পৌরসভার মেয়র।
Advertisement
জন্মের দেড় বছর পর ধান সেদ্ধ করার চুলাতে পড়ে পুড়ে যায় মারুফের দুটি হাত এবং মুখের কিছু অংশ। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং জন্মনিবন্ধন সনদ না থাকায় সরকারি কোনো সুবিধা পাচ্ছিলেন না প্রতিবন্ধী মারুফ। বয়স প্রমাণে ভ্যাকসিন কার্ড এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো কাগজ না থাকায় করতে পারেননি জন্মনিবন্ধনের কার্ড। পাশাপাশি পুড়ে যাওয়া দুটি হাতের ফিঙ্গার না থাকায় এবং মুখের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যাওয়ায় চোখের আইরিশ স্ক্যানে জটিলতায় ভোটার তালিকাতেও ছিল না তার কোনো অস্তিত্ব। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করা ৩০ বছর বয়সী মারুফ জন্মগতভাবে বাংলাদেশের নাগরিক হলেও কাগজে-কলমে নাগরিকত্বের কোনো প্রমাণ ছিল না তার।
মারুফের সার্বিক বিষয় নিয়ে গত ২ জুন ‘জন্মনিবন্ধনের বেড়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছে প্রতিবন্ধী মারুফের জীবন’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাগোনিউজ২৪.কম। সংবাদ প্রকাশের পর মারুফকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ শুরু করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। পরে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন কমিশন।
একযুগ পর ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পেরে খুশি মারুফ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘জন্মনিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য কতবার বিভিন্ন দপ্তর এবং মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি তার শেষ নেই। তারপরও কোনো কাজ হয়নি। এতোদিন পর এসে বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি ভোটার হলাম। এখন আমি প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারের দেওয়া অনুদানও পাবো।’
Advertisement
ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহজাহান মানিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি যোগদান করার পরই মারুফসহ বেশ কয়েকজন প্রতিবন্ধীর বিষয়ে জানতে পারি। যারা কেউই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। পরে তাদের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এসব প্রতিবন্ধীদের ভোটার তালিকায় যুক্ত করার আবেদন কমিশনে পাঠানো হয়। বিশেষ কারণে ভোটার তালিকায় যুক্ত হতে না পারা এসব প্রতিবন্ধী এখন ভোটার তালিকায় যুক্ত হলেন।’
এমদাদুল হক মিলন/এসআর/এমএস