জাতীয়

বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব স্থাপনে আগ্রহী দুই ডজন প্রতিষ্ঠান

বিদেশগামী যাত্রীদের দ্রুত করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষা করে ফলাফল (রিপোর্ট) দিতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রচলিত আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিই স্থাপিত হবে। বিদেশ থেকে র‌্যাপিড আরটি-পিসিআর মেশিন আমদানির খবর ছড়ালেও সূত্র বলছে, বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর দ্রুত বিদেশ যাওয়ার বাস্তবতা বিবেচনায় বাইরে থেকে নতুন কোনো মেশিন আনা হচ্ছে না। প্রচলিত আরটি-পিসিআর ল্যাবই স্থাপিত হবে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত এ বিমানবন্দরে।

Advertisement

বর্তমানে ঢাকাসহ সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আরটি-পিসিআর মেশিনে করোনার নমুনা পরীক্ষা ও রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি এসব মেশিনেই দ্রুত নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করার জন্য একাধিক মন্ত্রণালয়ের সম্পৃক্ততা অত্যাবশ্যক বলে মতামত দিয়েছে।

বিদেশগামী যাত্রীদের প্রয়োজন বিবেচনায় সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশনায় সম্প্রতি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শাহজালালসহ একাধিক বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর মেশিন স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করে।

দরপত্রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রায় দুই ডজন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি স্থাপনের জন্য আবেদন করে। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কে কী প্রস্তাব দিয়েছে তা পর্যালোচনার জন্য প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়।

Advertisement

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে শাহজালাল বিমানবন্দরে র‌্যাপিড আরটি-পিসিআর ল্যাবসেবা কার্যক্রম বিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটির সভা হয়।

সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, যেসব প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের নাম, কার কী সক্ষমতা রয়েছে আর কোন প্রতিষ্ঠান কীভাবে কতদিনে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করতে পারবে সে বিষয়গুলো কারিগরি কমিটির সদস্যরা পর্যালোচনা করেন। এরপর মতামত আবার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, র‌্যাপিড আরটি-পিসিআর বলতে আসলে কিছু নেই। পরীক্ষাটির নাম আরটি-পিসিআর, রিপোর্টটা আমরা ১২ ঘণ্টায় দেবো, নাকি চার ঘণ্টায় দেবো এটা ল্যাবরেটরির লোকবল ও সক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে। বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর মেশিন বসানো হলে সরকারের কঠোর নজরদারির প্রয়োজন হবে।

এ নজরদারি কে বা কারা করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, এখানে ল্যাবরেটরির কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শৃঙ্খলা ও অন্য বিষয়গুলো সিভিল অ্যাভিয়েশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দেখবেন। শ্রমিকদের অ্যাপয়েনমেন্ট দেয়া ও সুশৃঙ্খলভাবে নমুনা পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

Advertisement

বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর টেস্টের সুবিধা না থাকায় সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে যাত্রী নেওয়া হবে না বলে জানায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স এমিরেটস।

এর মধ্যে গত ৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকার হযরত শাহজালাল, সিলেটের ওসমানী ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব বসানো হবে।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গণমাধ্যমেকে জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন একটি শর্ত দেয়া হচ্ছে যে, ফ্লাই করার ৪, ৬ বা ৮ ঘণ্টা আগে যাত্রীকে পিসিআর টেস্ট করতে হবে। বেশ কয়েকটি দেশ থেকে এ রকম বলা হয়েছে। গত কয়েক দিন থেকে আলোচনা চলছিল। আজ এটা প্রিসাইজ করে দেয়া হয়েছে। দু-তিন দিনের মধ্যে টেস্টিং ফ্যাসিলিটিজ করা হবে।

করোনার কারণে যেসব দেশ বাংলাদেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েকটি সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ঘোষণা দেয়। নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হলেও বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যাত্রীদের বেশকিছু শর্ত মেনে তবেই যেতে বলা হয়েছে। যেমন- যাত্রার ছয় ঘণ্টার মধ্যে বিমানবন্দরে পিসিআর টেস্ট করতে হবে।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দ্বিতীয় তলায় কার পার্কিং এলাকায় আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরে কয়টি আরটি-পিসিআর মেশিন বসবে, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি ফ্লাইটে ৩০০ যাত্রী ধরা হলে যেসব পিসিআর ল্যাবে গড়ে ৯৪টি থেকে ৯৬টি নমুনা একসঙ্গে পরীক্ষা করা যায়, সেগুলো বসানো হলে চার-পাঁচটি মেশিনেই চলবে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ল্যাবগুলো চললে সেগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলও প্রয়োজন হবে।

এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনের অবকাঠামো নির্মাণসহ সার্বিক কাজটি করবে। তারা আরটি-পিসিআর মেশিন স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করে, যেখানে ২০-২২টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার কী সক্ষমতা রয়েছে তা পর্যালোচনা করে দেখার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের কারিগরি কমিটির মতামত জানতে চাওয়া হয়। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে কারিগরি কমিটি আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নথিপত্র পর্যালোচনা করে এবং মতামত প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠায়।

এমইউ/এইচএ/জিকেএস