করোনাভাইরাস নিয়ে বেশ সতর্ক ছিলেন ড্যানিয়েল এবং তার স্ত্রী ডেভি। তারা নিজেদের সব জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখতেন, কাজ থেকে ফিরেই গোসল সেরে নিতেন, এমনকি মুদি দোকান থেকে আনা জিনিসপত্রের বিষয়েও সচেতন ছিলেন তারা। কিন্তু সব ধরনের সতর্কতা এবং সচেতনতার পরেও করোনা সংক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারেননি এই দম্পতি।
Advertisement
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগের সেবিকা ছিলেন ডেভি। গত আগস্টের প্রথম দিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যখন হাসপাতালে ভর্তি হলেন তখন তিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। চিকিৎসকদের সহায়তায় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্তানের জন্ম দেন ৩৭ বছর বয়সী ডেভি। কিন্তু সন্তানের মুখ দেখার আগেই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে গেছেন তিনি। তার সদ্যজাত সন্তান মায়ের স্পর্শ থেকেও বঞ্চিত হয়েছে।
অপরদিকে ডেভির স্বামী ড্যানিয়েলও (৩৮) হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই মেয়ের জন্মের কথা জানতে পারেন। হাসপাতালের সেবিকারা তার সদ্যজাত সন্তানের ছবি দেখান তাকে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার দুই সপ্তাহ পর তিনিও মারা যান। ফলে তাদের সন্তান যে মাত্রই পৃথিবীতে এসেছে সে না পেলো বাবা-মায়ের আদর না পেয়েছে বাবা-মায়ের দেওয়া ভালোবাসার নাম। জন্মের পরপরই বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেল ছোট্ট এই ফুটফুটে শিশুটি।
ড্যানিয়েলের মৃত্যুর আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যখন তার সন্তানের নাম জানতে চেয়েছিল তখন শিশুটির দাদি তাদের বলেন, আমি আমার ছেলের জন্য অপেক্ষা করছি। সেই তার মেয়ের নাম দেবে। কিন্তু ড্যানিয়েল সেই সুযোগ পাননি। বাবা হিসেবে সন্তানকে একবার কোলেও নিতে পারেননি তিনি। এখনও কোনো নাম না পাওয়ায় হাসপাতাল তাকে বেবি গার্ল হিসেবেই ডাকছে। আর তার পরিবারও তাকে এই নামেই গ্রহণ করে নিয়েছে।
Advertisement
শিশুটির দাদি জানিয়েছেন, ডেভি গত ২৬ আগস্ট এবং ড্যানিয়েল গত ৯ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন। তাদের মৃত্যুর ফলে তাদের পাঁচ সন্তান এতিম হয়ে গেছে। এদের বয়স তিন সপ্তাহ থেকে ৮ বছর। এই দম্পতি ভ্যাকসিন নেননি।
ড্যানিয়েলের মা টেরি ম্যাসিয়াস আগে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। এখন তিনি অবসরে আছেন। তিনি বলেন, তারা ভ্যাকসিন নিতে চায়নি এমন নয়। তারা ভ্যাকসিন নেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। তারা ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা নিয়ে আরও বেশি জানার চেষ্টা করছিল। কিন্তু তার আগেই সবকিছু শেষ হয়ে গেল।
ছেলে এবং বউকে হারিয়ে পাঁচ নাতি-নাতনির দায়িত্ব এখন টেরির কাঁধে। তার ৮ বছরের নাতি এবং পাঁচ বছর বয়সী নাতনি কিছুটা বুঝতে পারছে যে তাদের বাবা-মা মারা গেছেন। অপরদিকে তার তিন বছর বয়সী নাতনি বৃহস্পতিবার দাদিকে জানিয়েছে, সে তার বাবাকে স্বপ্নে দেখেছে।
সে তার বাবাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে দেখেছে। যদিও পরে সে শুনেছে যে তার বাবা আর কখনওই ফিরে আসবে না। কিন্তু মৃত্যুর মতো একটি বিষয় বোঝার মতো বয়স তো এখনও তার হয়নি। এখন এই বাচ্চাদের নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েছেন টেরি। এমন দিন দেখতে হবে সেটা তারা কখনওই ভাবেননি।
Advertisement
টিটিএন/এএসএম