রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির অন্যতম ভরসা জাতীয়তাবাদী যুবদল। আগামীতে নানা ইস্যুতে আন্দোলনে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে যুবদল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যুবদলের বর্তমান কমিটির নেতারা নির্ধারিত তিন বছর মেয়াদ শেষ করে আরও প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হলেও এখনও কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। এছাড়া তৃণমূল নেতৃত্ব তুলে আনার ব্যর্থতা ও এরই মধ্যে ঘোষিত কমিটিগুলোতে স্বজনপ্রীতি, সক্রিয়দের বাদ দিয়ে নিষ্ক্রিয়দের রাখা, আর্থিক লেনদেনসহ নানা অভিযোগে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নাখোশ হাইকমান্ড। এ প্রেক্ষাপটে সংগঠনটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে দুই বছর পর বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। সবকিছু মাথায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ এই সংগঠনকে উজ্জীবিত ও সক্রিয়ভাবে মাঠে চায় বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এজন্য সংগঠনের নেতৃত্বে পরিবর্তনের কথা ভাবছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কমিটি ঘোষণার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু না জানালেও সেপ্টেম্বরের মধ্যে তিনি কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল কমিটি গঠনের বাকি কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন যুবদল নেতাদের। কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন হলেই নতুন নেতৃত্ব আসতে যাচ্ছে সংগঠনটিতে।
সূত্র মতে, ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক করে যুবদলের সুপার ফাইভ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর এক মাসের মধ্যে আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানা হয়নি। মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র এক মাস আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ২৭১ সদস্যের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি দলীয় ফোরামে জমা দেওয়া হয়। পরে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০২০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ১১৪ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
Advertisement
এরপর উপজেলা-থানা-পৌর শাখার কমিটি গঠন তথা তৃণমূলে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি যুবদলের ১১টি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। এসব টিমের তত্ত্বাবধানে সারাদেশের ৯৩৫টি ইউনিটের (উপজেলা-থানা-পৌর) মধ্যে ৭০০টির বেশি শাখায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়াও ১০০টির মতো কমিটি অনুমোদনের জন্য বর্তমানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় দফতরে জমা রয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে খুব দ্রুত এসব কমিটি ঘোষণা করা হবে। তবে এসব কমিটি গঠনে বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এদিকে ইউনিয়ন ও মহানগরের ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজও চলছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে সারাদেশে ৮২টি সাংগঠনিক জেলার প্রায় সবগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে মাদারীপুর, ঝালকাঠি, বান্দরবান ও মানিকগঞ্জ জেলার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এই চার জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে কাজ চলছে। লালমনিরহাট, টাঙ্গাইল, সিলেট জেলা ও মহানগর এবং বরিশাল উত্তরে বর্তমানে আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। অন্যদিকে আংশিক কমিটি রয়েছে ভোলা, ময়মনসিংহ দক্ষিণ ও লক্ষ্মীপুর জেলায়। এই তিন জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এখনও কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেননি।
জানা গেছে, যুবদলের আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে হঠাৎই তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সুপার ফাইভ নেতারা এ নিয়ে কয়েকটি বৈঠকও করেছেন। দলীয় ফোরামে জমা দেওয়া প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির কয়েকজন এরই মধ্যে মারা গেছেন। এছাড়া প্রস্তাবিত কমিটিতে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থাকা ত্যাগী কয়েকজন নেতার নামও বাদ পড়েছে। পদক্রম বজায় রেখে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে যুবদলের প্রস্তাবিত সম্পূরক কমিটি (সম্পাদক, সহ-সম্পাদক ও সদস্য) সদ্যবিদায়ী আগস্ট মাসের মধ্যে দলীয় ফোরামে জমা দিতে চেয়েছিলেন শীর্ষ নেতারা।
এদিকে যুবদলের একটি অংশ চায় যাতে আহ্বায়ক কমিটি হয় ও পরে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়।
Advertisement
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবদলের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী এক নেতা বলেন, মূলত বর্তমান নেতৃত্বের সীমাহীন ব্যর্থতার কারণে সংগঠন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের ইতিহাসে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও আমিরুজ্জামান খান আলিমের কমিটিই প্রথম, যাদের বিরুদ্ধে বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এর আগে শাহাবুদ্দিন লাল্টু, আজিজুল বারী হেলাল, নাসির উদ্দিন পিন্টু কমিটির বিরুদ্ধে গ্রুপিং করে অছাত্রদের পদ দেওয়াসহ নানা অভিযোগ থাকলেও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে ঘিরে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল। সেই টুকু যুবদলের নেতৃত্বেও ব্যর্থতা দেখিয়েছেন। আগামীতে কমিটি গঠনের ব্যাপারে সার্বিকভাবে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। সিন্ডিকেটমুক্ত গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ের পরিকল্পনা হচ্ছে। এর আগে যারা অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের দায়িত্বপালন করেছেন, তাদের দ্বিতীয়বার কোনো সংগঠনের শীর্ষ পদে পদায়ন না করার নীতি গ্রহণ করেছে দলীয় হাইকমান্ড।
যুবদলের নতুন কমিটির শীর্ষ পদে নেতাকর্মীদের আলোচনায় রয়েছেন- সংগঠনটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো আব্দুল করিম বাদরু, সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, দফতর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান আলিম।
কমিটির বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন জাগো নিউজকে বলেন, দেশের যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে যুবদল কাজ করে যাচ্ছে। যুবদলের যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন আমাদের হাইকমান্ড বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু বলেন, আমরা যুবদলের আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টা করছি। নতুন কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, কমিটি গঠন-পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে দলের হাইকমান্ড চাইলে যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, আমরা এখন কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা ও যেসব কমিটি বাকি আছে সেগুলো গঠনের কাজ করছি।
নতুন কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া। এতে উৎসাহিত, লাফালাফি বা মন খারাপের কিছু নেই। বরং, এখন আমাদের যে দায়িত্ব, আমরা সেটা পালন করে যাচ্ছি বলে জানান তিনি।
কেএইচ/এআরএ/এসএইচএস/জেআইএম