‘আজ কলেজে ক্লাস হলো অথচ আমি আসতে পারলাম না৷ ঢাকায় মেসে থাকার সামর্থ্য আমার নেই৷ তাই কলেজ খুললেও ক্লাসে আসতে পারিনি৷’
Advertisement
নেত্রকোনা থেকে ফোনে জাগো নিউজকে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তামিম হাসান৷ তিনি ঢাকা কলেজের আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী৷
তামিম বলেন, ‘ঢাকা কলেজে ভর্তির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল স্বল্প খরচে পড়ালেখা করা৷ আবার শিক্ষার মানও অনেক ভালো৷ এখন হল না খুলে সশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে৷ কী করবো? আমার তো ঢাকায় থাকার কোনো জায়গা নেই৷’
শুধু তামিম হাসান নয়, হল না খুলে সশরীরে ক্লাস শুরু হওয়ায় এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যায়নরত আরও অনেক শিক্ষার্থী৷
Advertisement
প্রায় দেড় বছর পর আজ (রোববার) খুলেছে স্কুল-কলেজ৷ এ জন্য প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হল খুলতে গত ৯ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা অনুসরণপূর্বক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়৷ তবে সে নির্দেশনার পরও হল খোলেনি ঢাকা কলেজ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা৷
এ নিয়ে শেখ কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইয়াসিন আলম বলেন, ‘আমাদের বই-খাতা, বেড, জিনিসপত্র সব হলে৷ হল না খুললে আমরা কোথায় যাবো? আমাদের বলছে আত্মীয়ের বাসায় থাকতে৷ ঢাকায় যাদের আত্মীয় নেই তারাই তো হলে থাকে৷ ঢাকায় আমার কোনো আত্মীয় নেই৷ বাইরে মেসে থাকার সামর্থ্যও আমার নেই৷’
কলেজ খোলার খবরে ঢাকায় এসে মিরপুরে মামার বাসায় উঠেছেন দক্ষিণ হলের আবাসিক ছাত্র আবদুর রহমান৷ জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আমরা এক বছরের বেশি সময় ধরে হলে থেকেছি। এখন হঠাৎ আর মেসে ওঠা সম্ভব না ৷ মামার বাসায় কতদিনই বা থাকতে পারবো? আর এখান থেকে ক্লাস করতেও অনেক সমস্যা হবে৷ আমরা চাই দ্রুত আমাদের হল খুলে দেওয়া হোক৷’
কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য আসন রয়েছে চারশ’র কিছু বেশি৷ তবে সব মিলিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রায় আট শতাধিক শিক্ষার্থী হলে থাকেন৷ কিছুদিন আগে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পাস করায় এখন শুধু প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবাসিক ছাত্রের তালিকায় রয়েছেন৷ আর সদ্য ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এখনও হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি৷
Advertisement
এ কারেণে শুধু দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা ৷
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ কামাল ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, দেড় বছর হল বন্ধ ছিল। হলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে৷ হল খোলার ব্যাপারে হলের তত্ত্বাবধায়কদের সঙ্গে কলেজ প্রশাসনের আলাপ-আলোচনা চলছে৷’
সরকারের নির্দেশনার পরও হল না খোলার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর) থেকে হল খোলার জন্য যে শর্তগুলো দেওয়া হয়েছে আমাদের জন্য সেগুলো কঠিন হয়ে যাচ্ছে৷ আমরা হল খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ হল সুপারদের নির্দেশ দিয়েছি, তারা কাজ করছেন৷ শিগগিরই খুলে দেবো৷
তবে কবে হল খোলা হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে তিনি কিছু বলেননি৷
নাহিদ হাসান /ঢাকা কলেজ/জেআইএম