দেশজুড়ে

স্কুল শেষে আড্ডা, চটপটি-ফুচকায় মাতোয়ারা শিক্ষার্থীরা

নওগাঁয় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে শিক্ষাঙ্গন। দীর্ঘদিন পর চিরচেনা শ্রেণিকক্ষে ফিরেছেন শিক্ষার্থীরা। স্কুলের সামনে বসা বিভিন্ন দোকানে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের ভিড়।

Advertisement

রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা চিরচেনা সেই স্কুল ড্রেস আর কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ছুটে এসেছে বিদ্যালয়ে। উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে তারা শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে। তবে তার আগে স্কুল ফটকে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মাপা হয়। এছাড়া সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হয়।

নওগাঁ কে ডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের গেটের সামনে দেখা যায় ভ্রাম্যমাণ চটপটি, ফুচকা, বিরিয়ানি ও ডালপুরির দোকান। দোকানের পাশে চেয়ারে বসে বিরিয়ানি খেতে দেখা যায় কয়েকজন ক্ষুদে শিক্ষার্থীকে। অনেকে আবার চেয়ারে গোল হয়ে বসে গল্প আড্ডায় মেতে ওঠে। দীর্ঘদিন পর স্কুল চালু হওয়ায় মুখরোচক খাবারের জন্য শিক্ষার্থীরা যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে তেমনি দোকানদাররাও শিক্ষার্থীদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন।

নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ আল নোমান ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সজিব আহমেদ জানায়, দীর্ঘদিন পর স্কুলে ফিরতে পেরে তারা খুবই আনন্দিত। দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ক্লাস করেছে তারা। যেসব বন্ধুদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে দেখা হয়নি তাদের সঙ্গে দেখা করতে পেরে তারা খুবই খুশি। ক্লাস শেষে আড্ডা দিয়েছে। তারপর কয়েকজন বন্ধু মিলে ফুচকা খেয়েছে একসঙ্গে।

Advertisement

একই স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী লুবান বলেন, ‘স্কুলে এসে ক্লাস করতে না পেরে মনে হয় হাপিয়ে উঠেছিলাম। পড়াশুনাও তেমন মনোযোগ দিয়ে করতাম না। এক সময় মনে হতো স্কুল ছুটি হলে ভালো হয়। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে স্কুল চালু হলেই ভালো হয়। মনে হচ্ছে করোনা ভাইরাস আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে এসেছে। অনেকের সঙ্গে ফোনে কথা হলেও তেমন দেখা হতো না। স্যার ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে অনেক ভাল লেগেছে। সেই সঙ্গে মুখরোচক খাবার তো আছেই। স্কুলে প্রবেশের সময় হ্যান্ডস্যানিটাইজার দেওয়া এবং তাপমাত্রা মেপে ক্লাসে যেতে হয়েছে। স্কুল চালু হওয়ায় এখন পড়াশুনায় বেশি বেশি মনযোগ দিতে হবে।’

কে ডি স্কুলের গেটে ভ্রাম্যমান ডালপুরি বিক্রেতা আতোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগে এ খাবারটি এখানে কখনো বিক্রি হয়নি। স্কুলও বন্ধ ছিল। প্রতি পিস ডালপুরি পাঁচ টাকা। প্রথমদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৬০০ টাকার মতো বিক্রি হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যা বিক্রি হয়েছে তাতে ৩০০-৪০০ টাকা লাভ থাকবে। যেহেতু স্কুল চালু হয়েছে আরও বেশি পরিমাণ বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’

ভ্রাম্যমাণ চটপটি ও বিরিয়ানি বিক্রেতা রাজু আহমেদ বলেন, ‘স্কুল বন্ধ থাকায় আমার বেচাবিক্রিও বন্ধ ছিল। স্কুল চালু হবে শুনে দুদিন আগে থেকে দোকান করার প্রস্তুতি নেই। সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত প্রতি প্লেট চটপটি ও বিরিয়ানি ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা করে প্রায় ১৩০০ টাকার বিক্রি হয়েছে। এতে লাভ থাকবে প্রায় ৪০০-৫০০ টাকা। দীর্ঘদিন পর স্কুল চালু হওয়ায় মুখরোচক খাবারের জন্য শিক্ষার্থীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। আগে যখন স্কুল চালু ছিল তখন দিনে তিন থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি।’

নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিলীমা আখতার জাহান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে প্রবেশের পূর্বে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে এবং তাপমাত্রা মাপা হয়েছে। এ কাজে দুইজন পিয়ন ও দুইজন আয়া ছিলেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২২০০ জন। প্রথম দিন ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। এছাড়া আমরা বিদ্যালয়ের নিজস্ব মনোগ্রাম সংবলিত মাস্ক প্রস্তুত করে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

Advertisement

জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৩৭৪টি, মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি স্কুল ৪৪৪টি, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কলেজ ১০৯টি ও মাদরাসা ৩৫০টি এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজ ২২টি।

আব্বাস আলী/এফআরএম/জেআইএম