করোনা সংক্রমণের কারণে দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকার পর রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে যাচ্ছে। স্কুল খোলার খবরে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত স্কুলশিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
Advertisement
তবে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার পশ্চিম কারফা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর কুড়লিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাতলা বাইনের দীঘিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পটিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুঠিয়ার নিত্যানন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহেরঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এমএ বশির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারও শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্ছ্বাস ও আনন্দের বদলে নিরানন্দ এবং নিরাশা ভর করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জল্লা ইউনিয়নের পশ্চিম কারফা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির জরাজীর্ণ পুরাতন ভবন ৬/৭ মাস আগে ভেঙে ফেলা হয়েছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাঠদানের জন্য বিকল্প কোনো স্থাপনা নির্মাণ করেনি। বিদ্যালয়ের বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্র বিভিন্ন বাড়িতে, চায়ের দোকানে এবং খোলা আকাশের নিচে স্তূপ আকারে পড়ে আছে। ফলে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সশরীরে পাঠদানে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিপু রায় জানান, বিদ্যালয়টির জরাজীর্ণ পুরাতন ভবন ভেঙে নতুন করে স্থাপনা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে বিদ্যালয়ের অদূরে সুশান্ত সমদ্দার নামে এক ব্যক্তির মুরগির ফার্মের পাশে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Advertisement
পশ্চিম কারফার স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল হালদার জানান, মুরগির ফার্মের এক কর্নারে নির্মল নামে এক ব্যক্তি কয়েকটি বেঞ্চে প্রাইভেট পড়াতেন। পাশেই বস্তাভর্তি বিকট দুর্গন্ধযুক্ত মুরগি ও মাছের খাবার এবং ময়লা আবর্জনার স্তূপ। খোলা ঘরের চারিদিকে মুরগির খামারের নেট দিয়ে ঘেরা। সেখানে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রামেন্দু হালদার শিশির জানান, বিদ্যালয়টির পুরাতন ভবন ভেঙে ফেলার পর ঠিকাদারকে অস্থায়ী একটি স্থাপনা নির্মাণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে ঠিকাদার তাতে কর্ণপাত করেননি।
অন্যদিকে উপজেলার উত্তর কুড়লিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পুরাতন ভবন এক বছর আগে ভেঙে ফেলা হয়। ওই স্থানে কচুরিপানা ও পানি থৈ থৈ করছে। দূর থেকে দেখলে ওখানে একটি বিদ্যালয় ছিল বলে মনে হবে না। কিছু দূরে একটি বাড়ির ভেতরে কয়েকটি বেঞ্চ ও টেবিল চেয়ার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। তার উপরে ছোট আকারের একটি পলিথিন টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্ধ্যা রানী জানান, বিদ্যালয় পুরাতন ভবন ভেঙে নতুনভাবে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের পাশের একটি বাড়িতে পাঠদানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
Advertisement
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইন্দুভূষণ বাড়ৈ বলেন, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন ভেঙে ফেলায় পাশের একটি বাড়িতে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সে পরিবেশে পাঠদান শিক্ষার্থীদের কতটুকু আকর্ষণ করবে তা বলতে পারছি না।
সাতলা বাইনের দীঘিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পরিমল কুমার বাইন অনু জানান, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি নির্মাণে দরপত্র আহ্বানের কারণে আগেই ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাঠদানের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তবে ১১ সেপ্টেম্বর একটি অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করার চেষ্টা চলছে।
পটিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমল কৃষ্ণ জানান, নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ক্লাস নেওয়ার মতো পাশে কোনো স্থাপনা নেই। তবে নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় আপাতত ক্লাস নেওয়া হবে।
উপজেলার নিত্যানন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী উজ্জ্বল সরকার, শিখা, তাপসী, রুমানা, সম্রাট জানায়, স্কুল খুলে দেওয়ায় আমরা অনেক খুশি। তবে ক্লাস করতে পারব কি-না জানি না।
উজিরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাছলিমা বেগম বলেন, কিছু বিদ্যালয়ে পাঠদানে সমস্যা রয়েছে। অচিরেই এ সমস্যার সমাধান করা হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী মীর মহিদুল ইসলাম বলেন, অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ধরা আছে কি-না আমার জানা নেই। তবে ঠিকাদারকে বলে বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রণতি বিশ্বাস জানান, শিক্ষার্থীরা যাতে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে পারে, সে বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষকের দায়িত্বে অবহেলা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ. মজিদ সিকদার বাচ্চু বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশ নেবে, ক্লাস করবে- এ নিয়ে তাদের মধ্যে উৎসাহের কমতি নেই। আজ যাদের কারণে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, উজিরপুর উপজেলায় ১৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫২টি, মাদরাসা ২৩টি এবং কলেজ রয়েছে ১২টি। এতে ১২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী রয়েছে বলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। সাইফ আমীন/এমআরআর