দেড় বছর পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সশরীরে ক্লাস শুরু হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। বাদ থাকছে শুধু প্রাক-প্রাথমিক স্তর। দীর্ঘ বিরতির পর ক্লাস নিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুত। এই দেড় বছরে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে কিন্ডারগার্টেনগুলো। শিক্ষার্থী সংকট সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অধিকাংশ শিক্ষকের টিকা না পাওয়া নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ।
Advertisement
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিন্ডারগার্টেনগুলোর সঙ্গে প্রায় ১০ লাখের মতো শিক্ষক জড়িত। তাদের একটি বড় অংশ টিকা পাননি। শিক্ষকদের অনেকে নিজ উদ্যোগে টিকা নেওয়ার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করেও মেলেনি সমাধান।
এদিকে বছরের শুরুতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল, তাদের ১০ শতাংশেরও কম বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। সে হিসাবে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ৯০ শতাংশের মতোই হারাতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জড়িতরা জানান, বছরের শুরুতে অনেক অভিভাবক ফি পরিশোধ না করেই সন্তান ভর্তি করিয়েছেন। তাদের স্কুল থেকে বই, খাতাসহ অন্য উপকরণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় অনেকেই যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। যারা যোগাযোগ রেখেছেন, তারা শুধু সেপ্টেম্বর মাসের বেতন দিতে আগ্রহী।
Advertisement
তারা আরও জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে অনেকে শুধু মাসিক বেতনের শর্তে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের (২০২২ সাল) শুরুতে ভর্তি ফিসহ অন্য ফি নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের।
রামপুরার দিদার আদর্শ কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক এম এম শাহবুদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, চলতি বছরের শুরুতে আমাদের স্কুলে ৬০ জনের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। এদের অনেকেই ভর্তি হয় বাকিতে। এখন স্কুল খোলার খবরের পর গত কয়েক দিনে মাত্র ১০ জনের মতো ক্লাস করার জন্য যোগাযোগ করেছে। আগামীকাল যারা আসবে তাদের নিয়েই আমরা ক্লাস শুরু করবো।
শিক্ষক-কর্মচারীরা টিকা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের স্কুলে ১১ জন শিক্ষক আছেন। আমরা অনলাইনে টিকার জন্য নিবন্ধন করেছি, কিন্তু এখনো এসএমএস পাইনি। আমাদের একজন শিক্ষকের স্বামী উকিল, ওই শিক্ষক টিকা পেয়েছেন। বাকিরা এখনো টিকা পাননি।
রামপুরার আরেক কিন্ডারগার্টেন গ্রীন গার্ডেন ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের প্রিন্সিপাল সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বছরের শুরুতে আমাদের স্কুলে ২০০ জনের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল। এখন যোগাযোগ রেখেছে মাত্র ২৫-৩০ জন। এই শিক্ষার্থীদের নিয়েই আমরা আগামীকাল ক্লাস শুরু করবো। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে স্কুলের প্রবেশপথেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মাস্ক পরে আসতে বলা হয়েছে। আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মাস্ক পরা নিশ্চিত করবো।
Advertisement
টিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশে প্রথম যখন করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়, আমি সে সময়ই টিকা নিয়েছি। আমাদের যে শিক্ষকরা আছেন তারাও টিকা নিয়েছেন।
তিনি বলেন, দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের অনেক ঋণ হয়ে গেছে। আগে আমাদের স্কুলে শিক্ষক ছিলেন ১৯ জন। এদের সবাইকে রাখতে পারিনি। এখন চার-পাঁচজন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস চালিয়ে যাবো। আমাদের স্টাফ ছিল ২০ জন। এর মধ্যে এখন পাঁচজন আছেন।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই জাগো নিউজকে বলেন, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের ধারণা ১০ হাজারের মতো কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ নতুন করে চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, আমাদের কোনো সার্ভে নেই। আমাদের ধারণা, সারাদেশে কিন্ডারগার্টেনে ১০ লাখের মতো শিক্ষক আছেন। এই শিক্ষকদের ৫০ শতাংশ এখনো করোনার টিকা পাননি। শিক্ষকরা নিজ উদ্যোগে টিকা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমি নিজেও টিকা নেওয়ার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখনো টিকা পাইনি।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কিন্ডারগার্টেনগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। এজন্য সরকারের কাছে আমরা একটি প্রণোদনা চেয়েছি। আমাদের ধারণা বছরের শুরুতে যে শিক্ষার্থীরা কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হয়েছিল এখন তার ১০-১৫ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। আমার স্কুলেই ২০০ জনের মতো ভর্তি হয়েছিল। তার মধ্যে যোগাযোগ রেখেছে মাত্র ২০-২৫ জন। সব কিন্ডারগার্টেনের একই অবস্থা।
এমএএস/এমএইচআর/এএ/এএসএম