সালতামামি

বছরজুড়েই আইএস বিতর্ক

সময়ের পরিক্রমায় বিদায় নিতে চলেছে ২০১৫ সাল। তবে ২০১৫ জুড়ে প্রায় সবার মুখে মুখে ছিল এক বিতর্ক। আইএস? আছে নাকি নেই? বছরজুড়েই আইএস নিয়ে সরকারের একেক মহল থেকে একেক ধরণের বক্তব্য পাওয়া গেছে। কখনো বলা হয়েছে, দেশে আইএসের অস্তিত্ব রয়েছে। কখনো বা আইএস ‘সন্দেহ’। তাই বছর শেষ হলেও পিছু ছাড়েনি এ বিতর্ক। ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস)। সংক্ষেপে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী এ সংগঠনটি মে থেকে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে প্রথম জানিয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তবে ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাবেলার হত্যার দায় সংগঠনটি স্বীকার করলেও আইএসের কোন অস্তিত্ব দেশে নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ফলে দুপক্ষের বিপরীতমুখী বক্তব্যে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় বিভ্রান্তি। বারিধারা ডিওএইচএস এলাকা থেকে আব্দুল্লাহ আল গালিব নামে আইএসের এক সদস্যকে গ্রেফতারের কথা ৩১ মে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় ডিএমপি। গালিব ইন্টারনেটের মাধ্যমে আইএসের কর্মী সংগ্রহ, আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে বলে জানানো হয়।  পুলিশ জানায়, বাংলাদেশে আইএসের সহ-সমন্বয়ক গালিব আইএসের আদলেই নতুন সংগঠন ‘বাংলাদেশে জুনুদ আল তাওহীদ ওয়াল খিলাফাহ’ তৈরির কাজ করতো। এর সপ্তাহখানেক পরই আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফিদা মুনতাসির সাকের নামে আরেক আইএস সদস্যকে গ্রেফতারের কথা জানায় ডিএমপি।  তবে সেপ্টেম্বরে বদলে যায় পুলিশের বক্তব্য। গুলশানে ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাবেলাকে হত্যার পর এর দায় স্বীকার করে আইএস। এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে আত্মপ্রকাশের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দেয় সংগঠনটি।  তবে ঘটনার পরদিন সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই। এর আগে আইএসের নামে যাদের গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,  সন্দেহভাজনভাবে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে মে মাসে পাঠানো পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির কোথাও ‘সন্দেহ’ শব্দটি উল্লেখ ছিল না। পরবর্তীতে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামও বলেন, সন্দেহভাজনভাবে তাদের আটক করা হয়েছিল।দায় স্বীকারের বার্তাটি সত্যিই আইএসের কিনা তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।২৩ অক্টোবর পবিত্র আশুরার দিন শিয়া সম্প্রদায়ের মিলনস্থল হোসনি দালানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।এর দায়ও স্বীকার করে আইএস। তবে এবারো আইএসের অস্তিত্বের কথা অস্বীকার করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারপক্ষ। একই সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জিহাদী সংবাদ প্রচারণামূলক ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্সের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। কেননা এ সাইট থেকেই আইএসের বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। ২৮ অক্টোবরে বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে সাইট ইন্টেলিজেন্স। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকার বার বার আইএসের অস্তিত্ব নিয়ে ‘ভিত্তিহীন প্রচারণা’ চালাচ্ছে। বাংলাদেশে আইএসের তিনটি হামলার যে তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়েছিল এর প্রমাণ রয়েছে। প্রমাণ ছাড়া তারা কোন জিহাদী গ্রুপের পোস্ট আপলোড করে না। তাই ওই বার্তায় সরকারকে বাস্তবতা মেনে নিতে আহ্বান জানানো হয়। পরিস্থিতির এক পর্যায়ে এনিয়ে মুখ খুলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। বছরের শেষে দিকে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আইএস নেই। তবে আইএস আছে কথাটি স্বীকারের জন্য কয়েকটি দেশ থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর আইএসের অস্তিত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি অনেকটা কেটে গেলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখনো রয়েছে এ বিতর্ক। এআর/এএইচ/পিআর

Advertisement