ফিচার

দাড়িতেই সুন্দরী, গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড

নারীর মুখ হবে উজ্জল আর মসৃণ। আর তাই তো যেসব নারীর মুখে অতিরিক্ত লোম থাকে তারা থ্রেডিং, ওয়াক্সিংসহ লেজারের মাধ্যমে তা অপসারণ করেন। দাড়ি-গোঁফ তো পুরুষের মুখে শোভা পায়।

Advertisement

তবে কখনও কি কোনো নারীর মুখভর্তি দাড়ি দেখেছেন। তেমনই এক নারী হলেন হরনাম কৌর। মুখভর্তি দাড়ি নিয়েই সন্তুষ্ট তিনি। এই নারী গড়েছেন বিশ্ব রেকর্ড। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডের তথ্য অনুসারে, বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ দাড়িওয়ালা নারী তিনি।

হরনামের বয়স যখন ২৪ বছর ২৮২ দিন। তখন তিনি গিনেস বুকে নাম লেখান। ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তার রেকর্ড নিশ্চিত করা হয়েছিল। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী এই নারীর বর্তমান বয়স প্রায় ৩০ বছর।

বর্তমানে হরনাম একজন ফ্রিল্যান্সার মডেল ও মোটিভেশনাল স্পিকার বনে গিয়েছেন। দাড়ি নিয়েও তিনি কীভাবে স্রোতের বিপরীতে হাঁটছেন, সেসব প্রতিবন্ধকতায় সবার সামনে তুলে ধরেন।

Advertisement

হরনাম জানান, দাড়ি নিয়ে প্রতিদিনই কারও না কারও কাছ থেকে বিব্রতকর কথা শুনতে হয়। মাঝে মধ্যে আমি ব্যঙ্গাত্মক আচরণ করেই বলে ফেলি, ‘তোমার বাবার মুখে দাড়ি কেন?’

সবাই নারীর মুখ মসৃণ দেখতে চায়। তবে হরনাম তার মুখ মসৃণ রাখতে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। মুখের লোম দূর করার জন্য তিনি বিভিন্ন কাজ করেছেন তবুও উপকার হয়নি। বাধ্য হয়েই দাড়ি রাখতে হয়েছে তাকে।

হরনাম ১২ বছর বয়সে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে (পিসিওএস) আক্রান্ত হন। এ সমস্যা বিশ্বের লাখ লাখ নারীর মধ্যে আছে। সবার ক্ষেত্রেই যে পিসিওস হলে মুখে দাড়ি হবে তা নয়। একেকজনের শরীরে ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে এ রোগটি।

হরনাম বলেন, ‘দাড়ি নিয়ে মানুষের কটূ কথা অনেক শুনেছি। খুবই হাস্যকর বিষয় হলো, দাড়ি ছেলেদের মুখে থাকলে মানানসই আর নারীর মুখে থাকলে লজ্জাজনক! আমার চেহারা যেমনই হোক তা নিয়েই আমি খুশি।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘নারীর শরীরে লোম থাকার বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। তবে যাদের শরীরে অতিরিক্ত লোম থাকে, তা শত চেষ্টা করেও দূর করা যায় না। যেমনটি ঘটেছে আমার ক্ষেত্রে। এই পৃথিবীতে যেমন ফুল জন্মে ঠিক তেমনই নারীদেহেও লোম গজায়।’

      View this post on Instagram

A post shared by Harnaam Kaur (@harnaamkaur)

হরনাম তার সৌন্দর্য নিয়ে সর্বদা আত্মবিশ্বাসী। হরনাম বলেন, ‘আজ আমি যেখানে আছি, সেখানে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগেছে। এজন্য নিজেকে অনেক ভালোবাসতে হয়েছে। একসময় আমি নিজেকে পুরুষের বেশে লুকিয়ে রাখতাম। এজন্য ভাইয়ের ট্র্যাকসুট বা কাপড় পরতাম। তবে কতদিন এভাবে সম্ভব!’

দীর্ঘদিন হরনাম মানুষের কটূ কথা শোনার ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। বাইরে বের হতে ভয় পেতেন। দাড়ি তার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হরনামের জীবনের মোড় ঘুরে যায় যখন তিনি আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সিটিতে যান।

তিনি সেখানে ওয়ার্ল্ডপ্রাইড এনওয়াইসিতে হাজির হয়ে হাজার হাজার মানুষের সামনে কথা বলেছিলেন। হরনাম তার আসল সৌন্দর্য নিয়েই জীবনযাপন করতে চেয়েছেন। এ কারণে তিনি থমকে যাননি বরং সমাজের বিপক্ষে কথা বলেছেন।

হরনাম বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিন কসমোপলিটান ও গ্ল্যামারের প্রচ্ছদে জায়গাও করে নিয়েছেন। গিনেস বুকে নাম লেখানোর পর থেকে হরনামকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অপ্রতিরোধ্য হয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি নিজের লক্ষ্যে। সমাজের অন্যান্য নারীদের জন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন হরনাম কৌর।

সূত্র: গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড

জেএমএস/এমএস