১৮ দিনের কঠোর অনুশীলন বিকেএসপিতে। দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপখ্যাত ‘সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ নিতে ভারতে যাওয়ার আগে সেই কঠোর অনুশীলন কতটা প্রস্তুত করতে পেরেছে, সেটা দেখতেই নেপালকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। আমন্ত্রণ পেয়ে তারাও আসলো এবং সাফের আগে একমাত্র প্রস্তুতিমূলক ম্যাচটা খেলে ফেললো মামুনুল ইসলামরা। ১-০ গোলের ব্যবধানে কাংখিত জয়ই এসেছে বাংলাদেশের। তবে, জিততে পারলেও মামুনুলদের খেলা কি সত্যি সত্যি মন ভরাতে পেরেছে মাঠে উপস্থিত হাজার তিনেক দর্শকের! দর্শকদ তো দূরের কথা বাংলাদেশ দলের ফুটবলারদের খেলা দেখে মন ভরাতে পারেননি কোচ মারুফুল হকও। উয়েফা ‘এ’ লাইসেন্স কোচিংয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে দেশের আসার পরই পেয়েছেন জাতীয় দলের দায়িত্ব। বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে অভিষেকটা জয় দিয়ে রাঙাত পারলেও, খেলা দিয়ে নিজের মন রাঙাতে পারেননি তিনি। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কোচ মারুফুল সরাসরিই জানিয়ে দেন, ‘দল জিতেছে সত্যি। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় আমি কোনভাবেই সন্তুষ্ট হতে পারছি না। কারণ, আমি যেভাবে দলকে প্রস্তুত করেছি, সেভাবে তারা মাঠে দিতে পারেনি। প্রত্যাশার ৩০ ভাগও তারা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বেশ কিছু জায়গা সমস্যা রয়েছে। সেগুলো অনুশীলনে ঠিক করা গেলেও, মাঠে বাস্তবায়ন ঘটাতে তারা পারেনি।’ কোচ মারুফুল হক বিশ্বাস করেন, লিগে খেলতে খেলতে বাংলাদেশ দলের ফুটবলারদের মধ্যে একটা মানসিকতা গড়ে উঠেছে যে, একটি গোল দিতে পারলেই দায়িত্ব শেষ। এরপর সেই গোলটিকে বাঁচানোর জন্য যা যা করা প্রয়োজন তার সবই করবে তারা। কিন্তু একটি গোল দিতে পারলে যে, আরও একটি কিংবা দুটি দেয়ার সামর্থ্য আছে তাদের সেটা মানসিকতা থেকেই যেন হারিয়ে ফেলেছে।’ এটাকে খুব বাজে মানসিকতা চিহ্নিত করে এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে বলে জানান কোচ। প্রস্তুতি ম্যাচের তিনটি সমস্যা চিহ্নিত করেছেন কোচ। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভালো করত হলে, তিনটি সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে। প্রথমত ফিটনেস সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে, মানসিকতা পরিবর্তণ করতে হবে। এক গোল দিয়ে ফেলার পর আর না দেওয়ার যে একটা বাজে মানসিকতা, তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং অনুশীলনে যে কঠোর প্রস্তুতি নেয়া হয়, তা মাঠে এসেও যেন বাস্তবায়ন করতে পারে ফুটবলাররা।’ তাহলেই কোচ মারুফুল মনে করেন, ফুটবলাররা প্রত্যাশার ৬০ ভাগ দিতে পারবেন সাফে গিয়ে। আর ৬০ ভাগও যদি দিতে পারে ফুটবলাররা, তাহলে নিশ্চিত কাংখিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো আমরা। ২০ তারিখে সাফ খেলতে ভারতে যাবে বাংলাদেশ দল। ২৩ তারিখ থেকে শুরু হবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে ফিটনেস সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে কি না? জানতে চাইলে মারুফুল বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, এই সময়ের মধ্যে সম্ভব। আর প্রস্তুতি ম্যাচটা হওয়াতে বুঝতে পেরেছি, কোথায় কোথায় সমস্যা। সেই সমস্যাগুলো নিয়েই এই সময়ে কাজ করবো।’ ম্যাচে বিশেষ কোন কোন জায়গায় বাংলাদেশের দুর্বলতা দেখা গেছে জানতে চাইলে কোচ বলেন, ‘মিডফিল্ডেই সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখো গেছে। খেলোয়াড়রা মাঝমাঠ ধরে রাখতে পারেনি। কারণ, আমাদের নিয়মই হযে গেছে, মিডফিল্ডে জামাল ভূঁইয়াকে পেছনে রেখে সামনে দু’জন থাকবে। কিন্তু জামাল অসুস্থ হওযার কারণে তার মত অভিজ্ঞ কেউ নেই যে সেই জায়গাটা পূরণ করবে। এ জায়গাটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে অনেক বেশি।’ এছাড়া আক্রমণভাগেও কাজ করতে হবে বলে জানান তিনি। খেলা নিয়ে অসন্তুষ্ট হলেও গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রনির পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়েছেন কোচ মারুফুল। গোলদাতা শাখাওয়াত ইসলাম রনি বলেন, ‘আমরা ফুটবলাররা সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ভালো করার জন্য। বিকেএসপিতে যখন ক্যাম্পে গেলাম আমরা, তখন সবাই মিলে মিটিং করেছি এবং সেখানে আমরা আলোচনা করেছি যে, গত কয়েকটি সাফের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছি আমরা। তবে, এবার আমরা সবাই সিরিয়াস, ভালো কিছু করার জন্য। যেন অন্তত গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় না নেই। কোচ মারুফ ভাই যেভাবে যেভাবে চাচ্ছেন আমরা সেভাবে সেভাবে চেষ্টা করছি। মাঠেও যেন সেভাবে খেলতে পারি, সে লক্ষ্যে বেশ সিরিয়াস প্রত্যেকটি ফুটবলারই।’ আইএইচএস/পিআর
Advertisement