নামাজ ইসলামের প্রধান ইবাদত। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের দ্বিতীয় এটি। ঈমানের পর মানুষের প্রতি প্রথম নির্দেশনাও নামাজ। দিনের নির্ধারিত ৫ সময়ে এ নামাজ পড়া ফরজ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার সময়ও নির্ধারিত। এক নজরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় তুলে ধরা হলো-
Advertisement
১. ফজরের সময়
সুবহে সাদিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফজর নামাজের সময় শুরু হয়। আর তা পড়তে হয় সূর্য ওঠার আগে। সুবহে সাদিক হলো- শেষ রাতে পূর্ব আকাশে লম্বা আকৃতির যে আলোর রেখার আভাস দেখা যায়। তা দেখা যাওয়ার পর থেকে সূর্য ওঠার বেশ কয়েক মিনিট (২০-২২) আগে ফজরের নামাজ পড়া শেষ করতে হয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় ‘গালাস’ বা খুব ভোরের অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ে ফাজরের নামাজ আদায় করতেন। তবে তিনি জীবনে একবার মাত্র ‘ইসফার’ বা চারদিক ফর্সা হওয়ার সময়ে ফাজরের নামাজ আদায় করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ফাজরের নামাজ আলো-আধারিতে আদায় করাই ছিল তাঁর নিয়মিত অভ্যাস। এ কারণেই ফাজরের নামাজ ‘গালাস’ তথা খুব ভোরের আলো-আধারিতে আদায় করাই উত্তম।
Advertisement
তাইতো ইমাম তাহাভি, আবু হানিফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ফাজরের নামাজ অন্ধকারে তথা আলো-আধারিতে শুরু করা এবং একটু ফর্সা হলেই শেষ করা উচিত।’ (শারহু মাআনিল আসার)
২. জোহরের সময়
দুপুরের সূর্য মাথার ওপর থেকে পশ্চিম আকাশে একটু হেলে পড়লেই জোহরের নামাজের সময় শুরু হয়। তবে জোহরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার ব্যাপারে একাধিক মত পাওয়া যায়। তাহলো-
> সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়লে কোনো বস্তুর নিজস্ব ছায়ার একগুণ হলেই ওয়াক্ত শেষ হয়।
Advertisement
> আবার ছায়ায়ে আসলি বা দ্বিপ্রহরের ছায়া ছাড়া প্রত্যেক জিনেসের ছায়া তার দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জোহরের নামাজ পড়ার সময় বাকি থাকে।
তবে গরমের সময় জোহরের নামাজ দেরিতে এবং শীতের সময় প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা মোস্তাহাব।
ছায়ায়ে আসলি : ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় সমতল ভূমিতে কোনো বস্তুর যে ছায়া থাকে, তাকেই ‘ছায়ায়ে আসলি’ বলা হয়।
>> জুমআ : শুক্রবার জোহরের ওয়াক্তে জুমআর নামাজ আদায় করতে হয়। জুমআর নামাজের জন্য আলাদা কোনো সময় নেই বরং জোহরের নির্ধারিত সময়েই জামাআতের সঙ্গে জুমআ আদায় করতে হয়। জুমআর নামাজ জামাআত ছাড়া আদায় করা যায় না।
৩. আসরের সময়
জোহরের সময় শেষ হলেই আসরের সময় শুরু হয়। কোনো বস্তুর ছায়া সমপরিমাণ/দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার পর থেকে আসরের নামাজের সময় শুরু হয়। আর তা সূর্য ডোবার বা অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত আসরের নামাজের সময় থাকে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সূর্য যখন হলুদ রং হয় এবং শয়তানের দু’শিংয়ের মাঝখানে এসে যায়; তখন মুনাফিকরা নামাজ পড়ে।’
সুতরাং সূর্যের আভা একটু হলদে রং হয়ে আসার আগেই আসর নামাজ আদায় করা উচিত।
৪. মাগরিবের সময়
সূর্য ডোবার পরই মাগরিবের নামাজের সময় শুরু হয় এবং পশ্চিম আকাশে সূর্যের লালিমা শেষ হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের নামাজ পড়া যায়। তাই সূর্যাস্তের পর দেরি না করে মাগরিবের নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব।
৫. ইশার সময়
মাগরিবের সময় শেষ হলেই ইশার সময় শুরু হয়। পশ্চিম আকাশের লাল আভা দূর হওয়ার পর আকাশ প্রান্তে যে সাদা আভা চোখে পড়ে তা বিলুপ্ত হওয়ার পরই মূলত ইশার নামাজের সময় শুরু হয়। ইশার সময় শুরু হওয়ার সঙ্গে সবাই একমত হলেও শেষ হওয়া সম্পর্কেও একাধিক মত পাওয়া যায়। তাহলো-
> ইশার সময় শুরু হওয়ার পর থেকে অর্ধেক রাতে ইশার সময় শেষ হয়। তবে যদি কেউ জরুরি কোনো কারণে এ সময়ে ইশা আদায় করতে না পারে তবে ফজরের আগে যে কোনো সময়েই ইশার নামাজ আদায় করা বৈধ।
> ইশার সময় শুরু হওয়ার পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত আদায় করা যায়। তবে ইশার নামাজ বিলম্ব করে রাতের তৃতীয়াংশ হওয়ার আগে আদায় করা মোস্তাহাব। আর তাহাজ্জুদ নামাজে অভ্যস্ত ব্যক্তির জন্য বিতর নামাজ দেরি করে শেষ রাতে আদায় করাও মোস্তাহাব। যদি শেষ রাতে জাগ্রত হওয়ার ব্যাপার নিশ্চিত না হয় তবে ঘুমানোর আগে বিতর নামাজ আদায় করা উত্তম।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
উপরে উল্লেখিত নামাজের সময়গুলোর সপক্ষে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস থেকে প্রমাণিত। এক হাদিসে উভয় সময়গুলো ওঠে এসেছে-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জিবরিল আলাইহিস সালাম কাবা শরিফের চত্বরে দুইবার আমার নামাজে ইমামতি করেছেন। তিনি প্রথমবার জোহরের নামায আদায় করালেন যখন প্রতিটি জিনিসের ছায়া জুতার ফিতার মত ছিল। এরপর তিনি আসরের নামায আদায় করালেন যখন কোনো বস্তুর ছায়া তার সমান ছিল। এরপর মাগরিবের নামাজ আদায় করালেন যখন সূর্য ডুবে গেল এবং যে সময়ে রোজাদার ইফতার করে।এরপর ইশার নামাজ আদায় করালেন যখন লাল বর্ণ অদৃশ্য হয়ে গেল। এরপর ফজরের নামাজ আদায় করালেন যখন ভোর বিদ্যুতের মত আলোকিত হল এবং যে সময় রোজাদারের উপর পানাহার হারাম হয়।
তিনি (জিবরিল) দ্বিতীয় এবং আগের দিন ঠিক যে সময় আসরের নামাজ আদায় করেছিলেন।
এরপর আসরের নামাজ আদায় করালেন যখন কোন বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হল। এরপর মাগরিবের নামায আদায় করালেন আগের দিনের সময়ে। এরপর ইশার নামাজ আদায় করালেন যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ চলে গেল। আর ফজরের নামায আদায় করালেন যখন জমিন আলোকিত হয়ে গেল। এরপর জিবরিল আলাইহিস সালাম আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- হে মুহাম্মাদ! এটাই হল আপনার আগের নবিদের (নামাজের) সময়। নামাজের সময় এই দুই সীমার মাঝখানে।’ (মিশকাত, আবু দাউদ, তিরমিজি)
নামাজের নিষিদ্ধ সময়
সূর্যোদয়ের সময়, ঠিক দুপুরে; যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিম আকাশে একটু ঢলে পড়ে। সূর্যাস্তের সময়। নিষিদ্ধ সময় সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
হজতে উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নির্ধারিত তিন সময়ে নামাজ আদায় করতে এবং আমাদের মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করেছেন। (তাহলো)-
১. সূর্যোদয়ের সময়; যতক্ষণ না সূর্য উপরে উঠবে ( এ সময়টি ২০-২২মিনিট);
২. দ্বিপ্রহরে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার সময় যতক্ষণ না ঢলে পড়ে এবং
৩. সূর্য অস্ত যাওয়ার সময়; যতক্ষণ না অস্ত যাবে (এ সময়টি প্রায় ২০-২২মিনিট)।
তবে নামাজের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ আদায়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া খুবই জরুরি। নামাজের ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাধারণত জামাআতে নামাজ আদায় করা হয়। নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করার মানেই হচ্ছে জামাআতে নামাজ আদায় করা। নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করা হয়েছে-
اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا
‘নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে (আদায় করা) ফরজ।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১০৩)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নির্ধারিত সময়ে দেরি না করে ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা। নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের নির্ধারিত সময়ে ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম