কনফুসিয়াস বলে গিয়েছিলেন, ‘সব কিছুতেই আছে সৌন্দর্য, কিন্তু সবাই তা দেখে না।’ তাই তো এ উন্নত যুগে যখন মানুষের চিন্তাধারা এগিয়ে গেছে বহুদূর; তখন আমরা সৌন্দর্যের সঠিক সংজ্ঞা দাঁড় করাতে গিয়ে মনের অজান্তেই একটি বাধাধরা নিয়মে ফেলে ব্যারিকেড দিয়েছি ভাবনায়।
Advertisement
কিন্তু সব যুগে কনফুসিয়াস না থাকলেও সুন্দর মনের কিছু মানুষ থাকেন। যারা কি না সৃষ্টিকর্তার সব সৃষ্টিতেই সুন্দরের সন্ধান পান। এ যুগের তেমনই একজন হলেন জায়না হাবিব। আজ জানবো তার সৌন্দর্য সন্ধানের গল্প-
সৌন্দর্যের আসলে কোনো সংজ্ঞাই হয় না। কেননা সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। তার কাজের নৈপুণ্য মাপার ক্ষমতা আমাদের নেই। তারপরও বিভিন্ন ভাবে সুন্দরকে আমরা মোটা দাগে ভাগ করে দিয়েছি। যাদের দৃষ্টিগ্রাহ্য কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, তাদের বলি সুন্দর।
নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে এসব বৈশিষ্ট্য ভাগ করলেও আমাদের সমাজেরই আরেকটি অংশ, যারা তৃতীয় লিঙ্গের; তাদের সুন্দর-অসুন্দর বিচারের আগেই আমাদের থেকে আলাদা করে দিয়েছি। তাদের ক্ষেত্রে সুন্দরের কোনো দাগ নেই। আছে শুধু তাদের জন্য তাচ্ছিল্য, ঘৃণা। কিন্তু তারাও আমাদের মতো সুন্দর। এটাই ভেবেছিলেন জায়না।
Advertisement
লেখাপড়া শেষ করার পরই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে কিছু করার পরিকল্পনা ছিল তার। তার সঙ্গে যুক্ত হয় আরও অনেক মানুষ। যারা তারই মতো ভাবেন, সবাই সুন্দর। তাদের চোখ দিয়ে সমাজ থেকে অবহেলিত এ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের যে সৌন্দর্য, তারা দেখেছিলেন। তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন পৃথিবীর মাঝে। তা থেকেই ফ্লেক্সবিজের উৎপত্তি হয়।
তৃতীয় লিঙ্গের এ মানুষদের সৌন্দর্যকে তুলে ধরার জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন বিয়ের মঞ্চ। তাদের বধূবেশে সাজিয়ে পৃথিবীর কাছে জায়না বলতে চেয়েছিলেন, ট্রান্স নারীরাও কোনো অংশে বাকিদের চেয়ে কম নয়।
২০২০ সালের এপ্রিল মাসে তাই ঢাকা গ্লোবাল সংলগ্ন স্থানে জায়না হাবিবের হাত ধরে পথচলা শুরু হয় অনলাইন প্লাটফর্ম ফ্লেক্সবিজের। অনলাইন কার্যক্রমের পাশাপাশি আউটডোর শ্যুটিংয়েরও প্ল্যান করেন তারা। মার্কেটিং ও প্রোডাকশন-এ দুটো ব্র্যান্ড হিসেবেই কাজ করে যাচ্ছে ফ্লেক্সবিজ।
বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ফটোশ্যুট, জেন্ডার ডাইভার্সি ব্রাইডাল ইভেন্ট ইত্যাদি আয়োজনের মাধ্যমে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কিংবা যে কোনো বর্ণ, লিঙ্গের, জাতিসত্তার মানুষের সৌন্দর্য সবার সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে কাজ করে যাচ্ছে ফ্লেক্সবিজ।
Advertisement
জায়না হাবিবের মতে, ‘একজন ট্রান্স নারী কিংবা একজন প্লাস সাইজের মেয়েও অতি সুন্দর। ফ্লেক্সবিজে একটি সম্প্রদায় হিসেবে তিনি আনন্দিত।’
মাত্র এক বছরে তার এ ভিন্নধর্মী উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্তিমূলক বিপণন স্বীকৃতি পেয়েছেন। জায়না হাবিবের ফ্লেক্সবিজের মাধ্যমে সমাজের বাধাধরা সৌন্দর্যের নিয়ম ভেঙে সুন্দরের এক অনন্য মান সবার কাছে পৌঁছে যাবে। তথাকথিত সুন্দরের বেড়াজাল ভেঙে মুক্ত চিন্তায় সবাইকে সুন্দর ভাবার মনোভাব তৈরি হবে।
এসইউ/এএসএম