ছোট দুই ভাইকে নিয়ে সাদী মোহাম্মদ তামিম ২০১৬ সালে শুরু করেন সামাজিক সংগঠন ‘সিংড়া স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’। তাদের সঙ্গে ছিলেন নাটরের সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মো: খাইরুল আলম।
Advertisement
মাত্র ১৫০০ টাকা দিয়ে তারা সংগঠনের কাজ শুরু করেন। শিক্ষক খাইরুল ইসলামের ১০০০ টাকা ও তামিমসহ বাকি দু’জন দেন ৫০০ টাকা। মোট ১৫০০ টাকা দিয়ে এক শিক্ষার্থীর বই কিনে দেওয়ার মাধ্যমে তারা শুরু করেন সংগঠনের কাজ।
পরে এ সংগঠনের মানবিক কাজ দেখে অনেকেই যুক্ত হোন সংগঠনের সঙ্গে। বর্তমানে সংগঠনের মোট সদস্য সংখ্যা ১০০ জন। শুরুতে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াকে নিয়ে কাজ করলেও বর্তমানে নানা ধরনের কার্যক্রম করে থাকে সংগঠনটি।
২০১৭ সালে নাটরের সিংড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে পায়ে হেঁটে পৌঁছায় সংগঠনের সদস্যরা। মাদক ও ভেজাল খাদ্যের কুফল সম্পর্কে আলোচনা, প্রচার-প্রচারণা চালানোর মধ্যে দিয়ে সবার নজরে আসে সংগঠনটি।
Advertisement
এছাড়াও সংগঠনটি মুমুর্ষ ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে রক্তদান করে থাকে। এমনকি রক্তদাতার যাতাযায়াত খরচ পর্যন্ত দেওয়া হয় সংগঠন থেকে।
সংগঠন সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে প্রতিবছর ঈদের আগে সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের নতুন জামা কাপড় কিনে দেওয়া হয়। যা এখনও চলমান। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে ঘুরে গরিব ও অসহায় ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করে সংগঠনটি।
এর পাশাপাশি মেধাবী গরিব শিক্ষার্থীদের সংগঠনের মাধ্যমে প্রাইভেট পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। এরকম শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে ৪০ জন। যাদেরকে নিয়মিত শিক্ষা সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি প্রাইভেট পড়ানোর ব্যবস্থা করানো হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম সহায়তা করা হয়।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সাদী মোহাম্মাদ তামিম বলেন, ‘কলেজে পড়ার সময় বুঝতে পারলাম আশেপাশের অনেক বন্ধুই অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করছেন। বই কেনার টাকা নেই বলে অনেকেই অন্যের ধার করা বই পড়েন।’
Advertisement
‘আবার অনেকেই কলেজে ভর্তির ফি কমানোর জন্য শিক্ষকদের পেছনে ঘোরাঘুরি করেন। আবার ভর্তির জন্য অনেকেই সঠিক দিক নির্দেশনাটুকুও পায়না। কেউ কেউ টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়তে পারেন না। এসব দেখে মনে হলো, আমরা যারা একটু মধ্যবিত্ত তারা যদি এক হয়ে ওই বন্ধুদের জন্য কিছু করতে পারি তাহলে হয়তো সমাজের উন্নয়ন ঘটবে।’
তামিম আরও বলেন, ‘একদিন এক ভিক্ষুককে দেখি আরেকজন ভিক্ষুককে ভিক্ষা দিচ্ছেন। সেটি দেখেই সিংড়া স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার আ্যসোসিয়েশনের যাত্রা শুরু করি। সংগঠনের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের নানারকম সহায়তাসহ সামাজিক কার্যক্রম করে থাকি। আমরা সামাজিক কাজের মাধ্যমে ভলেন্টিয়ার সামিট ২০২১ এ সেরা ৭ এ আসতে সক্ষম হই’।
করোনাকালীন সময়ে কর্মহীনদের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন সংগঠনটি। এছাড়াও গরিব ও রিকশাচালকদের মাঝে ১০ হাজার মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন। শোকাবহ আগষ্টের ১৫ তারিখ ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে সংগঠন থেকে একটা ভ্রাম্যমান লাইব্রেরিও প্রতিষ্ঠা করা হয়।
পাঠকরা সেখান থেকে বিনামূল্যে বই পরতে পারবে। সংগঠনের সদস্যরা পাঠকদের ঘরে ঘরে বই পৌঁছে দেন। তারা জানান, ‘স্কুল-কলেজ খুললে সংগঠন থেকে একটি ব্যাটারিচালিত অটোর মাধ্যমে লাইব্রেরিটি পরিচালনা করা হবে।’
সিংড়া উপজেলাটি নদী, বিল ও বন্যাকবলিত হওয়ায় ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চিন্তিত থাকেন অভিভাবকেরা। তবে সংগঠনটি শিশুদেরকে বাঁচাতে এই বিনামূল্যে সাঁতারও শেখায়।
জেএমএস/এএসএম