ইসতিয়াক আহমেদ
Advertisement
বাংলাদেশের একমাত্র গরম পানির কূপ। যেখানে কি না পানিতেও আগুন জ্বলে। এমনকি সেখানে দুধ পড়লেই হয়ে যায় দই। আছে শত শত বছরের পুরোনো সব মন্দির। এছাড়াও আছে ঝিরি পথ, পাহাড় ও ঝরনা। বলছিলাম বাড়বকুণ্ড ট্রেইল এর কথা।
এইতো কিছু দিন আগেই ঘুরে এসেছিলাম বাড়বকুণ্ড ট্রেইল থেকে। যদিও ভাগ্য জোরে বেঁচে ফিরেছিলাম হরকাবানের হাত থেকে। আজ বলবো সেই গল্প। দীর্ঘ লকডাউনের পর কোথায় যাব? এই ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ বেড়িয়ে পড়লাম বাড়বকুণ্ডের পথে। বাড়বকুণ্ড বাজার পেরিয়ে ৫ মিনিট হাঁটলেই পীচঢালা রাস্তার শেষ, পাহাড়ি পথের শুরু!
পাহাড়ি বনের বুক চিরে চলে গেছে মৃদু কর্দমাক্ত পথ। পথ ধরে হাঁটা শুরু করলেই আশপাশের পাহাড়গুলো ক্রমশ উঁচু হতে থাকে। বন যেন ঘন হয়ে ওঠে আর নীরবতা ক্ষণে ক্ষণে বাড়তে থাকে। কোনে আসতে থাকে করাত দিয়ে শুকনো গাছ কাটার শব্দের মতো ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ও অচেনা পাখির অদ্ভুত সুন্দর ডাক। এছাড়াও পদতলে পৃষ্ট হতে থাকা শুকনো পাতার দুমড়ে-মুচড়ে ওঠার শব্দও আপনাকে শিহরিত করবে।
Advertisement
পথের মাঝে ফুটে থাকা শত শত ঝুমকো জবাসহ অসংখ্যা নাম না জানা পাহাড়ি ফুলে দেখা তো পাবেনই। গহীন পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা এ পথ শেষ হয়েই হঠাৎ দেখা মেলে বর্ষায় প্রাণবন্ত, অস্থির বেগে ছুটে চলা এক ঝিরিপথের। এই ঝিরিপথের আশেপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়, বর্ষায় এ ঝিরিপথ পূর্ণযৌবনা হয়ে পাহাড়ের বুকে এক ঝড় তুলে বয়ে চলে!
ঝিরি ছেড়ে কিছু দূর হাঁটলেই দেখা মেলে বৃত্তাকার এক পাহাড়ের। নাম তার কাড়াখাম্বা পাহাড়। ঝিরিপথ বাঁক নিয়ে আরেকটু সামনে গেলেই দেখা মেলে মাঝারি উঁচু এক পাহাড়ি পথের। কে যেন সিঁড়ি তৈরি করে উপরে ওঠার রাস্তা করে দিয়েছেন!
সেই সিঁড়ি পথ ধরে উপরে উঠতেই দেখা মিলে এক অদ্ভুত স্থাপনার। কয়েকশ বছরের পুরোনো কয়েকটি মন্দির। বহু বছরের ইতিহাস বয়ে বেড়ানো জীর্ণশীর্ণ মন্দিরের দেওয়াল, ইট-সুড়কি দেখে ধারণা করা যায়, মোটামুটি ৩০০-৪০০ বছর আগের স্থাপনা এটি।
এর নির্মাণশৈলী কিছুটা মুঘলদের মতো। গহীন এ পাহাড়ের ভেতর এমন পুরোনো মন্দিরগুলো যেন এক অদ্ভুত রূপ আর ভয়ংকর পরিবেশের জন্ম দিয়েছে। একেই যেন বলে ভয়ংকর সুন্দর। এখানে আছে অগ্নিকুণ্ড, রাধাকৃষ্ণ, কালভৈরবসহ আরও অনেক মন্দির। জনমানবহীন পাহাড়ঘেরা এই স্থানই হয়তো গা ছমছমে পরিবেশের প্রকৃত উদাহরণ।
Advertisement
দ্বিতল অগ্নিকুণ্ড মন্দিরের সিঁড়ি ধরে নামলে মাটির নিচে দেখা মেলে জলের উপুর জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকা আগুনের। এখানে কূপ একটাই। তবে দু’পাশে দু’রকম পানি। একপাশের পানিতে ক্রমাগত বুঁদবুঁদ উঠছে আর বেশ ঠান্ডা। অন্যপাশের পানি নিয়েই যত চাঞ্চল্য, দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। গরমের কারণে কাছে দাঁড়ানো মুশকিল।
তবে সেই পানি হাতে নিলে আগুনের তাপ লাগে না। বিষয়টা যেমন অবাক করার মতো, তেমনই বেশ রোমাঞ্চকর। সনাতম ধর্মাবলম্বীদের কাছে বাড়বকুণ্ড তীর্থ থামের এই অগ্নিকুণ্ড খুবই পবিত্র স্থান। তাদের মতে, এই পানিতে গোসল করলে গঙ্গাস্নানের সম্ভবনা অলৌকিকভাবে বেড়ে যায়।
তবে প্রচলিত মিথগুলো শুনলে চমকে ওঠেন বেশিরভাগ মানুষই। বাড়বকুণ্ড ট্রেইলে কয়েকশ’ বছরের পুরোনো কালভৈরবী মন্দিরের ঠিক পাশেই এই অগ্নিকুণ্ডের অবস্থান। অনেকের মতে, হাজার বছরেরও পুরোনো এটি। তবে এই কূপের পানিতে আগুন জ্বলার কারণ খুঁজতে গিয়ে অনেক রকমের উত্তর মেলে।
অনেকের মতে, এটি অভিশপ্ত একটি কূপ, কেউ কেউ বলেন এটি প্রাকৃতিক কারণ। তবে বৈজ্ঞানিক তথ্য মতে, মিথেন গ্যাসের কারণে সব সময় এখানে আগুন জ্বলে! সব সময় আগুন জ্বলার ফলে জায়গাটা পুরা আগুনের তাপে গরম হয়ে থাকে। এই স্থানটি নিয়ে আছে রহস্যময় কাহিনী। একইসঙ্গে বাড়বকুণ্ড ট্রেইলে কীভাবে যাবেন সে সম্পর্কে জানতে পরের পর্বে চোখ রাখুন।
জেএমএস/এমএস