মুন্সিগঞ্জে শুরু হয়েছে জমি থেকে উত্তোলনের পর পাট বাজারজাতকরণ। জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার শত বছরের প্রাচীন দীঘিরপাড় পাট বিক্রির হাট জমে উঠেছে সোনালী আশের বেঁচা-কেনায়। জেলার ৬ উপজেলার বিস্তৃণ জমিতে উৎপাদিত ও আশপাশের জেলার পাট বাজারজাত করেছে এ হাটে।
Advertisement
বাজারে ভালো দাম থাকায় উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। মণপ্রতি পাটে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হচ্ছে কৃষকদের। এমন দাম থাকলে আগামীতে পাটের আবাদ বাড়বে বলে জানিয়েছে কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা শাখা নদীর তীরে জেলার ২শ বছরের বেশি প্রাচীন টঙ্গীবাড়ী দীঘিরপাড় পাটের হাট ছেয়ে গেছে বিক্রি উপযোগী সোনালী আশে। কৃষক-পাইকার-ক্রেতাদের হাঁক-ডাকে জমে উঠেছে বেঁচা-কেনা। প্রতি সোম আর শুক্রবার বসছে হাট। বর্তমানে প্রতি হাটে দেড় হাজার থেকে ২ হাজার মণ পাট বিক্রি হচ্ছে।
ট্রলার নৌকায় করে চাঁদপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুরসহ কয়েকটি জেলায় উৎপাদিত পাটের কেনা বেঁচা হয় এই হাটে। হাটবারে ভোর থেকে শুরু হয় বেঁচা-কেনা। গত কয়েক বছর ধরে পাটের ধর কম থাকলেও এবার বেড়েছে চাহিদা ও দাম। মণপ্রতি কৃষকদের ২ হাজার ২২শ টাকা খরচ হওয়া পাট বিক্রি হচ্ছে ৩২শ থেকে ৩৫শ টাকা। এতে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে মণপ্রতি ১২শ থেকে ১৫ টাকা লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। বেশি দামে পাট বিক্রি করতে পারায় খুশি কৃষকরা।
Advertisement
হাটের কৃষক-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর ২ হাজার থেকে ২২ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে পাট। এবার প্রতি মণে তলনামূলক বেড়েছে হাজারের বেশি টাকা।
জুলহাস দেওয়ান নামের আরেক কৃষক বলেন, ৮০ শতাংশ জমিতে ক্ষেত করছি, আমার ৬ হাজার টাকার মতো খরচ হইছে। ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করছি।
হিরণ বেপারী নামের আরেক কৃষক বলেন, এ বছর এক একর জমিতে পাট লাইগাছি, আমার ১৫-১৬ হাজার টাকার মতো খরচ হইছে। ৪০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করছি। আরো কিছু পাট আছে।
ইদ্রিস আলী নামের এক কৃষক জানান, বর্তমানের মতো বাজার দাম থাকলে আগামীতে পাট চাষে আমাদের আগ্রহ বাড়বে। পাটের হারানো দিনের ঐতিহ্য ফিরে আসবে বলে মনে করেন কৃষকরা। এজন্য সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ দরকার।
Advertisement
লুৎফর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী জানান, দিঘীরপাড়ের হাট খুব ঐতিহ্যবাহী হাট। ব্রিটিশ আমল থেকে এ হাট চলছে। প্রতি হাটে কয়েক হাজার মণ পাট বেঁচাকেনা হয়। ট্রলারের মধ্যেই বেঁচাকেনা হয়। দূরদূরান্ত থেকে পাইকাররা আসছে। এইবার পাটে কৃষকও খুশি, ব্যবসায়ীরাও খুশি।
এদিকে জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বছর মুন্সিগঞ্জে জেলায় ২৮শ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে পাট। গত বছরের তুলনায় এবার ৪শ হেক্টর জমিতে আবাদ কম হলেও পাটের উৎপাদন ভালো হওয়া লক্ষ্যমাত্রার ছাড়াবে। আর দিঘীরপার হাটে এ বছর দিঘীরপার হাটে আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ হাজার মণ পাটের কেনা-বেচা হতে পারে। দিঘীরপাড় হাট থেকে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলার কারখানায় সরবরাহ করা হয় পাটের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খুরশীদ আলম জাগো, জেলায় এ বছর ৪শ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ কম হলেও উৎপাদন ভালো হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে আশা করছি। আর বাজার দাম ভালো থাকায় কৃষকরা খুশি। আর পাটের বাজার সম্প্রসারণে সরকার থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাটে ও চটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এতে পাটের ব্যবহার বাড়বে, ব্যবহার বাড়লে বাজারমূল্যও বাড়বে। বাজারমূল্য বাড়লে কৃষকরা লাভবান হবে।
আরাফাত রায়হান সাকিব/এমআরএম/জিকেএস