মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ৯ মাস ধরে সমাজচ্যুত তিন পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
একই সঙ্গে পরিবারগুলোকে নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।
রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) শুনানি শেষে এই আদেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল বেঞ্চ।
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
Advertisement
এর আগে ২ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পক্ষে এ রিট করেন ব্যারিস্টার সুমন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে কুলাউড়ার সমাজচ্যুত তিন পরিবারকে বাঁচাতে সমাজপতিদের প্রতিরোধ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
একটি অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সমাজপতিদের কড়া নির্দেশনা পরিবারগুলোর বাড়ি যাওয়া যাবে না। বসা যাবে না তাদের সঙ্গে। তাদের দোকান থেকে কেনাকাটাও করা যাবে না। যে কেনাকাটা করবে সেই হবে সমাজচ্যুত। সমাজপতিদের এমন সিদ্ধান্তে কুলাউড়া উপজেলার কোরবানপুর গ্রামের তিনটি পরিবার ৯ মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সমাজচ্যুত হওয়া তিন ভাই কাজল আহমদ, আকমল হোসেন ও শফিকুল ইসলামের পরিবার এখন দিশেহারা। ভূমি সংক্রান্ত বিরোধে মৌলভীবাজার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করায় সালিশকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সমাজচ্যুত করেন।
কাজল আহমদ বলেন, সমাজচ্যুত করার কারণে গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে চরম দুর্ব্যবহার, স্থানীয় মসজিদে নামাজ আদায়সহ বিভিন্ন কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লোকজন না আসা এমনকি গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া না। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা করা যাচ্ছে না।
Advertisement
তিনি বলেন, এ বিষয়ে মৌলিক অধিকার হরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বিবাদী পাখি মিয়া, পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়া, সদস্য চেরাগ মিয়া, চুনু মিয়া, হান্নান মিয়া, কাদির মিয়ার নাম উল্লেখ করে সমাজচ্যুত করার কারণ জানতে চেয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করি। ওই নোটিশের কোনো সন্তোষজনক প্রতিকার তারা দেয়নি। তাদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোয় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পাঁচ বছরের জন্য চূড়ান্তভাবে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়া প্রভাবশালী লোক। তার বিরুদ্ধে এলাকায় কেউ কথা বলতে চায় না। তার বিরুদ্ধে কেউ গেলে তাদেরকেও সমাজচ্যুত করা হয়। সালিশে আমাদের জমাকৃত টাকা ও জায়গার কাগজপত্রও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
কাজল আহমদ বলেন, বর্তমানে আমার সন্তানরা মক্তবে গিয়ে কুরআন শিক্ষাও করতে পারছে না। তাদেরকে সমাজের অন্যরা হেয় করে কথা বলে। সন্তানরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের সমাজচ্যুত করার পর থেকে প্রশাসন, থানা পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিসহ সবার কাছে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীরা জানান, সালিশকারীরা এলাকার লোকদের তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে না যাওয়ার জন্য কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গেলে তাদেরও পরিণতি তার মতো হবে। সমাজচ্যুত করার পর মসজিদের ইমামের বেতন ও মক্তবের জন্য সাপ্তাহিক যে চাঁদা নেওয়া হতো তাও নিতে নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি সমাজচ্যুত হওয়া পরিবারের কেউ মারা গেলে বা অসুস্থ হলে বাড়িতে না যাওয়ার জন্য পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়। এসব নিয়ে যে কথা বলবে তাকে সমাজচ্যুত করা হয়।
এ বিষয়ে গ্রাম্য পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নজরুল মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামে এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মসজিদে নামাজ পড়তে বাধা দেওয়ার কোনো অধিকার আমাদের নেই। তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনও তদন্ত করছে।
কুলাউড়ার ভূকশীমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির বলেন, এই পঞ্চায়েত কমিটির মধ্যে সমস্যা আছে। তারা একেক সময় একেক পরিবারকে সমাজচ্যুত করে।
এফএইচ/জেডএইচ/জিকেএস