সমুদ্র পাড়ে সবুজ গালিচা বিছানো এক বিস্ময়কর স্থান গুলিয়াখালী সি বিচ। চারপাশে বিস্তৃত জলরাশি। অন্যদিকে কেওড়া বন। কেওড়া বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট খালের চারদিকে কেওড়া গাছের শ্বাসমূল বেড়িয়ে আছে।
Advertisement
এই কেওড়া বন সমুদ্রের অনেকটা গভীর পর্যন্ত চলে গেছে। এর পরিবেশ সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মতো। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, সৈকত জুড়ে সবুজ গালিচা বিছানো। সমুদ্র পাড়ের এই মনোরোম সৌন্দর্য বোধ হয় অন্য কোথায় দেখতে পাবেন না!
এ কারণেই গুলিয়াখালী সি বিচে হাজারও পর্যটক গিয়ে ভিড় জমায়। সবুজ গালিচা বিছানো ছোট ছোট গাছের টিলার মাঝখান দিয়ে এঁকে-বেঁকে গেছে সরু নালা। এই নালাগুলো জোয়ারের সময় পানিতে ভরে উঠে।
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রকৃতি ও গঠনগত দিক থেকে এটি অন্যান্য সমুদ্র সৈকত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এর একদিকে দিগন্ত জোড়া জলরাশি ও অন্যদিকে কেওড়া বন।
Advertisement
একদিনেই ঘুরে আসা যায় গুলিয়াখালী থেকে। সীতাকুণ্ডের এই জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানটি অতীতে এতোটা জমজমাট ছিল না। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কিছু ছাত্র ঘুরতে গিয়ে গুলিয়াখালী সি বিচের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন। তারপর থেকেই পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায় স্থানটিতে।
যা যা দেখবেন
মূল সড়ক থেকে বেড়িবাঁধ নেমে কিছুদূর মাটির রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে হবে সমুদ্র পাড়ের দিকে। কিছুদূর এগিয়ে গেলেই হাতের ডানদিকে কয়েকটি ছোটো টং দোকান ও হোটেলের দেখা পাবেন। এই স্থানে কিন্তু ভালো কোনো খাবার পাবেন না। তাই সেখানে যাওয়ার আগেই সীতাকুণ্ড শহরের কোনো হোটেল থেকে খেয়ে নিন।
সামনে আরও কিছুক্ষণ এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে বিস্তৃত জলরাশি আর কেওড়া বন। দেখবেন আপনার সামনে অনেকগুলো নৌকা দাঁড়িয়ে আছে। ইঞ্জিনচালিত এই নৌকাগুলোতে করেই সোয়াম্প ফরেস্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। যেখানে ছোট ছোট সবুজ ঘাসে মোড়ানো টিলাগুলো দেখতে পারবেন।
Advertisement
শীতকালে অবশ্য সমুদ্র পাড়ের খালগুলোতে পানি কম থাকে। ওই সময় হেঁটেই পৌঁছানো যায় সেখানে। তবে বর্ষার এ সময় সমুদ্র থাকে উত্তাল। এ কারণে খালের পানিও বেড়ে যায়। নৌকায় চড়ে কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়াতে পারবেন সমুদের কিনারা ধরে।
এরপর নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে নেমে পড়ুন ঘাষের টিলার উপর। উপভোগ করুন গুলিয়াখালী সি বিচের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। অনেকেই সৈকতে গোসল সেরে নেন। তবে সাঁতার না জানলে পানিতে না নামাই ভালো।
নিরিবিলি হলেও বিচের অদূরেই দেখা মিলবে ছোট ছোট জাহাজ। এগুলো সাধারণত মাছ ধরার কাজেই ব্যবহৃত হয়। আবার এতে করে চট্টগ্রামের সন্দীপ উপজেলায়ও যাওয়া যায়। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় নদীমোহনায় অবস্থিত এই সৈকত। স্থানীয়দের কাছে গুলিয়াখালী সৈকতটি মুরাদপুর সি বিচ নামে পরিচিত।
যদিও গুলিয়াখালী সৈকতটি এখনো সরকারিভাবে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেনি। তবে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটে সেখানে। যা স্থানীয় মানুষদের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। এর আগে সৈকতে নৌকা ভাড়া বা গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো সুব্যবস্থা ছিল না। বর্তমানে কর্তৃপক্ষ তা বেঁধে দিয়েছেন। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ না থাকায় রাতে সৈকতটি নিরাপদ নয়।
কীভাবে যাবেন?
দেশের যে কোনো স্থান থেকে প্রথমে সীতাকুণ্ড শহরে যেতে হবে। ঢাকামুখী রাস্তার বাঁ পাশ দিয়ে একটু হেঁটে নিচে নামলেই সিএনজি পাবেন। জনপ্রতি ৩০ টাকা ভাড়া নেবে। আর রিজার্ভ যেতে চাইলে ১০০-১৫০ টাকা।
বেড়িবাঁধ এসে সিএনজি আপনাকে নামিয়ে দেবে। সেখান থেকে হেঁটে গিয়ে নৌকা বাঁধা স্থানে যেতে হবে। সাগরের বুকে ঘুরতে চাইলে জেলেদের নৌকায় ভাসতে পারেন। সুলভ মূল্যেই ঘুরতে পারবেন। আবার চাইলে হেঁটেও সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন। সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট লাগবে।
জেএমএস/এএসএম