ধর্ম

ধর্মীয় আলোচকদের জন্য হজরত আয়েশার (রা.) উপদেশ

ওয়াজ-মাহফিল কিংবা ধর্মীয় আলোচনা বছরজুড়েই চলতে থাকে। কিন্তু শীতের সময়টি ওয়াজ-মাহফিলের মৌসুম হিসেবে পরিচিত। এ সময় লাগাতার পাড়া-মহল্লা, গ্রাম-গঞ্জে ধর্মীয় আলোচনা সভা চলতে থাকে। এসব ওয়াজ-মাহফিলে আলোচকদের জন্য বিশেষ কিছু শর্ত ও উপদেশ দিয়েছেন উম্মাহাতুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা। কী সেই শর্ত ও উপদেশ?

Advertisement

হজরত ইবনে আবিস সায়িব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। মদিনার একজন প্রখ্যাত তাবেয়ি ও ওয়ায়েজ ছিলেন। মদিনার বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন। বিভিন্ন মজলিসে সুন্দর সুন্দর কথায় সাজিয়ে গুছিয়ে নিজের বানানো দোয়াও করতেন।

সে সময়টিতে উম্মাহাতুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা জীবিত ছিলেন। বিষয়টি তাঁর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি তাবেয়ি হরজত ইবনে আবিস সায়িবকে ওয়াজ-মাহফিল করার ব্যাপারে শর্ত জুড়ে দিয়ে উপদেশ দেন। যা ‘আকওয়ালে সালাফে’ ওঠে এসেছে।

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন, (ধর্মীয় আলোচনার ক্ষেত্রে) তুমি আমার কাছে তিনটি বিষয়ের ওয়াদাবদ্ধ হও; নয়তো আমি তোমাকে বয়কট করবো৷ এ কথা শুনে তাবেয়ি হরজত ইবনে আবিস সায়িব আরজ করলেন- সেগুলো কী?

Advertisement

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা শর্ত ও উপদেশ তুলে ধরেন এভাবে-১. সাঁজিয়ে গুছিয়ে লৌকিকতা প্রদর্শনে দোয়া করা থেকে বিরত থাকো। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে দোয়া করতেন না। কোনো সাহাবিও এভাবে দোয়া করতেন না।

২. সপ্তাহে একদিন বয়ান (ধর্মীয় আলোচনা/ওয়াজ-মাহফিল) করবে। নতুবা দুই দিন৷ আরও বেশি চাইলে তিন দিন আলোচনা করবে। এর চেয়ে বেশি সময় বয়ান (ধর্মীয় আলোচনা/ওয়াজ-মাহফিল) করা যাবে না।

৩. যেখানে-সেখানে বয়ান (ধর্মীয় আলোচনা/ওয়াজ-মাহফিল) করা যাবে না। কোথাও লোকজন জড়ো হওয়া দেখলেই বয়ান করা যাবে না। মানুষের প্রয়োজনীয় কথা বন্ধ করে দিয়ে ওয়াজ করে মানুষকে আল্লাহ তাআলার কিতাবের ব্যাপারে অতিষ্ঠ করা যাবে না। (কারণ সে সময় ধর্মীয় বয়ানের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে)। লোকজন যখন ওয়াজ শোনার আগ্রহ প্রকাশ করবে কেবল তখনই ওয়াজ করতে হবে৷ (তখন মানুষ নসিহত গ্রহণ করার প্রস্ততি নিয়ে একাগ্রচিত্তে বসবে এবং ওয়াজ শুনবে)।

মনে রাখা জরুরিওয়াজ-মাহফিল হলো মানুষের হেদায়েত ও সঠিক পথ পাওয়ার উপায়। এসব ওয়াজ মাহফিলে এমন কোনো আলোচনা করা যাবে না; যা কোরআন-সুন্নাহর খেলাফ। আবার এতবেশি ধর্মীয় অনুষ্ঠানও আয়োজন করা যাবে না; যাতে মানুষের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার উল্লেখিত ৩ শর্তই যুযোপযোগী। যা মেনে চলা সবার জন্য কল্যাণকর।

Advertisement

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব ধর্মীয় আলোচকদের সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে উল্লেখিত শর্ত ও উপদেশ মেনে ওয়াজ-মাহফিল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম