বাবা, সত্যি কি এবার স্কুল খুলবে? কতদিন স্কুলে যাই না, বন্ধুদের সঙ্গে খেলি না। কারো সঙ্গে কথাও হয় না। বদ্ধ ঘরে আর ভালো লাগে না। স্কুল খুললে সবার সঙ্গে দেখা হবে, খুব মজা হবে, বলোনা বাবা সত্যি স্কুল খুলবে?
Advertisement
রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা কাজি মোজাম্মেল হোসেনের মেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের আজিমপুর শাখার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রেহনুমা তাবাসুম, শুক্রবার দুপুরে এক নাগাড়ে তার বাবার কাছে স্কুল খোলার খবরটি সত্যি কিনা তা জানতে চাচ্ছিল।
কাজি মোজাম্মেল হোসেন অনেকদিন পর মেয়ের আনন্দ দেখে বলে, আমারও মনে হয় স্কুল খুলে দেবে। তিনি তখন পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল খুলে দেবে এমনটা বলেছেন তা জানতেন না। মেয়ের কথা শোনার পর টেলিভিশন খুলে ছুটি আর বাড়ছে না, স্কুল খুলে দেওয়া হতে পারে ব্রেকিং নিউজ দেখে মেয়ের এত আনন্দের কারণ বুঝতে পারেন।
স্কুল খুলে দেওয়া হতে পারে এমন সংবাদে শুধুমাত্র রেহনুমা একা নয়, তার মতো লাখ লাখ শিক্ষার্থী আনন্দিত ও খুশী হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে গত দেড় বছরেরও বেশি সময় স্কুল বন্ধ থাকায় তারা ঘরবন্দি হয়ে আছে। দিনের পর দিন খাঁচায় পোষা পাখির মতো ছটফট করে দিন কাটিয়েছে কোমলমতি শিশুরা।
Advertisement
স্কুল বন্ধ থাকলেও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে কোথাও বেড়াতে যেতে পারেনি। দেশের লাখ লাখ শিশু স্কুলে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে।
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে কাজি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, তার মেয়ে স্কুল খুলে দেওয়া হতে পারে এমন খবরে খুশী হলেও বাবা হিসেবে মেয়েকে স্কুলে পাঠানোর আগে বেশ কিছু প্রশ্ন মনে জাগছে। স্কুল খুলে দেওয়া হলে কি আগের মতো স্কুলের বেঞ্চিতে গাদাগাদি করে বসে পড়াশোনা করবে।
করোনা স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে স্কুল কর্তৃপক্ষ কী ধরনের সতকর্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে, যদি টিকা দেওয়া হয় তাহলে কোন শ্রেণি পর্যন্ত টিকা দেওয়া হবে। এতদিন অনলাইনে ক্লাস হয়েছে এখন খুলেই কি পরীক্ষা নেয়া হবে ইত্যাদি প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকা দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলবে। আগের ঘোষণা অনুসারেই নভেম্বরে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
Advertisement
গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। মারণ ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ওই বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।
এরপর সংক্রমণ পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে কয়েক দফা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
গত ২৬ আগস্ট সবশেষ ঘোষণায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও এক দফা বাড়িয়ে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়। ওইদিন শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। স্কুল-কলেজ ও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চাপ রয়েছে, খুললেও করোনা আক্রান্তের আশংকা রয়েছে। সব মিলিয়ে আক্রান্তের হার ১০ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাই।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের শুক্রবারের তথ্য অনুসারে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। যা আগের দুদিন ছিল যথাক্রমে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ ও ১০ দশমিক ১১ শতাংশ।
এমইউ/এমআরএম/এমআরআর