দেশজুড়ে

কুড়িগ্রামে বিপৎসীমার ওপরে ধরলার পানি, ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অপরিবর্তিত থাকলেও হু হু করে বাড়ছে ধরলা নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ধরলা নদী সংলগ্ন হলোখানা, ভোগডাঙ্গা, ঘোগাদহ, পাঁচগাছীসহ মোগলবাসা ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

Advertisement

অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটারে সীমাবদ্ধ থাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে ব্রহ্মপুত্র সংলগ্ন উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি। ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে এই চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। এতে করে জেলাজুড়ে অন্তত ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এই সময়ে কাজ না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যা কবলিতরা। মানুষের শুকনো খাবার সংকটসহ এসব এলাকায় গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন জেলা সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বন্যার্তদের মাঝে গতকাল বৃহস্পতিবার নগদ অর্থ, চাল-ডালসহ শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। তবে বিভিন্ন ইউনিয়নের বন্যার্ত অনেক মানুষ খাদ্যাভাবে ভুগছেন।

সদর উপজেলোর পাঁচগাছি ইউনিয়নের সিতাইঝাড় এলাকার ভিক্ষুক আঞ্জু বেগম বলেন, ‘বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সহায়তা পাইনি। প্রতি শুক্রবার ভিক্ষা করি। আজ ভিক্ষা না পেলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।’

Advertisement

পাঁচগাছি ইউপি দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে এই ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি এসব পরিবারের অনেকেই গবাদিপশুসহ উচু রাস্তা কিংবা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব পরিবারের মাঝে শুকনো খাবারের সংকটসহ গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।’

কুড়িগ্রাম সদরের মোগলবাসা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আইয়ুব আলী বলেন, ‘ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে আমার ওয়ার্ডের রেডক্রসপাড়া, মন্ডলপাড়া, মুন্সিপাড়াসহ বাহাদুরপাড়া এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অন্তত ৪০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি এসব পরিবার নানা রকম ভোগান্তিতে রয়েছে। এসব এলাকার আনুমানিক ৩০ একর জমির রোপা ও ২০ একর জমির সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।’

চিলমারীর রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কষ্টে দিনযাপন করছেন তারা। বাড়ির চারিদিকে পানি থাকায় শিশু,বয়স্কসহ গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন এসব এলাকার মানুষ। এখন পর্যন্ত তাদেরকে কোনো ধরনের ত্রাণ সহায়তা দিতে পারিনি।’

এছাড়াও চিলমারীর নয়ারহাট ইউনিয়নের ৪০০ পরিবার থানাহাট ইউনিয়নের ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি এসব মানুষ নিজেদের খাবার সংকটে ভুগছেন। পাশাপাশি গোখাদ্য সংকটসহ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।

Advertisement

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফিজানুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গতকাল জেলা সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ৬২৫ জন বন্যার্তের প্রত্যেককে নগদ ৫০০ টাকা এবং ২০০ জনকে প্যাকেজ সহায়তা দিয়েছেন। প্রতিটি প্যাকেজে ছিল ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, আধালিটার সয়াবিন তেল, আধাকেজি চিনি, এক কেজি লবণ, এক কেজি চিরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সদর উপজেলার জন্য সাড়ে তিন হাজার প্যাকেজ সহায়তা প্রস্তুত রেখেছি। কিছু ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ এসে তাদের নিজ নিজ ইউনিয়নের তালিকা অনুযায়ী নিয়ে গেছেন। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তালিকা দিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।’

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ধরলার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্রের পানি অপরিবর্তিত থাকায় বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

মো. মাসুদ রানা/ইএ/জেআইএম