জাতীয়

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে: মোস্তাফা জব্বার

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু ২০২১ সালে এসে আইনটি অপরাধ দমনে বিস্তৃত ভূমিকা রাখছে না, এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আইনের অপপ্রয়োগ মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

আইন প্রয়োগের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধসহ সব অপরাধ দমন করতে হলে আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধে আইন প্রয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: নারীর মানবাধিকার’ শীর্ষক অনলাইন মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, অনলাইনে অপপ্রচার, সন্ত্রাস, রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের জিম্মি অবস্থা দূর করতে ফেসবুক ও ইউটিউব সোশ্যাল মিডিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আগের বিপন্ন অবস্থা থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে, নিয়মবহির্ভূত বিষয়গুলোর প্রচার বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আইন থাকলেও এ দেশে নেই। এসময় তিনি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আইন সংশোধনে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।

সভায় গেস্ট অফ অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম; এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির (ঘাদানিক) সভাপতি শাহরিয়ার কবির, গাজী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা এবং আইন ও বিচার বিভাগের (আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়) উপ-সচিব (জেলা জজ) বেগম মাকসুদা পারভীন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ একটি সময়োপযোগী আলোচনার আয়োজন করেছে। এটি বর্তমান পরিস্থিতির জন্য খুবই জরুরি। তিনি নারীদের প্রতি অবমাননাকর আচরণ বন্ধে মানবাধিকার কমিশন থেকে গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

তিনি আরও বলেন, তিনি নারীর প্রতি চলমান সাইবার অপরাধ, সাইবার বুলিং বন্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব ব্যবহারে কিছু টুল ব্যবহার করে এর সহজলভ্যতা নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেন।

Advertisement

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঘাদানিক সভাপতি লেখক শাহরিয়ার কবির বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতামূলক, অশ্লীল, কদর্যমূলক বক্তব্য দেওয়ার পরও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কাউকে গ্রেফতার করতে দেখা যায়নি। কেন এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষানীতি প্রণয়ন হলো না, কেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এখনো নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করা হয়নি- প্রশ্ন রাখেন তিনি।

এসময় তিনি সম্প্রতি সংঘটিত সাম্প্রদায়িক ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, মৌলবাদিতা, সাম্প্রদায়িক ও নারীবিদ্বেষী মনোভাব এখনো প্রশাসনের গভীরে আছে।

গাজী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপ্রয়োগ হচ্ছে। যে কোনো ঘটনায় যদি নারী যুক্ত থাকেন তাতে প্রত্যেকের নেতিবাচক মনোভাবের দৃঢ় উপস্থিতি দেখা যায়। ডিজিটাল মাধ্যমে সবচেয়ে ভুক্তভোগী হলেন নারী। সবকিছু মিলিয়ে স্বাধীনতার ৫০ বছরে মানবিকতার অবক্ষয়, নারীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব, উদারতার অবক্ষয় চরমভাবে ঘটেছে । বিচারিক প্রক্রিয়ায় নারীরা খুব কম পরিমাণে যাচ্ছেন, অনেকে সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না, নিরাপত্তা বোধ করেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নানা ধারা উপধারা উল্লেখ করে আইন ও বিচার বিভাগের উপ-সচিব বেগম মাকসুদা পারভীন বলেন, নারীর প্রতি সাইবার সহিংসতা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। তিনি প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের একটি জরিপের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ৫৩ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে সাইবার সহিংসতার শিকার। বাংলাদেশে মোট আটটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে ও আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ করতে হবে।

মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামীর সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।

এইচএস/এআরএ/জিকেএস