করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনা সংক্রমণের হার ৩২ শতাংশ থেকে কমে ১১ শতাংশে (১০ দশমিক ১১ শতাংশ) নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে খালি রয়েছে হাসপাতালের ৭৫ শতাংশ বেড।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, আগের তুলনায় কোভিড পরিস্থিতি উন্নত করেছে। সংক্রমণের হার ১১ শতাংশে নেমে এসেছে। যেটা ৩২ শতাংশ হয়ে গেছিল। আপনারা জানেন অনেক কিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। খুলে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিনোদনের জায়গাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।
তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আবারও করোনা সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
Advertisement
তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে কাজ করতে হবে। খুলে দেওয়ার অর্থ এই নয় যে আমরা বেপরোয়াভাবে ঘুরব। তাহলে পরে কোভিড আবারও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। যেভাবে গতবার বেড়েছিল। এখনো কোভিড চলে যায়নি। সংক্রমণের হার এখনো ১১ শতাংশ।
হাসপাতালে প্রায় ৭৫ শতাংশ বেড এখন খালি রয়েছে বলে জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, রোগীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। মৃত্যুর হারও কমেছে। কিন্তু আমরা যদি বেপরোয়াভাবে ঘুরি তাহলে এটা বাড়তে খুব বেশি সময় লাগবে না।
তিনি বলেন, অনেক দেশ কোভিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারায় সরকার সমস্যায় পড়েছে। সে তুলনায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভালো করেছে। টিকা প্রবাহ অনেক ভালো হয়েছে। আগামীতে আরও গতি লাভ করবে। আমি মনে করি ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমে আমাদের মৃত্যুহার কমে যাবে, সংক্রমণের হারও অনেক কমে যাবে। আমরা ভাগ্যবান এগুলো সংগ্রহ করতে পেরেছি। এখন অনেক দেশ আছে যেখানে ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।
সরকার জনগণের পাশে আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকারকে ভ্যাকসিনের জন্য দেখেন কত টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এ কয়দিনে আমরা দেখলাম শুধু ভ্যাকসিনের খরচ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। সামনে আরও কিনতে হবে। আমরা যে অর্ডার দিয়েছি সেগুলো কিন্তু টাকা দিয়ে কিনতে হবে। সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা লাগবে। ভ্যাকসিন কেনার খরচ আছে, রাখার খরচ আছে, ম্যানপাওয়ার খরচ আছে। জনগণের পাশে এই সরকার আছে।
Advertisement
টিকা কার্যক্রমের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের ৩ কোটি ৮৩ লাখ রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে। ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দিয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৮২ লাখ। ভ্যাকসিন হাতে আছে ১ কোটি ২২ লাখ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা চীনে অর্ডার দিয়েছি সাড়ে সাত কোটি ভ্যাকসিন। প্রথমে অর্ডার দেওয়া হয় দেড় কোটি। কিছুদিন আগেই আমরা ছয় কোটি ভ্যাকসিন অর্ডার দিয়েছি। আগামী তিন মাসে এই ছয় কোটি ভ্যাকসিন চলে আসবে, প্রত্যেক মাসে দুই কোটি করে।
মন্ত্রী বলেন, ডব্লিউএইচও থেকে একটা প্রস্তাব আমাদের কাছে এসেছিল সাড়ে ১০ কোটি ভ্যাকসিনের। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে উনার অনুমতি সাপেক্ষে এই ভ্যাকসিন ক্রয়ের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সাড়ে ১৬ কোটি ভ্যাকসিন আমরা ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভ্যাকসিনগুলো আগামী সেপ্টেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে চলে আসবে।
জাহিদ মালেক আরও বলেন, ডব্লিউএইচও থেকে ৬ কোটি ৮০ লাখ ভ্যাকসিন আমরা বিনামূল্যে পাই সেটা চলমান থাকবে। গতকাল আমরা ফাইজারের ১০ লাখ ভ্যাকসিন পেয়েছি। এটা এভাবে চলমান থাকবে। আমাদের পরিকল্পনা হলো সেপ্টেম্বর থেকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি সাপেক্ষে দেড় থেকে দুই কোটি লোককে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, বয়স্কদের অগ্রাধিকার দিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মডার্নার যে ভ্যাকসিন আমরা পাব তার বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়ার চেষ্টা করব। আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভ্যাকসিন দিয়ে স্কুলে যেতে পারলে ভালো।
শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কেন মডার্নার টিকা দেওয়া হবে এমন এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ইউরোপ-আমেরিকাতে ফাইজার এবং মডার্নার টিকা বাচ্চাদের দেওয়া হয়েছে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাচ্চাদের টিকা দিয়েছে। সে কারণে আমরাও এটা আমাদের দেশে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছি।
এমএএস/জেডএইচ/জেআইএম