দেশজুড়ে

কুড়িগ্রামে বিপৎসীমার ওপরে ব্রহ্মপুত্র-ধরলার পানি

কুড়িগ্রামে হু হু করে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। ধরলা নদীর পানি এর আগে কিছুটা কমলেও আবার যেন পূর্ণ উদ্যমে বাড়তে শুরু করেছে। এতে নদী সংলগ্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করেছে। পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন ৭০ হাজার মানুষ।

Advertisement

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার চর ও দ্বীপচর সহ জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা কিংবা কলা গাছের ভেলায় করে যাতায়াত করছেন সবাই। ঘর-বাহির সহ বিস্তীর্ণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন এসব এলাকার পানিবন্দি মানুষ। অনেকেই উপায়হীন হয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু স্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিংবা বাঁধে। শুকনো খাবারের সংকট দেখা দেয়ায় তারা অপেক্ষা করছেন সরকারি-বেসরকারি সহায়তার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পানিতে তলিয়ে আছে জেলার ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমির রোপা আমন, ১৮৫ হেক্টর জমির বীজতলা ও ২৮৫ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত। দীর্ঘদিন পানির নিচে থাকায় বেশিরভাগ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

Advertisement

চিলমারীর রমনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজগার আলী সরকার জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে মুন্সিপাড়া, খামার, মাস্টারপাড়া, ব্যাপারী পাড়া, স্টেশন পাড়া, খেউনি পাড়া, দালালিপাড়াসহ সাপবান এলাকার অন্তত ৪০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার অনেক পরিবার ওয়াপদা বাঁধে, অনেকেই আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি, আবার অনেকেই উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদি পশু নিয়ে নিয়ে বিপাকে রয়েছেন এসব পরিবার।

রৌমারীর তিন নং বন্দবেড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের জানান, ইউনিয়নটির বেশিরভাগ এলাকাই পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে আছেন বলদমারা, উত্তর বাগুয়ার চর, ফলুয়ার চর, ফালের চর, চর বাগমারা, বাইশপাড়া, পশ্চিম খঞ্জনমারা, তিনতুলি, ঝুলকির চর সহ পূর্বপোড়া এলাকার বাসিন্দারা। এসব গ্রামের দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কলা গাছের ভেলা কিংবা নৌকায় করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছেন কারা।

রৌমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আজিজুর রহমান জানান, উপজেলার ধনার চর এলাকার পানিবন্দি ৪০টি পরিবারকে প্যাকেজ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এতে ছিল ১০ কেজি চাল, আধা কেজি লবন, আধা কেজি চিনি, আধা লিটার সয়াবিন তেল এবং দুই কেজি চিড়া। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে নিজ নিজ ইউনিয়নের পানিবন্দি ৩০০ জনের তালিকা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল ইমরান জানান, এই উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের আনুমানিক ১৫ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। দ্রুতই ভুক্তভোগীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

Advertisement

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৮০ মেট্রিকটন চাল ও সাড়ে ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

মাসুদ রানা/ এফআরএম/এএসএম