এক সময় হকারি করে কোনো রকম সংসার চালিয়েছেন। অসুস্থতার কারণে তাও আজ বন্ধ হয়ে গেছে। বলতে গেলে শহরের বিত্তবানদের দয়া দক্ষিণায় চলছে তিনজনের সংসার। বলছি ঝিনাইদহের মুক্তিযোদ্ধা পরিমল চক্রবর্তীর কথা।জায়গা-জমি বসতবাড়ি না থাকায় বাস তিনি বাস করেন ঝিনাইদহের ঝিনুক আবাসন প্রকল্পের ১৮/৬ নম্বর ঘরে। জন্মস্থান ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি গ্রামে। বাবা মৃত প্রফুল্ল চক্রবর্তীর দুই সন্তানের মধ্যে পরিমল চক্রবর্তী ছোট। অর্থের অভাবে পড়ালেখা করতে পারেনি পরিমল। ছোট থাকতেই বাবার সঙ্গে পরের ক্ষেতে কাজ করতে যেতে হয়েছে।মুক্তিযোদ্ধা পরিমল বলেন, একমাত্র ছেলে প্রণব চক্রবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অপেক্ষামাণ তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে। অর্থের কারণে ছেলের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে না যায় এখন এই চিন্তা তাকে পেয়ে বসেছে। তিনি বলেন, দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি যুদ্ধে অংশ নেন। শেখ মুজিবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে বিয়ে করেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার করোতিপাড়া গ্রামের চম্পা রানী চক্রবর্তীকে। তাদের ঘরে একমাত্র সন্তান প্রণব চক্রবর্তীর বয়স এখন ১৮ বছর। ছেলে প্রণব চক্রবর্তী বলেন, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় এ গ্রেড পেয়ে পাস করেছেন। পড়ালেখার প্রতি তার প্রচণ্ড আগ্রহ। বরাবরই ভালো ফলাফল করেছে। এবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল। অপেক্ষামাণ তালিকায় চতুর্থ স্থান রয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির সুযোগও পাবেন আশা করছেন। কিন্তু ভর্তি হতে যে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার প্রয়োজন তা জোগাড় করা অসম্ভব। যে কারণে সারাক্ষণ চিন্তায় আছেন। এ ব্যাপারে তিনি সকলের সহযোগিতা আশা করেছেন।পরিমল চক্রবর্তীর স্ত্রী চম্পা রানী বলেন, সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় ঠিকমতো ঘুরতে পারেন না। পত্রিকা বিক্রি করতে হলে নানা স্থানে যেতে হয়। যা তার পক্ষে এখন আর কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মাসিক ৮ হাজার টাকা ভাতা পান। এই দিয়ে বেঁচে আছেন। তাদের দুইজনের চিকিৎসা খরচই মাসে ৬,০০০ টাকা। কিভাবে চলে সংসার আর কিভাবে চলে ছেলের লেখাপড়ার খরচ তা বিধাতাই জানেন।এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার মকবুল হোসেন জানান, দেশের অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধাই হতদরিদ্র। কেউ তাদের নিয়ে ভাবে না। সমাজের সবাইকে এ ব্যাপারে একটু সহনশীল হওয়া দরকার।এসএস/এমএস
Advertisement