ধর্ম

ইসলামে যৌবনকাল কেন গুরুত্বপূর্ণ?

মানুষের জীবনে যৌবনকাল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মানুষের জন্য এটি স্বর্ণ যুগ। ইসলাম যৌবনকালকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। যৌবনের গুরুত্ব সম্পর্কে কী বলে ইসলাম?

Advertisement

যৌবনকালের কাজের গুরুত্ব কত বেশি তা এ হাদিস ও সুসংবাদ থেকেই প্রমাণিত-

وعدّ صلى الله عليه وسلم في السبعة الذين يظلهم الله في ظله يوم لا ظل إلا ظله: « شابا نشأ في عبادة الله".

আর যে যুবক তার যৌবনকে আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়ে দেয়; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সম্পর্কে বলেছেন, কেয়ামতের দিন; যেদিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না; আল্লাহ তাআলা তাকে (আরশের) স্বীয় ছায়ার তলে আশ্রয় দেবেন।’ (সুবহানাল্লাহ!)

Advertisement

কারণ যে কোনো যুবকের জন্যই যৌবনে ভালো থাকা চ্যালেঞ্জিং আর খারাপ হওয়া একেবারেই সহজ। যৌবনের প্রতিটি কাজ যথাযথ নিয়ন্ত্রণে সম্পন্ন করা যেমন কঠিন তেমনি যৌবনে সঠিক পথের দিকে ধাবিত হওয়া আরও বেশি কঠিন। তাই এ বয়সের যথাযথ নিয়ন্ত্রণকারীরাই দুনিয়া ও পরকালে সফল।

প্রতিটি মানুষের জন্যই কর্ম সম্পাদন, ক্যারিয়ার গঠন ও নেক আমল করার মুখ্য সময় যৌবনকাল। যারা এ সময়টিকে কাজে লাগাবে তারাই উন্নতির শীর্ষে পৌঁছতে সক্ষম। আর যারা সময়টিকে অবহেলায় নষ্ট করবে পরবর্তী জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত হবে নিরানন্দ ও ভয়ংকর।

সুতরাং বুদ্ধিমানের কাজ হলো যৌবনকালের যথাযথ ব্যবহার করা। যৌবনকালকে ভালো কাজের মধ্যে অতিবাহিত করা জীবনের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ। হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকেই তা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

اغتنم خمسا قبل خمس: شبابك قبل هرمك، وصحتك قبل سقمك، وغناك قبل فقرك، وفراغك قبل شغلك، وحياتك قبل موتك

Advertisement

‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিসের আগে গণিমত/সুবর্ণ সুযোগ মনে করো। (তাহলো)-

১. তোমার যৌবনকে কাজে লাগাও বার্ধক্য আসার আগে।

২. তোমার সুস্থতাকে কাজে লাগাও তোমার অসুস্থ হওয়ার আগে।

৩. তোমার সচ্ছলতাকে কাজে লাগাও অসচ্ছলতার আগে।

৪. তোমার অবসরকে কাজে লাগাও তোমার ব্যস্ততা আসার আগে। আর

৫. তোমার হায়াতকে (জীবনকে) কাজে লাগাও তোমার মৃত্যু আসার আগে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)

যৌবনকালের গুরুত্ব

ইবাদত-বন্দেগি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য যৌবনকাল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যৌবনে যারা আল্লাহর পথে চলে পরবর্তী জীবনের অবসর সময়েও তাদের আল্লাহর কাছে যৌবনের ইবাদতের মতো প্রতিদান পাওয়া সুনিশ্চিত।

যৌবন মানুষের জীবনে মেহমানের মতো। এ কারণেই ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন- ‘আমি যৌবনকে এমন বস্তুর সঙ্গেই তুলনা করি, যে বস্তুটি ক্ষণিকের জন্য আমার বগলের নীচে থাকে, তারপর তা হারিয়ে যায়।’

কবির ভাষায় যৌবন মেহমানের মতো ক্ষণস্থায়ী। এটি কখনো স্থায়ী হয় না। বুদ্ধিমানতো সে যে যৌবনকালকে কাজে লাগায়; বার্ধক্য আসার আগে যৌবনকে গুরুত্ব দেয়। যারা যৌবনকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ তাদের জন্য আফসোস! তাই তো কবি বলেন-

‘যৌবন হলো একজন মেহমান; যে আমাদের আঙ্গিনায় এসে কিছু সময় অবস্থান করলো; তারপর সে গুনাহ দ্বারা আমলনামাকে কালো করলো; এরপর পালিয়ে গেল।’

মনে রাখতে হবে

মানুষের জীবনে যৌবন একবারই আসে। একবার চলে গেলে তা আর কখনও ফিরে আসবে না। যৌবনকালকে কাজে না লাগালে ব্যক্তির দুনিয়া ও পরকাল দুইটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা কেয়ামতের দিন যৌবন সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। যৌবনের জবাবদিহিতা সম্পর্কে হাদিসের অন্য বর্ণনায় এসেছে-

>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

لا تزول قدما ابن آدم يوم القيامة من عند ربه، حتى يُسأل عن خمس: عن عمره فيم أفناه؟ وعن شبابه فيم أبلاه؟ وعن ماله من أين اكتسبه وفيم أنفقه؟ وماذا عمل فيما علم؟

‘কেয়ামতের দিন ৫টি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া কোনো আদম সন্তানই আল্লাহর সামনে থেকে এক কদমও সরাতে পারবে না। (তাহলো)-

১. তার জীবনকে কোথায় ব্যয় করেছে।

২. যৌবনকে কোথায় ক্ষয় করেছে।

৩. সম্পদ কোথায় থেকে অর্জন করেছে এবং

৪. কোথায় ব্যয় করছে।

৫. আর যা জেনেছে, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে।’ (তিরমিজি)

>> হজরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ তাআলা একমাত্র যুবক বান্দাকে জ্ঞান দান করেন। যাবতীয় কল্যাণ যৌবনেই লাভ করা সম্ভব হয়। তারপর তিনি তার দাবির পক্ষে যুক্তি-প্রমাণ হিসেবে আল্লাহ তাআলার বাণী তেলাওয়াত করে শোনান। আল্লাহ তাআলা বলেন-

১. قَالُواْ سَمِعۡنَا فَتٗى يَذۡكُرُهُمۡ يُقَالُ لَهُۥٓ إِبۡرَٰهِيمُ

‘তাদের কেউ কেউ বলল, আমরা শুনেছি এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয় ইবরাহিম।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৬০)

২. َّحۡنُ نَقُصُّ عَلَيۡكَ نَبَأَهُم بِٱلۡحَقِّۚ إِنَّهُمۡ فِتۡيَةٌ ءَامَنُواْ بِرَبِّهِمۡ وَزِدۡنَٰهُمۡ هُدٗى

‘আমরা তোমাকে তাদের সংবাদ সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই তারা কয়েকজন যুবক, যারা তাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমরা তাদের হেদায়েত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ১৩)

সুতরাং হজরত হাফসা বিনতে সীরিন রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ভাষায় বলতে হয়- ‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমরা (ভালো) কাজ করো; কারণ যৌবনকালই হলো (ভালো) কাজ করার উপযুক্ত সময়।’

বর্তমান সময়ে যুব সমাজের যে দুরবস্থা ও নৈতিক অধঃপতন বৃদ্ধি পেয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এভাবে চলতে থাকলে মুসলিম সমাজের যুবকদের অবস্থায় কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কল্পনাতীত।

তাই যুব সমাজকে তাদের সার্বিক অপ-মৃত্যুর হাত থেকে মুক্ত করতে, নিশ্চিত ধ্বংস থেকে বাঁচাতে সঠিক পথের দিকে ডাকা সবার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।

সব যুবকের উচিত, কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক জবাবদিহিতামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা। সব অন্যয় ও মন্দ কাজ থেকে ফিরে থাকা। কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক জীবন গড়ে তোলা। যুবকদের প্রতি পরিবারের সবার সুদৃষ্টি দেওয়াও জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ সব যুবককেই যৌবনের স্বর্ণ সময়টি ভালো কাজে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। সঠিক পথে জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। মন্দ পরিহার করে সঠিক ভালো কাজে আত্মনিয়োগ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম