অর্থনীতি

করোনার ক্ষতি পোষাতে এসএমই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরবর্তী ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এসএমই খাতে সরকারের নীতি সহায়তার আরও অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।

Advertisement

মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে এসএমই ফাউন্ডেশন ও এফইএস বাংলাদেশ আয়োজিত ‘করোনা সংকট পরবর্তী এসএমই খাতের ভবিষ্যৎ: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা। মূল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ, অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী ও ইউএনডিপির কান্ট্রি অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান।

মূল প্রবন্ধে ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান ২৫ ভাগ। এই খাতের অবকাঠামো ও ক্লাস্টার উন্নয়নে এসএমই নীতিমালা ২০১৯ সরকারের একটি কার্যকর উদ্যোগ। একই সঙ্গে এসএমই পণ্যের বাজার সংযোগের দিকেও নজর দেয়া হয়েছে এই নীতিমালায়।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানসমূহের রাজস্ব কমেছে ৬৬ শতাংশ, ৭৬ শতাংশ পণ্য অবিক্রিত রয়ে গেছে। এই খাতের ৪২ শতাংশ কর্মী আংশিক বেতন পেয়েছেন, ৪ শতাংশ কর্মী বেতনই পাননি। এমন পরিস্থিতিতে এসএমই খাতের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এই খাতের জন্য আরও অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা আইএমএফ-এর তহবিলের বেশিরভাগ অর্থই উন্নত দেশগুলো নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর এসএমই খাতের উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

তার মতে, করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এসএমই খাতে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। ড. আতিউর রহমান বলেন, ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ভারত এসএমই খাতের জন্য মোট প্রণোদনা প্যাকেজের ৩৮ শতাংশ, থাইল্যান্ড ৩৩ শতাংশ, মালয়েশিয়া ২৪ ভাগ বরাদ্দ দিলেও বাংলাদেশের বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র ২২ শতাংশ।

তাই এ তিনি এ খাতের জন্য সরকারের প্রণোদনার পরিমাণ আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে এসএমই খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নিচে উল্লিখিত সুপারিশগুলো তুলে ধরেন-

Advertisement

১. এসএমই নীতিমালা ২০১৯ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন; ২. ক্লাস্টারভিত্তিক এসএমই উন্নয়ন; ৩. এসএমই ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এসএমই প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ; ৪. প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণ নজরদারির জন্য ডিজিটাল ড্যাশবোর্ড তৈরি; ৫. ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়ায় ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ তৈরি ও ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের উন্নয়ন; ৬. রপ্তানিমুখী এসএমই ও নারী-উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া; ৭. পরিবেশবান্ধব এসএমই প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

এ সময় শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি এসএমই বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত। কোভিড-১৯-এর কারণে এ খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার এরই মধ্যে এসএমই খাতকে প্রণোদনা প্যাকেজ ও নীতি সহায়তা দিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় গত অর্থবছরের ১০০ কোটি টাকার মতো চলতি অর্থবছরেও ২০০ কোটি টাকা বিতরণে এসএমই ফাউন্ডেশন সক্ষম হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, করোনার প্রেক্ষাপটে সরকারের প্রণোদনার অংশ হিসাবে মাত্র ৯৫ হাজার এসএমই উদ্যোক্তার মাঝে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান অনুসারেই দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৮ লাখের বেশি। তাই দেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে এসএমই খাতের উন্নয়নে কাঠামোগত ও নীতি সংস্কার করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এনএইচ/এআরএ/এমএস