বিশেষ প্রতিবেদন

দেশ চলুক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়

প্রত্যেক বছর বিজয় দিবসে কিছু লোককে প্রায়ই বলতে শোনা যায়, দেশ স্বাধীন করে আমরা কী পেলাম? আবার কারো কারো কণ্ঠে হতাশা এবং ক্ষোভ শোনা যায়। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের এসব কথা বলতে শোনা যায় এবং উচ্চারিত হয়, কী জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম? এই বাংলাদশের জন্যই কী আমরা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম? ত্রিশ লক্ষ লোক শহীদ হয়েছিল? এটা সত্য কোনো দেশ স্বাধীন করার জন্য এত লোক প্রাণ দেয় নি। এরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ। পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনীর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের শিকার। মুুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বিপক্ষে ছিল, তারা তো এই স্বাধীনতা অর্জনকে ভালো কাজ বলে মনেই করে না। অনেক লোক এখনও বলে, পাকিস্তানি আমল ভাল ছিল, ব্রিটিশ আমল তার চেয়ে ভাল ছিল। আমি তাঁদের বলি, তার চেয়ে বলুন শায়েস্তা খাঁ’র আমল ছিল সবচেয়ে ভাল, টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় তখনও এ বাংলায় প্রচুর লোক না খেয়ে থাকত। উন্নত চিকিৎসা দূরের কথা, ম্যালেরিয়া হলে একটা প্যারাসিটামল কেনারও সামর্থ অনেকের ছিল না।মুক্তিযোদ্ধারা একটি স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের জন্য মানুষকে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। স্বপ্নের সোনার বাংলা ধারণাটি সম্পূর্ণ বিমূর্ত না হলেও অনেকের কাছে এখনও তা অস্পষ্ট। কেউ যদি মনে করেন, জাতির জনকের সোনার বাংলা মানে সুইজারল্যান্ডের মতো ধনী এবং মধ্যপ্রাচ্যের মতো অনেক সম্পদ মজুদ সমৃদ্ধ দেশ- তাহলে সে ধারণা  ভুল। বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস, ভূগোল ও বিশ্ব অর্থনীতি সম্পর্কে অত্যন্ত স্পষ্ট জ্ঞান ছিল। স্বাধীনতার পর দেশ রাতারাতি উন্নত তথা ধনী দেশে পরিণত হবে- তিনিও এমনটি চিন্তা করতেন না। উন্নত দেশ হওয়ার জন্য যথাযথ শর্তসমূহের উপস্থিতি এবং  ব্যবহারের বিষয়ে অনেক দ্বি-মত রয়েছে। ১৯৭১ সালে যদি পাকিস্তান থেকে আলাদা না হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা না হত তাহলে আমাদেরকে পাকিস্তানের অংশই থাকতে হত। কিন্তু সেই পাকিস্তানের এখন কী অবস্থা ? সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক এমনকি আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ সকল সূচকে পাকিস্তান আমাদের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অর্জন আমাদের তুলনায় অর্ধেকও নয়। স্বাধীন না হয়ে আমরা যদি পূর্ব পাকিস্তান হয়েই থাকতাম তাহলে আমাদের অবস্থা ঠিক একই রকম হত। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান কেবল পাকিস্তান নয়, ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে পাশাপাশি সার্কভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় আর্থ-সামাজিক অনেক বিবেচনাতেই এগিয়ে আছে। স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের প্রথম স্বপ্ন, পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মালিক হওয়া, তা সার্থক হয়েছে। এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে মুক্তিযুদ্ধের বড় সুফল কী ? তাহলে বলবো ‘আমরা পাকিস্তান নামক একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের অংশ নই’- এটিই বড় পাওয়া। পাকিস্তানের অর্ধেক অংশ এখন তালেবানদের দখলে। কেবল তাই নয়, আমেরিকানদের অন্যতম ঘাঁটি পাকিস্তান, সেখানে আকাশ থেকে অনবরত বোমা ও ড্রোন হামলা হচ্ছে এবং জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। এসব দিক থেকে পরিত্রাণ পাওয়া তথা পাকিস্তান নামক দুষ্ট-ভ্রান্ত রাষ্ট্রের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া- এটিই স্বাধীনতার সর্বোচ্চ সাফল্য। এরপরও বলা হয়, যে সকল ক্ষেত্রে আমাদের উন্নতি করা এবং এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল- আমরা সে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি। কিন্তু এর পিছনেও কারণ রয়েছে। ১৯৭১ সালে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়। যে চেতনাগুলো ’৭২ -এর সংবিধানের স্তম্ভ হিসেবে সন্নিবেশিত হয়। কিন্তু ’৭৫ -এর ১৫ আগস্ট জাতির জনককে ঘাতকরা হত্যা করে। আর এই হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের বাঙালিত্ব, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং একটি শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের যাত্রার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ পুনরায় একটি পূর্ব পাকিস্তান কায়েম করা হয়। শুধু বাংলাদেশের নামটি পরিবর্তন করার সাহস দেখায়নি ষড়যন্ত্রকারীরা। বাংলাদেশ নামেই শুরু হয় পাকিস্তানি কার্যক্রম, পাকিস্তানের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনার যা কিছু ছিল, তার সবকিছুই আবার ফিরে আসে। এতে স্বাধীনতার চেতনা বাধাগ্রস্ত হয়। যে স্বপ্ন, চেতনা, ধ্যান-ধারণা নিয়ে মানুষ দেশ স্বাধীন করেছিল তার বিপরীতধর্মী একটি শক্তি বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসে। তারা ক্ষমতায় বসে প্রথমেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে।১৫ আগস্ট জাতির জনককে হত্যার মধ্য দিয়ে তিনটি হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন হয়। একটি হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দ্বিতীয়টি বাংলাদেশ এবং তৃতীয়টি বাঙালি। দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি। অর্থাৎ মুসলমান এবং হিন্দুদের পৃথক দু’টি দেশ। অনেক সময় বলা হয়, আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। এই এলাকার লোক হিসেবে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা আমাদের দীর্ঘ সময়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এ ধারণার মাঝে বিভ্রান্তি রয়েছে। এটি এক সময় সত্য ছিল। যখন মুসলমান, হিন্দু-বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ সকল সম্প্রদায়ের লোক গ্রামে এক সাথে মিলেমিশে বসবাস করতেন। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনের শেষ ভাগে এসে উপনিবেশবাদীরা নিজেদের স্বার্থে জাতিকে ভাগ করার কৌশল গ্রহণ এবং সকল প্রকার পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে। এ কারণে মুসলমান এবং হিন্দু নামে দুইটি স্বতন্ত্র জাতি-রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এবং তাদের হীন খণ্ডিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে দ্বি-জাতি তত্ত্ব সমর্থন করে। সেসময় আমাদের এ এলাকার অনেকে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেননি। আমরা সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী- এমন ধারণার মাঝে এ পাদটীকাটি দিতেই হবে যে, পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে এবং অতিসাম্প্রদায়িক লোকদের চেতনা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হিন্দুদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র ভারত তৈরির পিছনে এবং এখনও যারা বলে ভারত হবে একটি হিন্দু রাষ্ট্র বা গরুর মাংস নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তাঁরাও অতিউগ্র সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী ছিল এবং এখনও আছে। সৃষ্টির পর থেকেই পাকিস্তানের কাজ ছিল হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো এবং ভারতের বিরোধিতা করা। যা এখনও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অব্যাহত রয়েছে। ভারত ও হিন্দুরা শত্রু -এমন বিশ্বাস থেকে তাদের বিরোধিতা করেই পাকিস্তানের সৃষ্টি। একটি যুদ্ধং-দেহী মনোভাবের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় থাকে। ভারতেও কিছু দাঙ্গাবাজ সাম্প্রদায়িক লোক ও দল আছে তারাও ক্ষমতায় যাওয়ার ও থাকার জন্য ধর্মীয় উন্মাদনাকে ব্যবহার করে।১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে উক্ত ধ্যান-ধারণা ঠিক একইভাবে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানে রূপান্তরিত হয়। একইসঙ্গে সব রকমের প্রতিক্রিয়াশীলতা সৃষ্টি হয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’-এর পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ জিয়াউর রহমান চালু করেন। বাংলাদেশ বেতারের নাম পরিবর্তন করে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ করা হয়। এভাবেই তারা স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিদের পুনর্বাসন এবং শীর্ষ পর্যায়ের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শাহ্ আজীজসহ অন্যান্য নেতৃত্বকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্র ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করার কাজ করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যত ধরনের পরিবর্তন আনা হয়, তাতে স্বাধীনতার চেতনা- ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বৈষম্যহীন সমাজের আবেদন বিনষ্ট করা হয়। কেবল তাই নয়, এখানে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় বিভিন্ন ধর্ম ভিত্তিক সংগঠন গড়ে তোলা হয়। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দ্বি-জাতি তত্ত্বের চেতনা পুনঃপরিস্ফুটিত হতে থাকে। সব চেয়ে দুঃখজনক হলো, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়। চরম পৃষ্ঠপোষকতা হিসেবে জেনারেল এরশাদ বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের দল ফ্রিডম পার্টিকে অবাধ রাজনীতির সুযোগ প্রদান করেন। এদের নেতৃত্বকে নির্বাচিত করে মহান জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে বসায়। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে জাতি কেবল রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে যায়নি, বরং অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হওয়ার জন্য যে জাতীয় চেতনাবোধ অর্থাৎ একটি শক্তিশালী সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন, তা নস্যাৎ হয়। ’৯০ এর দশকে পাকিস্তানি ভাবধারার সামরিক স্বৈরশাসনের পতন হয়। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে উল্টো যাত্রা থেকে দেশকে সঠিক পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। দেশ আবার স্বাধীনতার চেতনায় ফিরে আসে।বর্তমানে আমাদের কতগুলো অর্থনৈতিক টার্গেট ঘোষণা করা হয়েছে। তা হলো আমরা ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হবো। ধনী দেশ হওয়ার হিসাব মূলত বিশ্বব্যাংকের মাথাপিছু আয়ের উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়। আমাদের মাথাপিছু আয় যদি চার হাজার বা সাড়ে চার হাজার ডলারে উন্নীত হয়, তাহলে আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় থাকবো না, অর্থাৎ উন্নত দেশের দিকে ধাবিত হবো। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই রকম আয়সমৃদ্ধ দেশ পৃথিবীতে এক সময় অনেক ছিল। বর্তমানে যুদ্ধরত দেশ সিরিয়া, লেবানন, ইরাক, লিবিয়া মাথাপিছু আয়ের হিসাবে অনেক আগেই উন্নত। কিন্তু সেই রাষ্ট্রগুলো এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, কেবল মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা মানুষের পোশাক-আশাক রাস্তাঘাট, বাড়িগাড়ি অথবা খাওয়া-দাওয়া অর্থাৎ ভোগের আধিক্যভিত্তিক জীবনযাত্রার উন্নয়ন, যা টেকসই উন্নয়ন নয়, সাম্প্রতিককালে তা প্রমাণিত হয়েছে। মানবিক উন্নয়নের সামাজিক সূচক আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছিল। সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে, রাষ্ট্র কোনো ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে না, ধর্মীয় হানাহানি এবং বিভেদ থাকবে না - মুক্তিযুদ্ধের এসব চেতনা পরবর্তীকালে নাশ হয়ে যায়। ডলারের হিসাবে দারিদ্র্য হলেও আমরা মনোভাবের দিক থেকে চল্লিশের দশকেও এখনকার চেয়ে ধনী ছিলাম। এদেশে শিয়া এবং সুন্নিদের মধ্যে কোনো বিভেদ ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিককালে শিয়া এবং সুন্নিদের মধ্যে হানাহানি, সহিংসতা দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য, ইরান, ইরাকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিয়া এবং সুন্নিদের মধ্যে হানাহানি, সহিংসতা আছে। বাংলাদেশে সুন্নিদের সংখ্যা বেশি এবং শিয়াদের সংখ্যা কম। তারপরও কখনো শিয়া-সুন্নিদের মধ্যে হানাহানি দেখা যায়নি। এদেশে তাজিয়া মিছিল এবং শিয়া মসজিদে বোমা নিক্ষেপ এবং গুলি করে মুয়াজ্জিনকে হত্যা করা অতি সাম্প্রদায়িক বিষয়। অর্থাৎ একদিকে আমরা ডলারের হিসাবে ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হলাম, অন্যদিকে ধর্মীয় মৌলবাদী চিন্তা-চেতনা সম্প্রসারিত হলো- তাহলে আমাদের অবস্থাও ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ার মতোই হবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে দূরে সরে গিয়ে অসহিষ্ণু জাতিতে পরিণত হয়ে হানাহানিতে লিপ্ত হলে আমাদের প্রকৃত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে না। এজন্য আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানব সম্পদেরও উন্নয়ন করতে হবে। মানুষকে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে এমনভাবে শিক্ষিত করে তুলতে হবে যাতে তারা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন। এমনটিই হলো প্রকৃত মানবসম্পদ উন্নয়ন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানবিক মূল্যবোধের উন্নয়ন। এতে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মত মানবিক সম্পদের উন্নয়নও নিশ্চিত হবে। পড়ালেখা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানুষের মাঝে যদি সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি যেমন- শিয়া, সুন্নি, ইয়াজিদি, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ উগ্র ধর্মীয় মতাদর্শ এবং বিভেদ থাকে তাহলে আমরা আবার বিভ্রান্তিতে পড়ব। অর্থাৎ আমাদের উন্নয়ন টেকসই হবে না।সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতা থেকেই জঙ্গিবাদের সৃষ্টি। আমাদের দেশে বিভিন্ন নামে জঙ্গিবাদের আলামত স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আল-কায়দা এবং আইএস নামে যে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো আছে তারা সরাসরি বাংলাদেশে অবস্থান এবং নেটওয়ার্ক বিস্তার করছে কিনা- তা বলা যাবে না। আইএস এর লক্ষ্য হলো একটি ইসলামি খেলাফত কায়েম করা। তারা মনে করে এক সময় ইসলামের পতাকা সারা দুনিয়ায় উড়বে। এ লক্ষ্যে তারা সম্প্রসারণবাদী, আগ্রাসী মতাদর্শ নিয়ে এগোচ্ছে। একই মতাদর্শে বিশ্বাসী যারা পাকিস্তানের পক্ষে ছিল, পরে তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসা লোকগুলো এখনও পুরানো ধ্যান-ধারণা লালন করছে। অর্থাৎ তারা ধর্মীয় চিন্তা-চেতনার একটি জাতি এবং রাষ্ট্র গঠনে বিশ্বাসী। তারাই স্বাধীনতাবিরোধী এবং পরবর্তী পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল। বর্তমানে জামায়াতে ইসলাম নামে যে রাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে, ’৭২ এর সংবিধানে আইন করে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এসে বিভিন্ন দলকে রাজনীতি করার নামে আসলে জামায়াতকেই ফের প্রতিষ্ঠিত করেন। জামায়াতের আমির নাগরিকত্বহীন গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এমন একটি অবস্থা নিশ্চিত করা হয়, যা কোনোভাবেই আমাদের স্বাধীনতার মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আজকে বাংলাদেশে হিজবুত তাহরির থেকে শুরু করে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ, হরকাতুল জিহাদ এবং আনসারউল্লাহ বাংলা টিমসহ বিভিন্ন নামে ধর্মীয় সংগঠনের সাথে আল-কায়দা বা আইএসের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও আদর্শগতভাবে তারা একই এবং পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করার একটি প্রক্রিয়া তাদের আছে। সব দেশে আইএস নামে তারা কার্যক্রম চালাবে এমনটি নয়। তারা সহযোগী সংগঠন এবং ভাড়াটিয়া সংগঠন দিয়ে অপকর্মগুলো চালাতে পারে। সে দিক থেকে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনবল, প্রযুক্তি, পরিবহন ও বেতনভাতাসহ নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও জেএমবিসহ নানা জঙ্গি সংগঠন দমন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখছে -একথা স্বীকার করতেই হবে। তারপরও কেবল পুলিশি শক্তি, গোয়েন্দা অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জঙ্গিবাদ দমন করা যাবে না, এক্ষেত্রে মানবিক সম্পদ উন্নয়নে নজর দিতে হবে। সামাজিক কর্মসূচি যেমন, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বহুমুখি কর্মসূচি গ্রহণ আবশ্যক। মানুষ কেন জঙ্গি হচ্ছে? এর মূল কারণ কিন্তু সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বঞ্চনা। যারা আজ জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত হচ্ছে, তারা দরিদ্রের দরিদ্র। তারা অধ্যয়ন করতে গিয়ে আধুনিক শিক্ষা কারিকুলামের বাইরে বিপরীত কিছু শিখছে। এসব শিক্ষা কার্যক্রম তাদেরকে ধর্মীয়ভাবে একপেশে হতে শেখাচ্ছে।  নিজের মতাদর্শ শ্রেষ্ঠ অন্যেরটা নয়- এমন শিক্ষায় তারা অন্য ধর্মবিদ্বেষী হয়ে উঠছে। তাদের মধ্যে ধর্মবিশ্বাস এমনভাবে জাগ্রত করানো হয়েছে, যাতে তারা জিহাদের নামে মতাদর্শ জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য হত্যা থেকে শুরু করে নানা অপকর্মে জড়িত। এ কাজ করতে গিয়ে কেউ যদি আহত-নিহত হয়, তাতেও কিছু আসে যায় না। এই জঙ্গিবাদ উত্থানের বড় কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা। সমাজে অর্থনৈতিকসহ নানা কারণে একটি বঞ্চিত ও অবহেলিত শ্রেণি রয়েছে। এই বঞ্চিত শ্রেণিকে খুব সহজে ভয় এবং প্রলোভন দেখিয়ে বশ করা যায়। কারণ তাদেরকে বেহেস্তের লোভ দেখানো হয়। যারা নানা অভাব-অনটনের মধ্যে জীবন-যাপন করে তারা বেহেশতের আরাম আয়াশের লোভে সহজে এসব কাজে উদ্বুদ্ধ হয়। যে ব্যক্তি সুইসাইড করতে উদ্বুদ্ধ হয় তাকে ফেরানো দুনিয়ার কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে সম্ভব নয়।এক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে যে ত্রুটিগুলো আছে তা সংশোধন করতে হবে। আগে বেশ কয়েকটি শিক্ষা কমিশন এদেশে হয়েছে। সর্বশেষ ২০১০-এ একটি জাতীয় শিক্ষানীতি গৃহীত হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, স্বাধীনতার আগ থেকে আমরা বলে আসছি, শিক্ষা ব্যবস্থা হবে একমুখি। সবাইকে একই সিলেবাসে প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া হবে। তার মধ্যে অবশ্যই ধর্মীয় মূল্যবোধ থাকবে।  বিজ্ঞানভিত্তিক একটি শিক্ষা ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। সনাতন মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আবার আলীয়া, ক্বওমীসহ নানা ভাগ রয়েছে। ক্বওমী মাদ্রাসায় কী পড়ানো  হচ্ছে, পাঠ্যপুস্তকে কী থাকছে- সে বিষয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। মূল ধর্মগ্রন্থ ভিন্ন ভাষায় রচিত। মাতৃভাষায় অনুবাদ করার সময় যে যার মত করে ধর্মের ব্যাখ্যা প্রদান করছে। তার অধিকাংশই ভুল। বাজারে ধর্মের অপব্যাখ্যা বিষয়ক বিভিন্ন বই পাওয়া  যাচ্ছে। মৌলবাদী এবং জঙ্গিগোষ্ঠী হওয়ার জন্য যেসব উপকরণ দরকার তার সবই এসব অনুবাদিত ধর্র্মীয় গ্রন্থে আছে। সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মূল স্রোতধারা থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, তারা কিন্তু বাংলাদেশেরই লোক। আমরা বলছি- সকল ধর্মের লোক সমান অধিকার ভোগ করবে। কেবল তাই নয়, যারা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন না তাদেরও স্বাধীন জীবন-যাপনের অধিকার রয়েছে। ক্বওমী মাদ্রাসায় পড়া বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রতিও আমাদের দায়দায়িত্ব আছে। আমাদের দেশে পথশিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। বাবা-মা হারানোসহ নানা কারণে শিশুরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। এসব শিশুদের অধিকাংশেরই এতিমখানায় স্থান হয়। পাক-ভারত উপমহাদেশে এতিমখানাগুলো ঐতিহাসিকভাবে ধর্মীয় সংগঠনগুলোর দখলে। ধর্মীয় উগ্রবাদীদের লক্ষ্য থাকে এই এতিম শিশুদের সংগঠিত করে জঙ্গিবাদের কাজে লাগানো। মোট এতিমের ৯৯ শতাংশ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে আছে। এতিমরা আত্মহননের পথে বেশি ধাবিত হয়। কারণ অন্য কাউকে আত্মহননের মাধ্যমে বেহেস্ত প্রাপ্তির কথা বললে প্রথমে তার মাথায় জীবিত বাবা-মা ও ভাই-বোনদের কথা মনে পড়ে। এতিম শিশুদের রাষ্ট্র কর্তৃক আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা হলে জঙ্গিবাদ তথা মৌলবাদী সমস্যার একটি সমাধান হতে পারে। মানুষ সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে বঞ্চনাবোধ কমে আসবে। এছাড়াও একজন মানুষ যদি আর্থিকভাবে সচ্ছল হয় তাহলে তাকে কোনোভাবেই জঙ্গি সংগঠনের সাথে যুক্ত করা যাবে না। কাজেই পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য শিশুর শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত মানসম্মত জীবনযাপনের অধিকার সংরক্ষণ করা উচিত।মতাদর্শ জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার কারণেই ধর্মবিদ্বেষী, ধর্মবিরোধী এবং ধর্মহীন সংগঠনগুলো ব্যর্থ হয়েছে। ধর্মের নামে নতুন করে অস্ত্র নিয়ে সংগঠিত এসব ধর্মাশ্রয়ী জঙ্গিগোষ্ঠীর পরিণতিও ঠিক একই হবে। অথচ ইসলামি খেলাফতের স্বর্ণযুগের দিকে তাকালে দেখা যায়, অস্ত্র দিয়ে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সেসময় ইসলাম শিল্প, সাহিত্য, স্থাপত্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিসহ সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল। উদাহরণ হিসেবে মুসলমানদের আবিষ্কৃত এলজেবরা বিজ্ঞানের একটি বড় আবিষ্কার। আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রেও মুসলমানদের অবদান অপরিসীম। মুসলমানরা গ্রিকদের জ্ঞান আরবিতে ভাষান্তর করে এবং ইউরোপীয়রা সেটিকে আবার ইংরেজিতে রূপান্তরিত করে। পৃথিবীর সব ধর্মেই মৌলবাদী রয়েছে। আমাদের দেশে যেমন ব্লগার এবং প্রকাশক হত্যার শিকার হয়েছে, তেমনি ভারতে হিন্দু মৌলবাদী বা মুক্তমনাদের হত্যা করা হচ্ছে। বর্তমানে মুসলমানরা বিজ্ঞান থেকে বিচ্ছিন্ন। তারা আমেরিকান এম সিক্সটিন এবং বড় বড় ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু এই সব অস্ত্র তৈরি করার জন্য বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা তাদের নেই। তারা বিজ্ঞানকে দূরে ঠেলে দিয়ে অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে যারা খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে- তারা অন্ধকারের বাসিন্দা। তাদের সাথে ইসলামের সম্পর্ক নেই বিজ্ঞানের তো নেই-ই। তারা মতাদর্শ জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য অস্ত্র ব্যবহার করছে। একই ঘটনা আমরা- পঞ্চাশ ষাট বছর আগেও দেখেছি। মাওবাদী চরমপন্থীদের সাথে চীন এবং উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক ছিল। এখন যেমন আইএস, আল-কায়দাকে আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে। তেমনি মতাদর্শ এবং শ্রেণি শত্রু খতম করার জন্য রাতের বেলায় হত্যার উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়ানো এমন অনেক সংগঠন এই উপমহাদেশে ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কিছু অবৈজ্ঞানিক লোক বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের মাধ্যমে গণবাহিনী গঠন করে। কিন্তু এদের বৈজ্ঞানিক চেতনা বলতে কিছু ছিল না এবং লেখাপড়াও ছিল সীমিত। স্বাধীনতার পর দেখা যায়, গণবাহিনী, সর্বহারা তথা যে নামেই চিহ্নিত করা হোক না কেন এসব সংগঠন ছিল মানুষ মারার চরমপন্থা। সেই অবৈজ্ঞানিক লোকদের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েম করতে গিয়ে গণবাহিনী গঠন এবং পরবর্তী পর্যায়ে তার করুণ পরিণতি আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশে আশির দশক পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে এসব সংগঠন সক্রিয় ছিলো। মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য তারা ছিল চরম ধর্ম বিদ্বেষী এবং নাস্তিক। তারা বলত ধর্ম বলতে কিছু নেই। তাদের মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার জন্য হাজার হাজার মানুষ খুন হয়েছে। তারাও বিদেশ থেকে অস্ত্র পেত। এখনও ঝাড়খণ্ড এবং বিহারসহ কিছু অঞ্চলে নকশালবাদী এবং গুর্খা আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করে মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু এভাবে মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করা কখনই সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান এবং সাম্প্রতিককালে বিদেশী, শিয়া, লেখক, প্রকাশকদের উপর হামলার ঘটনাগুলো খুব হতাশাব্যঞ্জক। এগুলো একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে সামাজিক প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই। শিশু-কিশোর সংগঠন, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুবকদের জড়িত করতে হবে। মুক্তমনা হওয়ার জন্য মানুষের যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে সেগুলো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সামাজিক সংগঠনসমূহের শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।গ্রামেগঞ্জে সমাজপতিদের কথা মানুষ বেশি শোনে, তাদের বিশ্বাস করে এবং তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় এবং তৃণমূল নেতৃবৃন্দের মাঝে আদর্শ, দেশপ্রেমের এবং ভালো দৃষ্টিভঙ্গির সন্নিবেশ থাকতে হবে। তারা যদি রাজনীতিকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেন তাহলে তাদের কথা মানুষ শোনবে না। কারণ রাজনীতি করে সে নিজেই লাভবান হচ্ছে। সমাজে কিছু লোক রয়েছে- যারা মানুষের কল্যাণে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণসহ নানা সামাজিক সেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত। তাদেরকে মানুষ বিশ্বাস করে। কাজেই তাদেরকে খুঁজে বের করে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। মুক্তমানসিকতা, সহিষ্ণুতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তাদের মাধ্যমে প্রচার করা দরকার। গ্রামের বয়স্ক লোক আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি এবং চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে অবগত নন। তাদের বিশ্বাসের মূলে এখনও ধর্মীয় ও সামাজিক নেতাদের প্রভাব। এদের মুক্তমনা হওয়ার সুযোগ এখনও আমরা সৃষ্টি করতে পারিনি। আর সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হলো মসজিদ। নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাইকে বিভিন্ন ওয়াজ নছিয়ত শোনা যায়। যেগুলো অনেককেই জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। বেহেস্ত পাওয়ার জন্য আত্মঘাতী বোমা মারা- সম্পূর্ণরূপে কোরআনে নিষিদ্ধ। এসব কাজের মাধ্যমে বেহেস্ত পাওয়া তো দূরের কথা উল্টো সে দোজখে যাবে। একজন মানুষ হত্যা করা মানে সমস্ত মানব জাতিকে হত্যা করা। মদিনা সনদ এবং বিদায় হজের ভাষণে ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধা, সব ধরনের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত এবং নানাধর্মের মানুষদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামি জীবন বিধান সকল ধরনের সন্ত্রাসকে হারাম ঘোষণা করেছে। এসব কথা যদি মসজিদের ইমামরা খোৎবার সময় বলেন তাহলে মানুষ সচেতন হবে। এক্ষেত্রে মসজিদের ইমামদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করতে হবে। যাতে তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের মতো জাতীয় কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখতে পারেন।শিশু কিশোররা যে পরিবেশে বেড়ে উঠে তার উপর নির্ভর করে তারা ভবিষ্যতে কি হবে। জঙ্গিবাদ দমনের পদক্ষেপ হিসেবে তাদের বেড়ে উঠা নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা অংশ হিসেবে পুলিশ, র্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে নজরদারি করতেই হবে। যাতে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য আমাদের প্রচেষ্টা থাকতে হবে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো  জঙ্গি সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং আর্থিক লেনদেন রয়েছে। আর্থিক লেনদেন কিভাবে হয়, কোন্ কোন্ প্রতিষ্ঠান থেকে তারা সুবিধা পাচ্ছে, তা নির্ধারণ করতে হবে। এসমস্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা খুব জরুরি। মনে রাখতে হবে, সব কিছুর মূলে আর্থিক বিষয় জড়িত আছে।আমাদের এই দেশে রাজনীতিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে গিয়ে আমরা দেখলাম, কেউ কেউ বলে আমাদের বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি দোদুল্যমান অবস্থায় ভুগছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে কি হবে না। তাদের সুর ছিল-‘আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই তবে সেটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হতে হবে।’ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক লবিস্টরা যেভাবে কথা বলেছে, বিএনপিও ঠিক একইভাবে কথা বলেছে। এখন জানা গেল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যাতে না হয়, সেজন্য বিএনপি আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করার জন্য অর্থও ব্যয় করেছে।চরম বিরোধিতা এবং প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন  হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকর হয়েছে এবং বাকিদেরও হবে এমন অাশা করা যায়। নানা দিক থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। জাতির জনককে হত্যার পর আমাদের রাজনীতিতে আর একটি উপসর্গ ছিল সামরিকীকরণ। সে সময় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এমন পর্যায়ে ছিল, কোনো কিছু হলেই উত্তরপাড়া অর্থাৎ সেনাবাহিনীর কথা তোলা হত। ’৭৫ থেকে ’৯০ পর্যন্ত আমাদের রাজনীতি সেনাবাহিনী বেষ্ঠিত এবং সরাসরি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিলাম আমরা। এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য প্রধান পদক্ষেপটি শেখ হাসিনাই নিয়েছিলেন। একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম এবং অবস্থান ক্যান্টনমেন্টে হওয়ার কারণে মানুষের ধারণা ছিল, দেশের রাজনীতি ওই ক্যান্টনমেন্ট থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া সেনানিবাসেই বসবাস করতেন। সামরিক এবং বেসামরিক যে আদলেই হোক না কেন ক্ষমতার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল ক্যান্টনমেন্ট। এই সুবিধা বিএনপিই সবসময় নিয়েছে। শেখ হাসিনার যত অবদান আছে- তার মধ্যে বড় অবদান হলো ওই দলকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে আনা। এ ঘটনা আমাদের রাজনীতিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহের মধ্যে একটি। কিছু হলেই উত্তরপাড়ায় কি ঘটছে বা সেনাবাহিনীর প্রধান কে আছে, সাভারে জিওসি কে, এবিষয়ে এক সময় পানের দোকানদারও খবর রাখত। কিন্তু এখন এরকম আর সম্ভাবনা নেই। এটি একটি বড় পরিবর্তন।  ৫ জানুয়ারি নির্বাচন এবং এর আগে-পরে এমনকি ২০১৫ সালের শুরুতে সন্ত্রাসী আন্দোলনও সে ইঙ্গিত বহন করে। নিরপেক্ষ নির্বাচন আন্দোলনকারী জামায়াত-বিএনপি জোটের লক্ষ্য ছিল না। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করা- যাতে তাদের জন্মদাতাদের বংশধর কেউ ক্ষমতা দখল করে। এই অপচেষ্টা ব্যর্থ হওয়াও আমাদের রাজনীতিতে একটি বড় ঘটনা। এধরনের হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কাউকে ক্ষমতায় আনা সম্ভব নয়, এটিও একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য।আমরা অর্থনৈতিকভাবে এগোচ্ছি, কিন্তু সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়ছি। রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের চর্চা নিয়ে কাজ করতে হবে। নির্বাচনের ৬ মাস আগে থেকে আমরা চিন্তা করি, নির্বাচন কিভাবে হবে, নিরপেক্ষতাসহ নানা বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করি। কিন্তু আমাদের মূল যে সমস্যা, স্টেকহোল্ডার রাজনৈতিক দলগুলোর সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি না। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলই হলো প্রধান স্টেকহোল্ডার। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা কী, তা নিয়ে আলোচনা করা দরকার। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং হয় কিনা, হলেও কি সিদ্ধান্ত হয়- ইত্যাদি বিষয়ের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হতে পারত। চলতি বছরের(২০১৫) শুরুতে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি অবরোধ দেওয়া হয়েছিল, তা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। কেবল তাই নয় যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় হওয়ার পরও আমৃত্যু এই ব্যক্তি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিল। মরণোত্তর সদস্য পদ বহাল আছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি। বিএনপি’র ভাষায় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সাকা চৌধুরী ভূমিকা স্মরণীয় ছিল বললেও তার ফাঁসির মধ্য দিয়ে স্থায়ী কমিটির পদটি শূন্য হয়েছে এমন কথা বলেনি। যুদ্ধাপরাধীদের দলের সাথে থাকলে কী হয় বিএনপি তা জেনেও বের হয়ে আসতে পারেনি। এটি গেল বিএনপির অবস্থা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগ যেভাবে সংগঠিত হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। সহযোগী অনেক সংগঠনের কমিটি নেই। তৃণমূলের অবস্থাও খারাপ। পৌর নির্বাচন পরিচালনা কমিটি কিভাবে হবে তাও নির্ধারণ করা হয়নি। অথচ যদি প্রতিটি জেলায় কমিটি শক্তিশালী থাকত তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হত। অনেক জায়গায় জেলা কমিটি নেই, থাকলেও ১০/১২ বছরের পুরানো। কাজেই নানা সমস্যা ক্ষমতাসীন দলেও আছে। এই সমস্যা রাতারাতি সমাধান হবে না। আওয়ামী লীগও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে যেসব সহযোগী সংগঠন রয়েছে, এর বাইরে নৌকার সমর্থক গোষ্ঠী, ওলামা লীগ, প্রজন্ম লীগসহ নানা নামে সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠনের কোন কোনটি সংগঠন নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে এবং গণমাধ্যমেই কাভারেজ পাচ্ছে। যেমন ওলামা লীগ নামে কোনো সংগঠন আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে নেই। এই ওলামা লীগ আবার দুই তিন ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ বলছে, অন্যরা জঙ্গি সংগঠন এবং বোমা হামলার সাথে জড়িত। জনবিচ্ছিন্ন কতকগুলো ফটকাবাজ লোক এরকম প্রায় ৫০টি সংগঠনের নামে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ব্যানার, ফেস্টুন টাঙায় এবং মাইক ভাড়া করে বক্তৃতা দেয়। সেখানে আওয়ামী লীগের লোকজনকেও দেখা যায়। কাজেই এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ থেকে স্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া উচিত, এই সব সংগঠনের সাথে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এদের কোনো কর্মকাণ্ডের দায়ভার আওয়ামী লীগ নেবে না।আমাদের দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে চলবে। আর এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ চালাতে গিয়ে কেবল আওয়ামী লীগকেই সব সময় ক্ষমতায় থাকতে হবে- আমি তা বিশ্বাস করি না। যেকোনো একটি দল সব সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকবে কখনো বিরোধী দল হবে না- বিষয়টি এমনও নয়। এর মানে হলো যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে, তখনই কেবল দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলবে আর অপর কোনো দল ক্ষমতায় এলে দেশ পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করবে- তা হতে দেওয়া যায় না। অর্থাৎ আমাদের ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দল যেই হোক না কেন তারা হবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আজীবন ক্ষমতায় থাকবে না। অন্য দলও ক্ষমতায় আসবে। আমাদের মূল সমস্যা হলো, দেশের অন্যান্য উন্নয়নের সাথে রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একাধিক রাজনৈতিক দল থাকা খুব জরুরি। এতে অর্থনৈতিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক থাকবে। অর্থাৎ সামাজিক, শিক্ষা, সামরিকসহ নানা খাতের নীতি ও পরিচালনা নিয়ে ধনাত্মক সমালোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হয়নি। একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে, আওয়ামী লীগ সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে কেবল ততদিন মুক্তিযদ্ধের চেতনা থাকবে। কোনো কারণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে পাকিস্তানি চেতনা ফিরে আসবে। নির্বাচন এলেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আলোচনা, টকশোসহ নানা কর্মসূচি থেকে বুদ্ধিজীবীদের বেরিয়ে আসতে হবে। এর পরিবর্তে বুদ্ধিজীবীদের মূল এজেন্ডা যেমন- রাজনৈতিক দল, নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের দুর্বলতা দূরীকরণ এবং  দ্রুত বিচার কার্যক্রম শেষ করা, পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করার জন্য কি ফর্মুলা নেওয়া যেতে পারে, এসবে মনোযোগ দিতে হবে। তাহলে জাতি এগিয়ে যাবে।বিজয় দিবসের প্রাক্কালে আমার বক্তব্য হলো, অর্থনৈতিকভাবে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, শত চেষ্টা করলেও তা প্রতিহত করা যাবে না। আমাদের অর্থনৈতিক সূচক এমন সক্রিয়, তাতে কেউ না চাইলেও দেশ এগিয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যার জায়গাটি হলো, দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সে তুলনায় আমরা যদি সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকি, তাহলে এক পর্যায়ে দেশ মুখ থুবড়ে পড়বে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেমন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে খুব চিন্তা করে কাজ করতে হবে। যাতে উভয়ের মধ্যে একটি সামঞ্জস্য থাকে। কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নই আমাদের কাম্য হতে পারে না। যদি সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন একতালে অগ্রসর হয় তাহলে আমরা ২০৪১ সালের আগেই জাতির জনকের স্বপ্ন- সুখী, সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব এবং সেটাই কেবল টেকসই হবে, মাথাপিছু ডলারের হিসাবে উন্নয়ন টেকসই হবে না।লেখক : উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়এইচআর/বিএ

Advertisement