বিশেষ প্রতিবেদন

এবারের ‘ডিজিটাল হাটে’ চারগুণ বেশি পশু বিক্রি

পবিত্র ঈদুল আজহায় হাট ঘুরে পছন্দের পশু কেনা চিরায়ত এক ঐতিহ্য। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে পশুর হাটে লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে খামার থেকেই লাখো পশু বিক্রি করছেন ব্যাপারীরা। ঘরে বসে পছন্দের পশু কিনতে পারছেন ক্রেতারা। আধুনিক এই ব্যবস্থাপনার নাম ‘ডিজিটাল হাট’।

Advertisement

২০২০ সালের ঈদুল আজহার সময় দেশে ডিজিটাল হাটের আনুষ্ঠানিক বিকাশ ঘটে। ডিজিটাল হাট বাস্তবায়ন করেছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব) এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)। এবারের ঈদুল আজহা ঘিরে (জুলাইয়ে) এ হাটের আরও বিস্তৃতি ঘটে। ব্যবস্থাপনায় সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয়, সংস্থা, ব্যাংক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়। এতে ডিজিটাল পশুর হাটে মানুষের আস্থা তৈরি হয়। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার চারগুণের বেশি পশু বিক্রি হয়। আগামীতে এ হাটের আরও প্রসার ঘটবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ডিজিটাল হাটগত ২১ জুলাই ঈদুল আজহা উদযাপিত হয় দেশে। কোরবানির এ ঈদ ঘিরে গত ৪ জুলাই এক লাখ পশু অনলাইনে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঢাকায় যাত্রা শুরু হয় ডিজিটাল কোরবানি হাটের। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তত্ত্বাবধানে এই হাট বাস্তবায়ন করেছে ইক্যাব এবং বিডিএফএ। এই প্ল্যাটফর্মে সারাদেশের এক হাজার ৮৪৩টি অনলাইন হাট যুক্ত হয়। ঈদের আগ দিন পর্যন্ত তারা তিন লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৮টি পশু বিক্রি করেছে। এর মধ্যে গরু ও মহিষ বিক্রি হয়েছে দুই লাখ ৯৬ হাজার ৭১০টি এবং ছাগল ও ভেড়া ৯০ হাজার ৮৬৯টি। পশুগুলোর মোট মূল্য দাঁড়ায় দুই হাজার ৭৩৫ কোটি ১১ লাখ ১৫ হাজার ৬৭৮ টাকা।

ইক্যাব সূত্র জানায়, এবার ডিজিটাল হাটে পশু বিক্রির পাশাপাশি স্লটারিং সেবাও (জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াকরণ) চালু করেছিল তারা। এ পদ্ধতিতে ২৬৫টি পশু স্লটারিং করে যথাসময়ে ক্রেতার বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য পশু ক্রেতাদের বাসায় সরাসরি ডেলিভারি করা হয়েছে। ৮০ শতাংশ পশু ঈদের একদিন আগে ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ পশুর ডেলিভারি সম্পন্ন হয় ঈদের আগের দিন। এভাবে গত বছর ঈদুল আজহার সময় তাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ৮৭ হাজার পশু অনলাইনে বিক্রি হয়েছিল।

ইক্যাব সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, আমাদের প্ল্যাটফর্মে সারাদেশের এক হাজার ৮৪৩টি অনলাইন হাট থেকে তিন লাখ ৮৭ হাজার পশু বিক্রি হয়েছে। এতে প্রান্তিক কৃষক ও খামারিরা যেমন লাভবান হয়েছেন, তেমনি ন্যায্যমূল্যে পশু কিনতে পেরেছেন ক্রেতারা। ডিজিটাল কোরবানির হাট করোনাকালীন চাপে থাকা গ্রামীণ অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও প্রাণের সঞ্চার করেছে।

Advertisement

গত জুনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ১৩টি হাট ইজারা দেয় ডিএনসিসি। কিন্তু জুলাইয়ে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় হাটের সংখ্যা কমিয়ে আনে সংস্থাটি। তখন ডিজিটাল হাট ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, করোনার কারণে এবার অনলাইনে পশু বিক্রি প্রাধান্য পেয়েছে। এছাড়া সরকারি সেবাগুলো দিন দিন আধুনিক হচ্ছে এবং সেটির সুফল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। প্রযুক্তির সুবিধায় সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে বদলে দেওয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। এবার ডিজিটাল হাট মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। আগামী বছরও ঈদুল আজহায় ডিজিটাল পশুর হাট আয়োজন করা হবে।

দেশব্যাপী ডিজিটাল হাটঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল হাট উদ্বোধনের পর দেশব্যাপী ডিজিটাল হাট চালুর উদ্যোগ নেয় সরকার। পরে ১৩ জুলাই ভার্চুয়ালি ‘দেশব্যাপী ডিজিটাল হাট’র উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ঈদুল আজহার আগে প্রস্তুতিমূলক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই বৈঠকে বিদ্যমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অন্যান্য সিটি করপোরেশন, পৌরসভাগুলোতে ডিজিটাল হাট বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী সারাদেশে অনলাইনে গবাদিপশু বিক্রি হয়েছিল।

Advertisement

ইক্যাবের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর আলম শোভন জাগো নিউজকে বলেন, ডিজিটাল গরুর হাট সবার জন্যই উন্মুক্ত একটা প্ল্যাটফর্ম। বিডিএফএর অধীনে দেশব্যাপী অনেক উদ্যোক্তা রয়েছেন। এ প্রান্তিক খামারিদের আমরা যুক্ত করছি। এখানে লেনদেন পদ্ধতি খুবই স্বচ্ছ, প্রতারণার সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে এ হাটের আরও প্রসার ঘটবে।

এমএমএ/এইচএ/জিকেএস