সাহিত্য

ফাত্তাহ তানভীর রানার দুটি অনুগল্প

১. স্কুলের ম্যাডাম

Advertisement

মফিজ তার জীবনে দেরিতে লেখাপড়া শুরু করেছিল। স্কুলে তার বন্ধুরা তার চেয়ে অনেক ছোট ছিল। সঙ্গত কারণেই বন্ধুদের চেয়ে মফিজ একটু ইঁচড়েপাকা ছিল। মফিজদের স্কুলে শিক্ষক হিসেবে পুরুষের পাশাপাশি নারীও ছিলেন।

একদিন ইংরেজি ক্লাসে লাবণী ম্যাডাম একটি বাক্য বলে ট্রান্সলেট করতে বললেন। ‘আমার বমি বমি ভাব হচ্ছে’—এ বাক্যের ইংরেজি করতে হবে। ম্যাডাম বললেন, ‘কে প্রথম বলবে?’

বাক্যটি শুনেই মফিজ বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ইংলিশ রাখেন ম্যাডাম, আগে মিষ্টি খাওয়ান!’ মফিজের কথা শুনেই ম্যাডাম লাল হয়ে গেলেন! মফিজ খেয়াল করল, কিছুক্ষণের মধ্যেই ম্যাডাম ক্লাস ছাড়লেন।

Advertisement

মফিজের হাসি আর দেখে কে? কিছু বন্ধুসহ মফিজ উল্লাস করতে লাগল। মফিজের বন্ধুরা বলল, ‘মফিজ তুই পারিস মামা!’ এক বন্ধু বলল, ‘আচ্ছা, ম্যাডাম কি বিয়ে করেছেন?’ আরেকজন বলল, ‘আমাদের পাড়ায় ম্যাডামের বাড়ি। ম্যাডাম কবে বিয়ে করলেন, জানি না; মনে হয় বিয়ে হয়নি।’

উল্লাসরত বন্ধুসহ মফিজ এখন মহা চিন্তায় পড়ে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাবণী ম্যাডাম বেত হাতে ক্লাসে ঢুকলেন। প্রথম মফিজকে দিয়েই শুরু! এই ঝড়ে মফিজের বন্ধুরাও বাদ গেল না।

ম্যাডাম লাল হয়েছিলেন বটে। কিন্তু এই লাল লজ্জায় না রাগে তা মফিজ বুঝে ওঠেনি। ম্যাডাম মফিজকে বললেন, ‘মফিজ, তুই কোথায় কী বলতে হবে এখনও শিখিসনি। আজ তোকে শেখাবো।’ মফিজ কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘জীবনে কি কিছু শেখার শেষ আছে ম্যাডাম?’

২. ইনকাম ট্যাক্স

Advertisement

মফিজের আয় খুব বেশি নয়, যা ট্যাক্স আয়ের সারিতে পড়বে না। মফিজের খুব ইচ্ছা হলো ইনকাম ট্যাক্স পেয়ার হবে। কী করা যায় বলুন তো? অনেক নামি-দামি মানুষ ট্যাক্স অফিসে এসে ইনকাম ট্যাক্স দিয়ে যান। আসেন গাড়িতে করে, আবার সঙ্গে লোকজনও থাকে। দেখে খুব ভালো লাগে মফিজের।

মফিজের গাড়ি বা লোক কিছুই নেই। তবুও শখ আর কি! মফিজ দেশের সম্মানিত করদাতা হবে। এখন কী করা যায়? সে শুনলো আয়কর মেলা বা সপ্তাহ চলছে, সিদ্ধান্ত নিলো সেখানে যাওয়ার। মফিজের ব্যস্ততা আর স্বভাবের কারণে মফিজ শেষের দিন গেল ট্যাক্স সপ্তাহের। ট্যাক্স সপ্তাহে কে যায়, কেন যায় এবং কী করে মফিজ কিছুই জানে না; তবুও মফিজ গেল।

মফিজ জানতে পারলো, প্রথমে টিআইএন নম্বর খুলতে হবে। মফিজ এ নম্বর খোলার জন্য ফরম ফিলআপ করে দিলো এবং জানতে পারলো, এ নম্বর খোলা হবে ৩ ঘণ্টা পর! হায়! হায়! এখন মফিজের অফিসের কী হবে? যা-ই হোক, মফিজকে ইনকাম ট্যাক্স পে-হোল্ডার হতেই হবে।

৩ ঘণ্টা দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল। মাঝখানে খাবারের জন্য মফিজের কিছু টাকা নষ্ট হলো। মেলা বা কর সপ্তাহের প্রতি মফিজের আগ্রহ ছিল, মেলায় গেলে না কি কিছু উপহার পাওয়া যায়। এরপর দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসার পর মফিজ জানতে পারলো, অনলাইনে চাপের কারণে আজ মফিজের টিআইএন নম্বর খোলা হবে না!

টিআইএন নম্বর খোলা না হলে ট্যাক্স রিটার্ন ফর্ম ফিলআপ করে কী করবে? আবার ফরম ফিলআপ না করে তো আর মফিজ রিটার্ন জমা দিতে পারবে না! রিটার্ন ফরম পূরণ করেই বা লাভ কি? জমা তো আর আজ দেওয়া যাবে না।

‘হায় রে মফিজ! তোর দিনটাই নষ্ট হলো, অফিসেও গেলি না; আবার ট্যাক্সের কোনো কাজও করতে পারলি না।’ মনে মনে বলল মফিজ।

এসইউ/জিকেএস