নাফিসা কামাল। এই নামেই যেন দেশ-বিদেশে পরিচিতি বাড়ছে তার। এক সময় বাবা পরিকল্পনামন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামালের (লোটাস কামাল) হাত ধরে যার ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যাওয়া সেই নাফিসা এখন রীতিমতো ইতিহাস সৃষ্টি করে ক্রিকেটপ্রেমীদের চমকে দিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) খেলায় নবাগত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের যাত্রার শুরুতে ফাইনালে উন্নীত হয়ে যাওয়ার গৌরব অর্জন করেছে তার দল। আজ সন্ধ্যায় বরিশাল বুলসের বিপক্ষে ফাইনাল খেলছে নাফিসা কামালের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের খেলাকে কেন্দ্র করে পুরো কুমিল্লা জুড়েই এখন উৎসবের আমেজ। জেলা সদর থেকে শুরু করে কুমিল্লার গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায়ও আজকের ফাইনাল খেলা নিয়ে যেন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। দুপুর থেকে নগরীতে বের করা হয়েছে আনন্দ মিছিল। সকাল থেকে নগরীর খেলাধুলা সামগ্রীর দোকানগুলোতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জার্সি বিক্রি হয়েছে দেদারসে। সর্বত্র মাইকে বাজানো হচ্ছে ভিক্টোরিয়ান্সের থিম সংগীত ‘কে আছে আমাদের সামনে দাঁড়াবে, জেগেছি আমরা এবার --------- মারোরে ছক্কা, মারোরে চার`। ভিক্টোরিয়ান্সের সফলতা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক বদরুল হুদা জেনু জাগো নিউজকে জানান, নাফিসা কামালের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কারণেই আজ দেশ বিদেশে কুমিল্লার পরিচিতি বেড়েছে, আমরা ইনশাল্লাহ বিজয়ী হবোই। কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরান জাগো নিউজকে বলেন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স কুমিল্লাকে গর্বিত করেছে। বিপিএলে প্রথম দল হিসেবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স যে চমক দেখিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। গত ১৪ নভেম্বর রাতে কুমিল্লা স্টেডিয়ামে কনসার্টে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের থিম সঙ্গীতে মাতোয়ারা হয়েছিলেন কুমিল্লার ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে এর আগে গত ২২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ১১টার দিকে রাজধানীর ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের ‘প্লেয়ার বাই চয়েজ’ অনুষ্ঠানে কিছুটা হতাশ ছিলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নাফিসা কামাল। লটারিতে খেলোয়াড় নির্বাচনের জন্য ছয়টি দলের মধ্যে কুমিল্লা বারবার সুযোগ পাচ্ছিল ৪ বা ৫ নম্বরে। ফলে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে দেশের নামিদামি পছন্দের খেলোয়াড় হাতছাড়া হয়ে যায় কুমিল্লার। তারপরও ‘এ’ ক্যাটাগরির তিনজন খেলোয়াড় নিজেদের দলে ভিড়াতে পেরেছে বিপিএলে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি নেয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আর লটারিতে বারবার পিছিয়ে গেলেও ছয়জন আইকন খেলোয়াড়ের লটারিতে ২ নম্বরে ডাকার সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তুজাকে দলে নিয়ে অনেকটা হাসি নিয়েই ঘরে ফিরেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের চেয়ারম্যান নাফিসা কামাল। যদিও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপটা ছিলই তার মধ্যে। তবে খেলোয়ার নিয়ে আপেক্ষ যাই থাক না কেন নাফিসার ভিক্টোরিয়ান্সকে নিয়ে আরও অনেক দূর যাবেন এমন ইচ্ছার কথা তিনি নিজেই কুমিল্লার কনসার্টে বলেছিলেন। আইসিসি এবং বিসিবির সাবেক প্রেসিডেন্ট বাবা আ.হ.ম মুস্তফা কামালের হাত ধরে ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করা নাফিসা কামাল তার দলের খেলোয়াড় নিয়ে দলকে আরও শক্তিশালী করতে নানা পরিকল্পনার কথাও কুমিল্লায় জানিয়েছিলেন। টুর্নামেন্টে বেশ দাপটের সঙ্গে খেলে ফাইনালে স্থান করে নিয়েছে মাশরাফির নেতৃত্বাধীন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। প্রথম কোয়ালিফায়ারে সাকিব আল হাসানের শক্তিশালী রংপুর রাইডার্সকে পরাজিত করে সবার আগে ঠাঁই করে নিয়েছে ফাইনালে। তবে ফাইনালে উঠার পর তাই দলের এ সাফল্যে যারপরনাই খুশি ফ্রাঞ্চাইজির মালিক পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের কন্যা নাফিসা কামাল। আনন্দে তাই দলের জন্য বোনাস ঘোষণা করেছেন তিনি। জানিয়ে দিয়েছেন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স চ্যাম্পিয়ন হলে বোনাস তো থাকবেই, সেইসঙ্গে সব খেলোয়াড়কে বিদেশ সফরে নিয়ে যাওয়া হবে। দলের এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে খুশি নাফিসা কামাল নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে লিখেছেন, `আমি আশাবাদী, আমার দল চ্যাম্পিয়ন হবে। ফাইনালে উঠে শিরোপা জিততে না পারলে অপূর্ণতা থেকে যাবে। দলের খেলোয়াড়রা এখন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছেন। এটা আমাদের জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট।` অপর একটি পোস্টেই তিনি বোনাসের ঘোষণা দেন। নাফিসা কামাল লিখেছেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই খেলোয়াড়দের শতভাগ পারিশ্রমিক দিয়ে ফেলেছি। যদি আমরা চ্যাম্পিয়ন হই তাহলে বোনাসতো দেয়া হবেই, সেই সঙ্গে দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে বিদেশ সফরেও নিয়ে যাওয়া হবে।’ এমজেড/আরআইপি
Advertisement