প্রজাপতি একটি অমেরুদণ্ড প্রাণী। শুধু সৌন্দর্যে নয়; উদ্ভিদের ফুল ফসলের পরাগায়ণ ঘটিয়ে ফসলেরও উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে প্রাণীটি। পৃথিবীজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে এই প্রাণিকুল। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রাণিকুল সংরক্ষণ এবং মানুষের নির্মল বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হয় পার্ক।
Advertisement
প্রজাপতির জন্য বিশ্বের আছে বিশেষ পার্ক। এর মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পার্ক ‘বাটারফ্লাই ওয়ার্ল্ড’ আমেরিকার ফ্লোরিডায় অবস্থিত। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ না থাকলেও চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি রোডে প্রায় ৬ একর জমির উপর অবস্থিত একটি প্রজাপতি পার্ক আছে। ধারণা করা হয়, এই পার্কটিই ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম প্রজাপতি পার্ক।
এবার জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের তানজিম পল্লীতে প্রায় ৫ একর জমির মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে প্রজাপতি পার্ক। যার উদ্যোক্তা মুনসুর নগর ইউনিয়নের ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: হাসমত আলী।
বর্তমানে তার এই পার্কে প্রায় ৩০ প্রজাতির কয়েকশত প্রজাপতি আছে। যাদের সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত ৬০ ফিট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফিট প্রস্থ এবং ২০ ফিট উচ্চতার একটি নেট দিয়ে ঘেরা আবাসস্থল তৈরি করা হয়েছে। প্রজাপতির পছন্দের বিভিন্ন ধরনের গাছপালা যেমন- রঙ্গন, মুসেন্ডা, নয়ন তারা, মাধবীলতা, কামিনী, কসমস, লজ্জাবতী, কদম আছে।
Advertisement
সেইসঙ্গে এরিকা পাম লিচু, ঝুমকোলতা, আশশেওড়া, ল্যান্টেনা, কলকাসুন্দা, লেবু, গাঁদাফুল, ভেরেন্টা, আমগাছ, আঙ্গুর লতাসহ অর্ধশতাধিক গাছপালা তিনি প্রজাপতির হোস্ট প্লান্ট হিসেবে রোপন করেছেন। যা দেখতে প্রতিদিনই বহু দূরদূরান্ত থেকে ভীড় করছে দর্শনার্থীরা।
২০২০ সালের ৬ আগস্ট পার্কটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন। পরবর্তীতে ২৬ ডিসেম্বর শুভ উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো: মুরাদ হাসান (এমপি)।
উদ্যোক্তা হাসমত আলী জানান, তার বসতভিটা সংলগ্ন একটি ফুলের বাগান ছিল। সেখানে থাকা দোলনায় মাঝে মাঝেই তিনি বসে বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতেন। আর সে সময়ই দেখতেন প্রজাপতি এসে ভিড় করছে।
তিনি বলেন, ‘তখন আমি তন্ময় হয়ে দেখতাম আর ভাবতাম প্রজাপতিগুলো যদি সবসময়ের জন্য এখানে রাখতে পারতাম। এ চিন্তা থেকেই প্রজাপতির জীবনাচরণ সম্পর্কে ধারণা নিতে গিয়ে জানতে পারলাম, পৃথিবীজুড়ে প্রায় ২০ হাজার প্রজাতির প্রজাপতি আছে। বাংলাদেশে যার সংখ্যা মাত্র ৩০০। যাদের সংরক্ষণ ও দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য আছে পার্ক। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম বসতভিটায় আমিও একটি প্রজাপতি পার্ক তৈরি করবো।’
Advertisement
এরপর তিনি যোগাযোগ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তার দিকনির্দেশনায় পার্কের কাজ শুরু করেন হাসমত আলী। পরবর্তীতে যোগাযোগ করেন প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল বাশারের সঙ্গে।
সেইসঙ্গে যোগাযোগ করেন বাংলাদেশের প্রথম প্রজাপতি গবেষক ও প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সফিক হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে। তাদের সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে এই পার্ক। এই পার্ক উদ্যোক্তা আরও জানান, প্রজাপতি সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে তা প্রকৃতির মাঝে উন্মুক্ত করে দেয়া হবে, যাতে উদ্ভিদের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা পালন করতে পারে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘প্রজাপতি প্রথমে ডিম দেয়, ডিম দেয়ার পরে লার্ভা থেকে পিউপা এরপর পূর্নাঙ্গ প্রজাপতিতে পরিনত হয়। যত্রতত্র কীটনাশকের ব্যবহার ও অবাধ বিচরণে বাঁধা প্রদান করায় এদের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট এবং প্রজাপতি মারাও যাচ্ছে।’
তিনি হাসমত আলীর উদ্যোগে খুশি হয়ে বলেন, ‘তিনি প্রজাপতির বিচরণ এবং বংশ বৃদ্ধির জন্য যে প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন, তা প্রজাপতির বংশ বৃদ্ধির সহায়ক হবে। ফুল ফসলের পরাগায়ণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তার সব ধরনের সহযোগিতায় কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক সহায়তা প্রদান করবে।
জেএমএস/এএসএম