বিতর্ককে যেন প্রচারের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল। কলকাতার ‘সারেগামাপা’ থেকে উঠে আসা আলোচিত-সমালোচিত এ গায়ক সম্প্রতি আবারও বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
Advertisement
গত বুধবার (২৫ আগস্ট) নিজের ফেসবুক পেজে একটি ছবি প্রকাশ করেছেন। তাতে দেখা যায়, দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের নাফাকুম জলপ্রপাতের পাশে এক নারীর সঙ্গে বসে এক ধরনের নেশাদ্রব্য গ্রহণ করছেন।
নোবেল ছবিটির ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘গাঁজার নৌকা পাহাড়তলী যায় ও মিরাবই...’।
এটি একটি গানের কথা হলেও নোবেলের স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদের ধারণা, নোবেল গাঁজা খাওয়ার ছবি পোস্ট করেছেন। আর তাই ছবিটিকে ইঙ্গিত করে তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
Advertisement
সালসাবিল ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। লজ্জিত এ রকম একটা দেশে জন্মগ্রহণ করে। অনুগ্রহপূর্বক বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী যেন আজ থেকে কোনো নেশাগ্রস্ত স্টুডেন্ট বা ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার না করে অথবা শাস্তি না দেয়।
আমাদের দেশের ইনফ্লুয়েন্সাররা যেখানে নিজেদের নেশাগ্রস্ত ছবি আপলোড করে এটাকে একটি ট্রেন্ডে পরিণত করেছে এবং বাংলাদেশ প্রশাসন এ বিষয়ে কিছু করতে অক্ষম, সেখানে অন্য জনগণকে নেশা এবং মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত বিষয়ে হেনস্তা করার অধিকার বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী আর রাখে না।’
সালসাবিল লেখেন, ‘এমন একটি দেশে জন্মগ্রহণ করে সত্যি আমি লজ্জিত, যে দেশে নারী নির্যাতন ছেলে মানুষের পুরুষত্ব প্রমাণের মাপকাঠি। এমনকি যে দেশে একজন স্বামীর কাছে স্ত্রী নিরাপদ না। গোপনে ধারণকৃত পারসোনাল মোমেন্টের ভিডিও দিয়ে স্ত্রীকে খুব সহজেই ব্ল্যাকমেইল করে রাখা যায় এবং তা সম্পর্কে বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইমও অবহিত।’
নোবেলের স্ত্রী আরও লিখেছেন, ‘যে দেশে সম্মানিত ব্যক্তিগণ কিছু সাময়িক ফেইম অর্জন করা মানুষদের কোনোরকম চেকিং ছাড়াই এয়ারপোর্ট ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা করে দেয় এবং তারা নিজেদের ইচ্ছামতো ড্রাগস বাংলাদেশে নিয়ে আসে, সে দেশে পরিমণি কেন গ্রেফতার হবে? যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির চোখে আমার এ স্ট্যাটাস পড়ে দয়া করে উত্তর দিয়ে যাবেন।’
Advertisement
এদিকে বান্দরবানে গিয়ে বেপরোয়া নোবেল আরও অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। বান্দরবানে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অস্বাভাবিকভাবে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয়দের সঙ্গে তিনি দুর্ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার এমন আচরণে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নোবেল বুধবার রাতে এক নারীসহ বান্দরবান সদরের ৩ নম্বর এলাকার থানচি স্টেশনের পাশে আবাসিক হোটেল গার্ডেন সিটিতে ওঠেন। বৃহস্পতিবার সকালে হোটেল থেকে বের হয়ে তিনি বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় নেশা করে ঘুরে বেড়ান এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১২টায় মদ পান করে হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষে এসে চিৎকার ও চেঁচামেচি শুরু করেন নোবেল। এ সময় হোটেলের এক বর্ডারের গোয়ে হাত তুলেন তিনি। বাধ্য হয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডাকে।
হোটেল গার্ডেন সিটির মালিক মো. জাফর বলেন, ‘নোবেলের কাণ্ড দেখে আমরা পুলিশকে খবর দিই। পরে পুলিশ এসে রাত ৩টা পর্যন্ত তাকে বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। তিনি শিল্পী তাই তাকে আমি পছন্দের একটি রুম দিয়েছি। কিন্তু খুবই অসভ্য আচরণ করেছেন।
এমনকি তিনি তথ্য গোপন করে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একজন নারীকে নিয়ে হোটেলে উঠেছেন। পরের দিন তাকে নিজের বোন বলে দাবি করেছেন।’
এ বিষয়ে বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী গণমাধ্যমের কাছে বলেন, ‘আমরা কর্তৃপক্ষের আহ্বানে হোটেলে যাই। তাকে ভোররাত পর্যন্ত বুঝিয়ে শান্ত করেছি।’
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে নিজের ফেসবুক পেজ ‘নোবেল ম্যান’ থেকে দেশের স্বনামধন্য একাধিক শিল্পীকে নিয়ে মানহানিকর স্ট্যাটাস দেন নোবেল। তার স্ত্রীকে নিয়ে মিথ্যা গুজব লিখে সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেন এ গায়ক।
এছাড়াও গায়ক, সুরকার, গীতিকার ‘ইথুন বাবু চোর, অন্যের গান নিজের নামে চালায় দিসে’। এ ঘটনায় গত ২৩ মে নোবেলের বিরুদ্ধে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ইথুন বাবু। এরপর তিনি নোবেলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মামলা করেন।
এমআই/এলএ/এএসএম