দেশজুড়ে

রাস্তা নয় যেন ‘মরণ ফাঁদ’, প্রতিদিনই উল্টে যাচ্ছে গাড়ি

শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের নাম সাভারের বিশ মাইল-জিরাবো সড়ক। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি বড় বড় খানাখন্দে ভরা। সামান্য বৃষ্টি নামলেই তলিয়ে যায় রাস্তা। মাঝেমধ্যেই এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে উল্টে যাচ্ছে রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা। আটকে পড়ছে প্রাইভেটকার ও মালবাহী কাভার্ডভ্যান। শিল্প এলাকা হওয়ায় কয়েক লাখ লোক প্রতিদিন দুর্ভোগকে সঙ্গী করে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করলেও সড়কটি মেরামতে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

Advertisement

সরেজমিনে বিশ মাইল-জিরাবো সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সড়কটির আমতলা এলাকা থেকেই বড় বড় গর্তের শুরু হয়েছে। এসব গর্তে পানি জমে থাকায় নিজের অজান্তেই অনেকে সেখানে পড়ে আহত হচ্ছেন। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জামা কাপড়সহ সঙ্গে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র। এরপর থেকে পুরো সড়কজুড়েই একই অবস্থা। সড়কটির কাঠগড়া বাজার, পুকুরপাড়, জিরাবোসহ অন্তত ১৫-২০ জায়গায় একইরকম বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। কোথাও কোথাও সড়কের মাঝখানে বিপদজনক স্থানে বাঁশ দিয়ে চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এছাড়া ব্যস্ততম সড়কটির ভাঙা জায়গায় একপাশ থেকে গাড়ি আসলে অন্যপাশের গাড়িকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ সময় সৃষ্ট যানজট ও খানাখন্দে জমে থাকা জলজটের কারণে কর্মজীবী লোকজন সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে পারেন না।

অন্যদিকে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ময়লা-আবর্জনায় সড়কটি একাকার হয়ে যায়। এসব পানি আর ময়লা মারিয়ে প্রতিনিয়ত পেটের তাগিদে কারখানায় আসা যাওয়া করছেন তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।

কুটুরিয়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট শফিক দেওয়ান অভিযোগ করে বলেন, সড়কটির দুইপাশে বড় বড় কলকারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় এটি নিচু হয়ে গেছে। ফলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় তা দ্রুত নষ্ট হয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চরম ভোগান্তি নিয়ে জনগণ চলাচল করলেও জনপ্রতিনিধি কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে দুর্ভোগ লাঘবে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

Advertisement

জিরাবো পুকুরপাড় গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, রাস্তার যে অবস্থা তাতে আমাদের লজ্জা লাগে যে আমরা সরকারি দল করি। প্রতিদিন মানুষ কী পরিমাণ কষ্ট করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষ আমাদের রাস্তা নিয়ে লজ্জা দেয় যে তোমাদের এমপি, চেয়ারম্যান কী করে? কাকে বলি এই কথা।

আজমত গ্রুপের সুইং অপারেটর নুর আলম বলেন, কাঠগড়া বাজারের সামনে সড়কে গর্তের কারণে সেদিন একটি অটোরিকশা উল্টে যায়। গাড়িটিতে এক শিশু ও নারীসহ অন্য যাত্রীরা ছিল। দুর্ঘটনায় এক নারীর পা ভেঙে যাওয়ায় অন্যরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার সঙ্গে থাকা শিশু বাচ্চাটিও পানিতে পড়ে যায় এবং কাদা দিয়ে সারা শরীর মেখে যায়। তাকেও উদ্ধার করে আমরা হাসপাতালে পৌঁছে দেই। এভাবে প্রতিদিনই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে অটোরিকশা উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, আমতলা এলাকার বড় গর্তের মধ্যে মাঝেমধ্যেই ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ বড় গাড়িগুলো আটকে যাচ্ছে। যে কারণে এই সড়কটিতে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। আমরাও অনেক কষ্ট করে অফিসে যাতায়াত করি। ভাঙা সড়কের কারণে অনেক সময় অটো না পাওয়ায় কাদা পানিতে হেঁটে আসতে গিয়ে অফিসে দেরি হয়ে যায়।

আমতলা মার্কেটের মুদি দোকানী লাল চাঁন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি খারাপ হওয়ায় দুর্ভোগ নিয়ে মানুষ চলাচল করছে। গাড়িগুলো সড়কে আটকে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কের বেহাল দশার কারণে লোকজন দোকানে আসতে না পারায় ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। সরকার যদি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে রাস্তাটি ঠিক করে দেয় তাহলে আমাদের অনেক উপকার হবে।

Advertisement

পোশাক শ্রমিক জিয়াউর রহমান বলেন, আগে ১০ মিনিট সময় নিয়ে বাসা থেকে অফিসে আসতে পারতাম। এখন রাস্তার কারণে বেশি সময় নিয়েও অফিসে সময়মতো আসতে পারি না। একই কথা জানালেন অপর শ্রমিক শাহাদাত হোসেনও। তিনি বলেন, দুপুরে খাবার জন্য যে সময় দেওয়া হয় তখন অটো না পাওয়ার কারণে কারখানায় পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। এছাড়া অফিস ছুটি হলে নারী-পুরুষ সবাই একযোগে বের হয়, তখন ভিড়ের কারণে রাস্তায় থাকা গর্তে পড়ে গিয়ে আহত হয় অনেকেই।

আশুলিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিশমাইল-জিরাবো সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়ত লোকজন আমাদের গালিগালাজ করে। সড়কটি এলজিইডির তত্বাবধানে থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের সামান্য অর্থায়নে এত বড় রাস্তায় কিছুই করা সম্ভব না। এরপরও আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজের নির্বাচনী এলাকায় কিছু ইট ফেলেছি। তার পরেও আর কিছু ইট ফেলতে চেয়েছিলাম কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী সময় দিয়েছে যে কাজ শুরু হবে তাই আমি আর ইট ফেলিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ শাহাব উদ্দিন বলেন, প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক জুড়েই খানাখন্দের কারণে আমি কয়েকবার রাবিশ ফেললেও তেমন কোনো কাজে আসেনি। তবে উপজেলা প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানিয়ে বারবার সড়কটি মেরামতের জন্য তাগিদ দেয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে সাভার উপজেলা পরিষদের প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামাণিক বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সড়কটিতে বেহাল দশার কারণে জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে সড়কটি মেরামতের জন্য ৯ কোটি টাকার একটি এস্টিমেট (চাহিদাপত্র) করে জেলা অফিসে ফাইল পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমতি এবং অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলেই খুব দ্রুত সড়কটি মেরামত করা হবে।

আল-মামুন/এমআরআর/এএসএম