কৃষি ও প্রকৃতি

বীজহীন লেবু চাষে লাখোপতি শহিদুল

বীজহীন (সিডলেস) লেবু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন ফরিদপুরের বোয়ালমারীর শহিদুল ইসলাম। উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বর্নিচর গ্রামের শহিদুল ইসলামের বীজহীন লেবুর বাগান দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন মানুষ। অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। প্রস্তুতি নিচ্ছেন বীজহীন লেবুর চাষ করতে।

Advertisement

বেশি ফলন, রস বেশি আর চাহিদার কারণে বীজহীন লেবুতে লাভ বেশি হওয়ায় অনেকেই অন্য ফসলের আবাদ ছেড়ে এ লেবু চাষের দিকে ঝুঁকছেন। বীজহীন লেবু চাষ করে মাত্র ৩ বছরেই লাখপতি হয়েছেন বোয়ালমারীর শহিদুল ইসলাম।

সফল লেবু চাষি শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৯ সালে দেড় একর জমি নিয়ে ওই জমিতে ৮০০টি বীজহীন লেবুর কলমকৃত চারা রোপণ করি। চারা কেনা, চারা রোপণ, জমি প্রস্তুত, জমি তৈরি, সেচ ও সারসহ বিবিধ খরচ মিলিয়ে প্রথম বছর তার প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা ব্যয় হয়।

পরের বছরেই ওইসব লেবু গাছে লেবুর ফলন শুরু হয়। এরপরের বছর বেশ চাহিদা ও দাম পাওয়ায় প্রায় এক লাখ টাকার লেবু বিক্রি করি। ২০২১ সালে প্রায় আড়াই লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছি।

Advertisement

শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, এবছর লেবুর দাম কম থাকায় মাত্র আড়াই লাখ টাকার লেবু বিক্রি হয়েছে, দাম বেশি পেলে ৩ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করতে পারতেন। তিনি সপ্তাহে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেন।

ফলে তার মাসিক আয় প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এ হিসাবমতে তার ১৫০ শতাংশ জমি থেকে বছরে আয় হয় ৩ লাখ ৬০ হাজার থেকে ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। যা অন্য কোনো কৃষি আবাদে সহজলভ্য নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেকার যুবক শহিদুলের লেবু চাষে সাফল্য দেখতে, পরামর্শ নিতে প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসছেন। অনেকেই এ বীজহীন লেবুর বাগান করার কথা চিন্তা-ভাবনাও করছেন। অনেকেই ছোট পরিসরে শুরু করেছেন এর চাষ।

রোপণের বছর বাদে প্রতি বছর একবার ডালপালা ছাঁটা, মাটি কোপানো, প্রতি ৩ মাসে একবার নিড়ানি ও ২-৩ মাস অন্তর সেচ ও সামান্য জৈব সার দিতে হয়।

Advertisement

ফলে একর প্রতি বার্ষিক খরচ হয় মাত্র ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। আর এক একর জমির লেবুতে আয় হয় কমপক্ষে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা। তাছাড়া নিজের উৎপাদিত কলম চারা দিয়ে ফিরতি বছর নতুন বাগান তৈরি করা ছাড়াও প্রতিটি কলম করা চারা ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে বিক্রি করা সম্ভব।

স্থানীয় ময়না ইউনিয়নের বাসিন্দা, স্কুল শিক্ষক মুকুল কুমার বোস জানান, এটি অল্প পুঁজিতে ভালো একটি চাষাবাদ ও লাভজনক। শহিদুলের এ লেবু চাষের সফলতা দেখে অনেকেই লেবু চাষে আগ্রহ হয়ে উঠেছেন।

বোয়ালমারী উপজেলার শিল্পকলা একাডেমির সদস্য, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব খান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন জানান, এ লেবু চাষে শহিদুলের সফলতা শুনে বাগান দেখে এসেছি। নিজেও স্বল্প পরিসরে এর আবাদ শুরুর চিন্তা করছি।

এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মৃণাল বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, বীজহীন লেবু সারা বছর ফলন দেয়। এ লেবু অধিক ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ প্রচুর রস ও সুঘ্রাণ যুক্ত।

বর্তমানে মানুষের কাছে হাইব্রিড জাতের এ বীজহীন লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আরেক সুবিধা হচ্ছে একবার এ লেবুর চারা রোপণ করলে একাধারে ১২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত এ জাতের লেবু গাছে ফলন দেয়। তিনি আরও জানান, এ লেবু চাষে যদি কেউ এগিয়ে আসতে চায় তাহলে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

এন কে বি নয়ন/এমএমএফ/এমএস