সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েও রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানা খুলে না দেওয়ায় অসংখ্য দর্শনার্থীর মধ্যে কারও কারও মন খারাপ হয়েছে। দীর্ঘদিন লকডাউনে ঘরবন্দি থাকার কারণে চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করেছিলেন অনেকে। কেউ কেউ পূর্বঘোষিত তারিখ হিসেবে গত ১৮ আগস্ট সেখানে গিয়ে চিড়িয়াখানা বন্ধ পেয়ে ঘুরেও এসেছেন। জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ থেকে চিড়িয়াখানায় আগত দর্শনার্থী ও প্রাণীদের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে একটু সময় নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তবে দর্শনার্থীদের অপেক্ষার প্রহর খুব শিগগির শেষ হচ্ছে।
Advertisement
ঘোষণা দিয়ে চিড়িয়াখানা না খোলায় দর্শনার্থীদের মন খারাপ হলেও তাদের জন্য চিড়িয়াখানায় অপেক্ষা করছে নতুন নতুন চমক। পরিষ্কার ঝকঝকে সবুজ নির্মল পরিবেশে দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানার বিভিন্ন শেডে নতুন নতুন প্রাণীর বাচ্চা দেখে আনন্দিত হবেন। হাতিদের ফুটবল খেলা আবালবৃদ্ধবনিতাকে নির্মল আনন্দে ভাসাবে।
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতিফ জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, লকডাউন চলাকালে নিরিবিলি পরিবেশে প্রাণীরা খুব ফুরফুরে মেজাজে ছিল। খাবারের মান ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা ভালো ছিল সেই বিবেচনায় বেশ কিছু প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা বেড়ে যায়।
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতিফ
Advertisement
তিনি জানান, গত কয়েকমাসে চিড়িয়াখানায় বেশ কিছু প্রাণী বাচ্চা প্রসব করেছে। এগুলোর মধ্যে দুটি বাঘের শাবক, একটি জলহস্তীর, দুটি জেব্রা, তিনটি আফ্রিকান ঘোড়া, ইমপালা বাচ্চা প্রসব করেছে। এছাড়া ১৩০টির মতো ময়ূরের বাচ্চা (বয়স সাড়ে চারমাস থেকে পাঁচমাস), ইমু পাখীর ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রজনন হয়েছে চিত্রা হরিণের। চিড়িয়াখানার তিনটি শেডে ১৭০টি চিত্রা হরিণের ধারণ ক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে সাড়ে তিনশ’র বেশি চিত্রা হরিণ রয়েছে। তিনি উৎসাহী খামারি, শিল্পপতি ও রিসোর্টের মালিকদের চিড়িয়াখানা থেকে এক জোড়া চিত্রা হরিণ ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকায় কেনার আহ্বান জানান।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ৫১টি হরিণ বিক্রি করে ৩৬ লাখ টাকা সরকারের আয় হয়। এছাড়া মহামারি করোনাকালে চিড়িয়াখানার হাতির পার্কের পাঁচটি হাতির মধ্যে সুন্দরি ও রাজা বাহাদুর নামে দুটি হাতিকে ফুটবল খেলায় বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে পারদর্শী করে তোলা হয়েছে। আগত দর্শনার্থীরা এসে তাদের ফুটবল খেলা দেখে নির্মল আনন্দ পাবেন। ফুটবলের পাশাপাশি হাতিদেরকে বাস্কেটবল খেলায়ও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে হাতিদের বাস্কেট বলও খেলতে দেখা যাবে।
ডা. মো. আবদুল লতিফ জানালেন, জাতীয় চিড়িয়াখানা অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রের চেয়ে আলাদা। এখানে জীবন্ত প্রাণী রয়েছে যাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। একটি আক্রান্ত হলে তা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে একবার ঘোষণা দিলেও সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় খুলে দেওয়া হয়নি। তবে বর্তমানে তাদের সব প্রস্তুতি শেষ।
তিনি জানান, চিড়িয়াখানায় খুলে দেওয়ার পর করোনা স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালিত হবে। নো মাস্ক নো এন্ট্রি, নো মাস্ক, নো টিকিট এ স্লোগানে দর্শনার্থীদের প্রবেশ গেটে তিন ফিট দূরত্বে একটি লাল বৃত্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। সবাইকে মাস্ক পরে প্রবেশ করে ভেতরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘোরাফেরা করতে হবে।
Advertisement
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক জানান, চিড়িয়াখানার বিভিন্ন স্থানে দর্শনার্থীদের জন্য ১২টি স্থানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও পানির ব্যবস্থা করা হবে। ভেতরে দর্শনার্থীদের জন্য একমুখী রাস্তা তৈরি করা হবে। বিধিনিষেধ মানতে সার্বক্ষণিক মাইকিং করে সর্তক করা হবে। প্রাণীদের সামনে আরও নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। অনেক স্থানে ময়লা জমে গেছে, সেগুলো পরিচ্ছন্ন করা হবে। এছাড়া প্রাণীদের শেডগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। চিড়িয়াখানায় আগত মুসল্লিদের জন্য নামাজের ব্যবস্থাও থাকবে।
কবে নাগাদ জাতীয় চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে জানতে চাইলে পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, আমাদের এখানে সাধারণ সময়ে প্রতিদিন ১০-১২ হাজার দর্শনার্থী আসেন। ছুটির দিনে ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। প্রস্তুতি নিয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে।
এছাড়া চিড়িয়াখানা খুলে দেওয়ার পর করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী বৃদ্ধ ও শিশুদের চিড়িয়াখানায় না আনার আহবান জানান তিনি।
বুধবার (২৫ আগস্ট) সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, বন্ধ থাকা চিড়িয়াখানার সর্বত্র সুনসান নীরবতা। ঝির ঝির বাতাসের ধ্বনি, কান পাতলেই শোনা যায় পাখির কলরব। চিত্রা হরিণের শেডে দেখা যায়- মনের সুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে হরিণের দল। কয়েকটি হরিণ সবুজ ঘাস চিবিয়ে খাচ্ছে। সম্প্রতি জন্ম নেওয়া বাঘের দুটি বাচ্চা কখনো মায়ের বুকে আবার কখনো নিজে নিজে শেডের চারপাশে হেঁটে বেড়াচ্ছে।
জিরাফের শেডের সামনে গিয়ে দেখা যায়, চিড়িয়াখানার একজন কর্মচারী কলা হাতে প্রিন্স ও ক্লিওপেট্রা নাম ধরে ডাকতেই দুটি জিরাফ এগিয়ে আসে। তাদের মুখের সামনে কলা দিতেই তারা মুখে টেনে নিচ্ছে। একই ব্যক্তি উট পাখির শেডের সামনে দাঁড়াতেই উটপাখি ছুটে আসে। গণ্ডার ও জলহস্তীকেও নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।
এমইউ/এমআরআর/জেআইএম