লেনদেন, বেচাকেনা ও ঋণ পরিশোধে একে অপরের প্রতি কঠোর না হয়ে সহজতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ আমল। সমাজ জীবনে চলতে গেলে পারস্পরিক লেনদেন ও প্রয়োজনে ঋণ আদান-প্রদান করতে হয়। এসব লেনদেন ও ঋণের পরিশোধে সহজতার সুযোগ দেওয়া গোনাহ মাফের অন্যতম উপায়। এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্বনবি। কী সেই দিকনির্দেশনা?
Advertisement
সমাজ জীবনে মানুষ সাধারণত লেনদেন-বেচাকেনা ও ঋণ আদান-প্রদান করে থাকে। এসবের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না হলে উভয়কেই দুঃখ, হতাশা ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এ কারণে এসব কাজে জড়িতদের সহজতার সুযোগ দেওয়া বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত ও গোনাহ মাফের কারণও বটে। সহজতা বা ছাড় দেওয়ার বিষয়গুলো হবে এমন-
কেনাবেচায় সহজতা
ক্রেতাকে ভালো পণ্য দেওয়ার চেষ্টা করা। ক্রেতার প্রয়োজন বিবেচনা করে বিক্রেতার উচিত, সাশ্রয়ী দামে পণ্য বিক্রি করা। আবার ক্রেতার উচিত হলো- কথামতো মূল্য পরিশোধ করা। এতে কোনো টালবাহানা না করা। বিক্রেতা যাতে পণ্য বিক্রিতে লাভ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখাও ক্রেতার দায়িত্ব। এক কথায় ক্রেতা-বিক্রেতা একে অপরের সুবিধার দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি।
Advertisement
ঋণ পরিশোধে সহজতা
ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়াও জরুরি। যেমন কেউ প্রয়োজনে ঋণ নিলে নির্ধারিত সময়ে তা পরিশোধ করে দেওয়া আবশ্যক। আবার কেউ ঋণ নেওয়ার পর সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে ঋণদাতার উচিত হবে তাকে সময় দেওয়া; ঋণ পরিশোধের বিষয়টি সহজ করে দেওয়া। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ওজর গ্রহণ করে তাকে সুযোগ দেওয়া।
আবার ঋণগ্রহীতার উচিত হলো- ঋণ পরিশোধে ইচ্ছাকৃত গড়িমসি না করা। ঋণ পরিশোধের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখা। ঋণদাতার সঙ্গে ভালো আচরণ করা। ওজর-আপত্তি না থাকলে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া।
গোনাহ মুক্তির ঘোষণা
Advertisement
এভাবে লেনদেন-বেচা-কেনা-ঋণ আদান-প্রদানে সহজতা অবলম্বন করলে মহান আল্লাহ সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত সবার গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। যেভাবে তিনি আগের উম্মতের এক ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। হাদিসে এসেছে-
غَفَرَ اللهُ لِرَجُلٍ كَانَ مِنْ قَبْلِكُمْ، كَانَ سَهْلًا إِذَا بَاعَ، سَهْلًا إِذَا اشْتَرَى، سَهْلًا إِذَا قَضَى، سَهْلًا إِذَا اقْتَضَى.
আল্লাহ তাআলা আগের উম্মতদের এক ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন; কারণ-
১. সে (লেনদেন)-এ তথা বেচাকেনার সময় সহজতা অবলম্বন করতো।
২. ঋণ আদায়ের সময় সহজতা অবলম্বন করতো।
৩. অন্যের কাছে ঋণ পরিশোধের ব্যাপারেও সহজতা অবলম্বন করতো।’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি, বায়হাকি)
মুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, লেনদেন, বেচাকেনা ও ঋণ পরিশোধে সহজতা অবলম্বন করা। পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা। আর তাতে গোনাহ থেকে উভয়ের মুক্তি সহজ হবে। লেনদেন, বেচাকেনা ও ঋণ আদান-প্রদানে সহজতার জন্য আল্লাহর কাছে এভাবে বেশি বেশি দোয়া করা-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আঝযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল ঝুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজুবিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিঝালি।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আশ্রয় চাই, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে আশ্রয় চাই এবং ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লেনদেন, বেচাকেনা ও ঋণ আদান-প্রদানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। গোনাহমুক্ত জীবন পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস