বিনোদন

সিফাত এখন অপরাজিতা

‘আসলে আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবান। দীপ্ত টেলিভিশনের অপরাজিতা সিরিয়ালের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি। এমন একটি চরিত্রের জন্য নির্বাচিত হওয়াটা সত্যি অসাধারণ। সিরিয়ালটি প্রচারের পর থেকে খুব সাড়া পাচ্ছি। সবাই তো আমায় এখন অপরাজিতাই ডাকে। যদিও সেখানে আমার চরিত্রের নাম মন্দিরা!’ মিষ্টি করে হাসতে হাসতে বললেন মডেল অভিনেত্রী নাইরুজ সিফাত।দীপ্ত টিভির নিয়মিত শিল্পীদের একজন তিনি। টেলিভিশনটিতে প্রচার হওয়া ওপার বাংলার প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর উপন্যাস ‘বালুচারী’ অবলম্বনে টিভি ধারাবাহিক ‘অপরাজিতা’র মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। এটি মূলত হার না মানা এক নারীর গল্প।  এখানে আসার গল্প বলতে গিয়ে সিফাত বলেন, ‘এর আগে প্রায় ১৮-২০টি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হলেও অভিনয় শুরুর জন্য ঠিকঠাক একটা প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলাম। ইস্ট ওয়েস্ট থেকে বিবিএ শেষ হতে না হতেই গত বছরের অক্টোবর মাসে এই সুবর্ণ সুযোগটা চলে আসে।’ অপরাজিতায় অভিনয়ের জন্য বরাবরই চ্যালেঞ্জ ছিল সিফাতের জন্য।  শুধু পর্দায়ই নয়, পর্দার পেছনেও চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে তাকে। চারবার অডিশন দিতে হয়েছে। ৫৭ জন প্রতিযোগীকে টপকে চরিত্রটি পেয়েছেন। বিলম্ব করতে হয়েছে এমবিএ ভর্তিরও। নির্বাচক টিম লেখাপড়ার স্ট্যাটাস দেখে প্রশ্ন করেন, লেখাপড়া নাকি অভিনয়? এমবিএতে ভর্তি হলে তো সিরিয়ালটা করা সম্ভব হবে না। কারণ এখানে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। গ্রুমিং হোক আর শুটিং হোক, যথাসময়ে সেটে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। পড়াশোনাকেই ছাড় দিতে রাজি হলেন। এ রকম সুযোগ কে হারায়!সে ছাড়ে আজ কতোটা তৃপ্ত? এমন প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে সিফাত বলেন, ‘শতভাগ। আমি যে বাজিটা ধরতে চেয়েছি নিজের সাথে তাতে আমি জয় পেয়েছি। স্বপ্নটাকে প্রতিষ্ঠা করাই তো মানুষের লক্ষ। তাই না?অপরাজিতার কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে সিফাত বলেন, ‘এক বছর টানা শুটিং হয়েছে। যারা দীপ্ত টিভির পরিচালনা টিমে আছেন তারা বেশ আন্তরিক। প্রথম অভিনয়, ছোটখাটো ভুল তো হয়েছেই। অসুস্থ ছিলাম, উপেক্ষা করেও শুটিং করেছি। ছোট একটা অ্যাকসিডেন্টে পায়ে ফ্যাকচার ছিল তিন মাস। পা প্লাস্টার অবস্থাতেও সেই তিন মাস শুটিং করেছি। যত কষ্টই হোক চাচ্ছি দর্শকদের ভালো কিছু উপহার দিতে।’‘অপরাজিতা’ সিরিয়ালে নিজের চরিত্র সম্পর্কে সিফাত বলেন, ‘এখানে আমার চরিত্রের নাম মন্দিরা। শান্ত, সহজ-সরল একটি মেয়ে। কিন্তু যে কোন কাজে খুব অধ্যাবসায়ী। প্রতিনিয়ত ভালো কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখে। আশপাশের মানুষদেরও নিজের আপন ভাবে। কিন্তু প্রতিবারই নিয়তি তার সাথে বেঈমানি করেন। পদে পদে বাঁধা বিপত্তির সম্মুখীন হয় সে। কিন্তু দমে না সে। এগিয়ে যায় এবং সবশেষে মন্দিরা সফল হয়। এভাবেই এগিয়ে যায় অপরাজিতায় মন্দিরার চরিত্রটি।’ভারতীয় সিরিয়াল উপেক্ষা করে দেশি দর্শকদের মনে কতটা জায়গা তৈরি করতে পারবে এ সিরিয়াল? প্রশ্ন শুনেই সিফাতের মুখে খই ফুটতে শুরু করলো! তিনি বলে চলেন, ‘নিয়মিত টিভি দর্শকরা ভারতীয় সিরিয়ালই দেখেন। বিশেষ উৎসব কিংবা উপলক্ষ হলে দুই একটা নাটক বা টেলিফিল্ম দেখার জন্য কেউ কেউ হয়তো দেশীয় টিভিতে চোখ রাখেন। তাদের ব্যাপারটা ভিন্ন। আমাদের সিরিয়ালটা যারা নিয়মিত টিভি দেখেন তাদের জন্য। সিরিয়াল যখন দেখতে চান তবে দেশিটাই দেখুন। এখানে নিজের সংস্কৃতি আছে, ঘর আছে, আপন মানুষ আছে। ভারতীয় সিরিয়ালগুলোর মতো দাম্পত্য কলহের তীব্রতা নেই।’তবে বাস্তবের সিফাত আর পর্দার মন্দিরার মধ্যে বিরাট ফারাক। পর্দায় গম্ভীর মেয়ে সে কিন্তু বাস্তবে নন মোটেও। হাসিঠাট্টা করে আড্ডা মাতাতে সে ওস্তাদ। সিফাতের বাবা এ কে এম নুরুল আলম তালুকদার বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার। তবে তিনিও ছিলেন নাটকের মানুষ।  মুক্তিযুদ্ধের পর বিটিভিতে প্রচারিত প্রথম নাটকে অভিনয় করেছেন। তৎকালীন সময়ে বিটিভির প্রথম সারির তালিকাভুক্ত অভিনয়শিল্পী ছিলেন সিফাতের বাবা।জানালেন, ছোট বেলায় সিফাত ছিলেন অনেকটা কুটনি বুড়ি! আয়নার সামনে বারবার নিজে নিজে অভিনয় করতেন আর লজ্জায় রাঙা হয়ে যেতেন। তবে সে সময় মনে প্রাণে চেয়েছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত নৃত্য শিল্পী হবেন। কিন্তু অপরাজিতা সিরিয়ালে কাজের সুযোগ পেয়ে সিফাতের চিন্তার পরিবর্তন আসে। এখন তিনি অভিনয়ের প্রেমে পড়েছেন আর অভিনয়েই থিতু হতে চান। অভিনয়ের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সবসময় সমর্থন পেয়েছেন সিফাত। বললেন, ‘তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে আমি মেঝ। পরিবারের সবাই আমাকে খুব আদর করে। আমার কাজকে তারা সম্মান করে। ভাল-খারাপ কাজের সমাচলনাটা প্রথমে ফ্যামিলি থেকেই আসে।’আগামীতে সিফাতের ইচ্ছে আছে চলচ্চিত্রে কাজ করার। তবে গতানুগতিক ছবিতে নয়। বললেন, চলচ্চিত্র অনেক বড় শিল্প। এখানে জেনে বুঝে না আসলে হোঁচট খেতে হবে নিশ্চিত। অনেকেই আসে কিন্তু কদিন পর লাপাত্তা! আমি সেই দলে ভিড়তে চাই না। সৃজনশীল আর মৌলিক গল্পের ছবিতে কাজের ইচ্ছেটা বেশি আছে। এর মাধ্যমে ভালো অভিনয়ের সুযোগ থাকে। সুযোগ হলে ‘মনপুরা’, জালালের গল্প’ এর মত ছবি পেলে লুফে নেবো। এনই/এলএ

Advertisement