জাতীয়

সংক্রমণ-মৃত্যু হ্রাসে আত্মতৃপ্তি হতে পারে বিপদের কারণ!

রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা কমেছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন আগের মতো করোনা রোগীর ভিড় নেই। অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে স্বজনদের দৌড়ঝাঁপও কমে গেছে।

Advertisement

গত কয়েকদিন ধরে অব্যাহতভাবে সংক্রমণ ও মৃত্যু হ্রাসের খবর স্বস্তিদায়ক হলেও লকডাউন উঠে যাওয়ার পর মাস্ক পরিধানসহ করোনা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে অধিকাংশ মানুষের মধ্যে অনীহা দেখা যাচ্ছে। আর তাতে করে ফের সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার আশঙ্কা ও ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টানা এক মাসেরও অধিক সময়ের জন্য জারি করা বিধিনিষেধের সময় সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত ও কলকারখানাসহ গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুফল হিসেবে ধীরে ধীরে সংক্রমণ ও মৃত্যু সংখ্যা কমেছে।

তারা বলছেন, মাসখানেক আগেও দৈনিক ১৬ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত ও আড়াইশ জনেরও বেশি মৃত্যুর রেকর্ড হয়। তবে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় (২৪ আগস্ট) দৈনিক ১১৪ জনের মৃত্যু এবং নতুন রোগী শনাক্ত হন ৫ হাজার ২৪৯ জন। এতে করে সহজেই বোঝা যায় যে, দেশে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত কমে এসেছে। কিন্তু সংক্রমণ ও মৃত্যু হ্রাসে মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ঢিলেঢালাভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে আপাতভাবে সংক্রমণ ও মৃত্যু নিম্নমুখী হলেও আবার তা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

Advertisement

গত ১১ আগস্ট সরকার লকডাউন শিথিল করার পর সারাদেশে অফিস-আদালত, গণপরিবহন, ছোট-বড় মার্কেট-শপিংমল ও বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র পর্যায়ক্রমে খুলতে শুরু করেছে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন লাখো মানুষ রাস্তাঘাটে চলাচল করছে।

স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউনের সুফল ধরে রাখতে হলে ঘরের বাইরে মানুষকে মাস্ক পরিধান, ঘন ঘন সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া, নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলার মতো বিষয়গুলো শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারের চলমান টিকাদান কর্মসূচিতে নিবন্ধন করে টিকা নিতে হবে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পারলে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। কিন্তু যতদিন পর্যন্ত তা না হয়, ততদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই প্রতিরোধের সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা।

বুধবার (২৫ আগস্ট) সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা আগের তুলনায় অনেক কম। অনেকেই মুখে মাস্ক পরিধান না করেই অবাধে চলাফেরা করছেন। দলবদ্ধ হয়ে আড্ডায় মাতছেন। মুখে মাস্ক থাকলেও অনেকেই সেটির সঠিক ব্যবহার করছেন না। কেউ মাস্ক নাকের নিচে নামিয়ে রাখছেন, কেউবা ঝুলিয়ে রাখছেন কানের পাশে।

Advertisement

এছাড়া গণপরিবহনগুলোতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখার কড়া নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবতা পুরোই ভিন্ন। অধিকাংশ গাড়ির হেলপার ও ড্রাইভার মাস্ক সঠিকভাবে পরছেন না। চরম উদাসীনতা রয়েছে যাত্রীদের মধ্যেও। মার্কেট কিংবা শপিংমলগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতারা মাস্ক না পরেই পণ্যের দরদাম ও বেচাকেনা করছেন।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, লকডাউনের ফলে সংক্রমণ কমলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে আবার তা বৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।তিনি করোনা সংক্রমণ রোধে শতভাগ মানুষকে মাস্ক পরিধানের পরামর্শ দেন।

এমইউ/এমআরআর/এমকেএইচ