ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে চিনির কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। বুধবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার পরিস্থিতি সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানো হয়।
Advertisement
গত মে মাসের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১২৯ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৫৩, পাম সুপার তেল ১১২ এবং ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের দাম ৭২৮ টাকা।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের বাজারে চিনির দাম বাড়ছে। গত এক মাসে খুচরা বাজারে চিনির দাম অন্তত ১২ শতাংশ বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সফিকুজ্জামান বলেন, চিনির খুচরা মূল্য আপাতত ৭৫ থেকে ৮০ টাকার মধ্যেই থাকবে বলে আলোচনা হয়েছে।
Advertisement
বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছি। এটি ছিল বছরের প্রথম বৈঠক, তাই ওইভাবে কোনো সিদ্ধান্তের কথা বলা যাচ্ছে না। আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা করার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। উনারাও আমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়।
আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ভোজ্যতেলের দাম আগে যেটা নির্ধারণ করা হয়েছিল সেটাই থাকবে। আগস্ট মাস শোকের মাস বিবেচনায় এ মাসেই নতুন করে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ালেও সেটা পরে বিবেচনা করা হবে।
অতিরিক্ত বাণিজ্য সচিব বলেন, আমাদের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই, সরবরাহ যথেষ্ট আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের যে বার্ষিক চাহিদা তার থেকেও বেশি সরবরাহ আছে। কিন্তু যেহেতু অনেকগুলো পণ্য আমদানিনির্ভর, তাই আমদানি মূল্য বৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে যাতে স্থানীয়ভাবে মূল্যবৃদ্ধি ও মজুত করা না করা হয় সে উদ্দেশ্যে আজ আমরা ব্যবসায়ী নেতাদের ডেকেছি। সবখাতের ব্যবসায়ীরা এখানে এসেছেন। তারা আজকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমদানি মূল্য যেটা বাড়বে সেই অনুযায়ী হিসাব করে যতটুকু বৃদ্ধি অভ্যন্তরীণ বাজারে হওয়া উচিত সেটুকুই তারা করবেন।
Advertisement
এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা জেলা ও উপজেলা কমিটির ক্ষেত্র বিস্তৃত করব। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবে টিসিবির অপারেশন গত বছরের তুলনায় আড়াইগুণ বৃদ্ধি করেছি এবং টিসিবি আরও কয়েকটি পণ্য বিক্রি করছে এবং আগামী মাস থেকে পেঁয়াজসহ আরও পণ্য বিক্রি শুরু হবে। আমরা সেখানেও আমদানি করছি। চালের বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয় দেখছে। ইতোমধ্যে কিন্তু চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। ২৫ শতাংশ ট্যাক্স কমানো হয়েছে। সাত লাখ টনের বেশি আমরা অনুমতি দিয়েছি, আশা করি চালের বাজারে দাম কমে আসবে। ভোজ্যতেল এবং চিনির বিষয়ে আলোচনা করেছি। এই দুটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে, বাকিগুলো কমে গেছে। এটা আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে, সেটার রিফলেকশন হবে, তবে সেটা বাজারের নিয়মেই হবে। তার বেশি যাতে না হয় ব্যবসায়ীরা সেটার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে কেউ যদি অন্যায়ভাবে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের কষ্ট দেন বা অতি মুনাফা করেন, মজুত করে রাখেন সে ক্ষেত্রে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মোবাইল কোর্ট, ভোক্তা অধিকার কমিশনসহ যারা আছেন তারাও সর্বত্র সতর্ক থাকবেন। করোনাকালে মানুষের প্রশান্তির জন্য যা যা করা দরকার সে ব্যবস্থা নেবেন। সরকার এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বয় আমরা যদি সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে পারি তাহলে আমাদের যেহেতু সরবরাহে ঘাটতি নেই, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আছে তাই দ্রব্যমূল্য অবশ্যই স্থিতিশীল থাকবে।
আইএইচআর/এমআরআর/জেআইএম