জাগো জবস

আগে অবসর নিলে কি আয়ু বাড়ে?

করোনা মহামারির মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ অগ্রাধিকারের কাজটুকু শুধু টিকিয়ে রাখায় কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে। এ কারণে করোনায় অনেকের চাকরি চলে যাচ্ছে। চাকরি থেকে অবসর দেওয়া বা নেওয়ার বিষয়গুলো এমনিতেই কম বেদনার নয়। আর মহামারির এ সময়ে চাকরি ছেড়ে দেওয়া বা আগে অবসর নেওয়া যেন ‘বোঝার ওপর শাকের আঁটি’। কারণ আগে-ভাগে অবসর নিতে হলে প্রয়োজনীয় আর্থিক সক্ষমতার প্রস্তুতি থাকা জরুরি।

Advertisement

করোনাকালে ব্যতিক্রমও আছে। নিউ নরমাল বাস্তবতায় তরুণ প্রজন্মের অনেকে পেশা বদল করে অন্য ভালো কাজের জন্য, স্বনির্ভর উদ্যোক্তা হিসেবে যুক্ত হয়ে আয়-রোজগারে জড়িয়ে ভাগ্যের দুয়ার খুলে এনেছেন। অনেকেই নিজের সম্পদে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। আপন সম্পদের অগ্রাধিকার সুরক্ষায় ব্যক্তি মানুষ এখন যত মূল্যায়ন করছেন, আগে ততটা নয়। অনেকেই স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার কথা ভাবছেন। বাস্তব জীবনের শেষ সম্ভাবনার প্রচেষ্টাটুকু নতুন করে শুরু করার কথা ভাবছেন। কিন্তু চাকরি থেকে আগে-ভাগে অবসর নেওয়া যদি পরিকল্পিত উপায়ে হয়, তবে তো ভাগ্যবান। একটি ছেড়ে আরেকটি নতুন কাজের মধ্যে ঢোকার কারণে আপনি একা থাকছেন না। এসব ক্ষেত্রে আর্থিক সক্ষমতার প্রশ্ন জড়িত।

অবাক হলেও সত্য, উন্নত বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে আগে অবসর নেওয়ার রেওয়াজ প্রচলিত আছে। উন্নত বিশ্বে ৬৫ বছরের আগে চাকরি ছেড়ে দেওয়াকে বলা হয় নির্দিষ্ট সময়ের আগেই চাকরি থেকে অবসর নেওয়া। গবেষকদের প্রশ্ন, আগে-ভাগে চাকরি থেকে অবসর নিলে আয়ু বাড়ে কি? বিজ্ঞানীদের গবেষণায় বলা হয়, ‘যারা ৬৫ বছরের আগে অবসর নেন, তাদের দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে যায়।’ উল্লেখ্য, গবেষকরা আগের মতবাদকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সম্প্রতি এ নতুন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। আগের সেই মতবাদ ছিল এ রকম, ‘যারা আগেই অবসর নেন; তারা দীর্ঘ জীবন উপভোগ করেন।’

ব্রিটেনে এক গবেষণায় দেখা যায়, পঁয়ষট্টি বছরের অবসর গ্রহণকারীদের তুলনায় যারা পঞ্চাশ বছরে অবসর নিয়েছেন, তাদের মধ্যে মৃত্যুহার দ্বিগুণ। গবেষণায় একটি কেমিক্যাল কোম্পানির প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মীর ওপর জরিপ চালানো হয়। এদের সবাই পঞ্চান্ন, ষাট এবং পঁয়ষট্টি বছরে অবসর নিয়েছেন।

Advertisement

গবেষণায় জানা যায়, দুর্বল স্বাস্থ্যের জন্য এদের অনেকে নির্ধারিত সময়ের আগেই অবসর নিয়েছিলেন। দেখা যায়, নারীদের তুলনায় পুরুষরা অপেক্ষাকৃত কম বয়সে মারা যান। তেমনই উচ্চ আয় ও নিম্ন আয়কারীদের বেলায়ও কিছুটা তারতম্য ঘটে। তবে আয়ু নিয়ে সবচেয়ে বড় পার্থক্য দেখা গেছে অবসর গ্রহণের ক্ষেত্রে। হঠাৎ করে অবসর নেওয়াটা যে কোনোভাবেই মধুচন্দ্রিমা যাপন নয়, তা গবেষকরা স্পষ্টভাবেই স্বীকার করেছেন। শেল হেলথ সার্ভিসেসের গবেষকরা পঞ্চান্ন বছর বয়সীদের ওপর অবসর গ্রহণের প্রথম দশ বছর এবং ষাট বছর বয়সীদের ওপর পাঁচ বছর ধরে গবেষণা করেছেন। পঞ্চান্ন বছর বয়সীরা পরের ক্যাটাগরির লোকজনের তুলনায় কম বেঁচেছেন।

আবার ষাট বছর বয়সীরা কম বেঁচেছেন পঁয়ষট্টি বছর বয়সীদের তুলনায়। অবসর গ্রহণের এ পরিসংখ্যানের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বৃদ্ধদের সংখ্যা বাড়ার যোগসাজস আছে বলে গবেষকরা মনে করলেও তারা একথাও স্বীকার করেছেন, ‘কাজের ক্ষেত্র মানুষের জীবনের একটি অপরিহার্য বিষয়। মানসিক ও শারীরিক তৎপরতা, আত্মবিশ্বাস, সামাজিক যোগাযোগ এবং সর্বোপরি আয় এ সব কিছুই নির্ভর করে এর ওপর। কাজেই কেউ যদি সময় হওয়ার আগে অবসর নিয়ে ফেলেন; এটা ধরে নেওয়া যাবে না যে, ভালোভাবেই তা নিয়েছেন।’

অবসরে থাকা বয়সীদের বেশিরভাগই দেখা গেছে, তারা আবার কাজে ফিরে যেতে চান। সেটি পার্ট টাইম বা ফুল টাইম যা-ই হোক। কাজেই তাদের সেভাবে সুযোগ করে দেওয়া উচিত। যেমন- বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং শিক্ষার্থীদের পড়ানো ছাড়াও তাদের একটি বড় কাজ গবেষণা করে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করতে পারেন। এমনকি যেসব শিক্ষক আনুষ্ঠানিকভাবে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেননি, তারাও গবেষক শিক্ষার্থীদের গবেষণা তত্ত্বাবধান করতে পারেন এবং নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারেন। তাই সব দিক বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের সংস্পর্শে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যত দিন গ্রহণ করা যায়, ততই ভালো। ঠিক একই রকমভাবে বুদ্ধিবৃত্তিক নানা কার্যক্রমে অবসর গ্রহণকারীরা অর্জিত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা আরও বেশি দিন জাতির কাজে ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ পান।

মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মেক্সিকো প্রভৃতি কয়েকটি দেশে গবেষণায় দেখা যায়, চাকরি বা কাজ থেকে আগে অবসর নিয়েছেন, এমন মানুষ, যারা চাকরি থেকে যথাসময়ে অবসর নিয়েছেন তাদের চেয়ে গড় আয়ু দুই বা ততোধিক বছর বেড়ে যাওয়ার মতো অভাবনীয় ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সত্তরের দশকের প্রথম দিকে অবসর গ্রহণকারীদের গড় আয়ু অনেক কমে গিয়েছিল।

Advertisement

গবেষকরা জানান, বর্তমান অবস্থা ভিন্ন এ কারণেই, দ্রুত আয়ু ফুরানোর জন্য দায়ী- দরিদ্র, অপুষ্টি ও অচিকিৎসার মতো বিষয়গুলো মানুষ এখন পরাজিত করেছে। আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নতির কারণে অবসর গ্রহণকারীরা নির্ঝঞ্ঝাট জীবন উপভোগ করতে পারছেন। অবসর গ্রহণকারীদের মানসিক দৃঢ়তা বেড়ে যাওয়ার ফলে আয়ুর গড়ও বাড়ছে তাদের। প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা সরকারের বাংলাদেশেও মানুষের দক্ষতা বেড়েছে। সক্ষমতা বেড়েছে। আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নতির কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। যা সত্যিই আশাব্যাঞ্জক!

এসইউ/জেআইএম