কুষ্টিয়ায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিন হাসানের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাতের করা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন গ্রহণ করে তাকে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
এ সময় এসপির বিষয়ে আদালতে বলেছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের আচরণের বিষয়ে আরও সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে, ওই মামলাটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আদালত। আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।
এসপি এস এম তানভীর আরাফাতের বিরুদ্ধে জারি করা রুল শুনানি নিয়ে বুধবার (২৫ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।
এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিন হাসানের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় হাইকোর্টে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন এসপি এস এম তানভীর আরাফাত। ওইদিন তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে এ ঘটনার রেশ ধরে ফেব্রুয়ারি মাসে এস এম তানভীর আরাফাতকে এসপি পদমর্যাদায় বরিশালে বদলি করা হয়।
Advertisement
আদালতে ক্ষমার আবেদনে এস এম তানভীর আরাফাত উল্লেখ করেন, তিনি ম্যাজিস্ট্রেটকে চিনতে পারেননি। তাই এমন অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি দায়িত্ব পালনে আরও সতর্ক হবেন। এ ধরনের ভুল আর কখনো হবে না বলেও আবেদনে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
আবেদনে তিনি বলেন, বিচার বিভাগের জন্য আমার মনে সর্বোচ্চ সম্মান রয়েছে। কোনো অবস্থাতেই বিন্দুমাত্র অসম্মান দেখানোর কথা দূরে থাক, বিচার বিভাগের দেওয়া কাজে নিয়োজিত হতে পারলে নিজেকে সম্মানিত বোধ করি।
গত ২০ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিন হাসানের সঙ্গে দুর্বব্যবহারের ব্যাখ্যা দিতে পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতকে তলব করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদালত অবমাননার দায়ে তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- এই মর্মে ব্যাখ্যা চান আদালত।
এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে ২০ জানুয়ারি বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন।
Advertisement
গত ১৯ জানুয়ারি ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহসিন হাসানের সঙ্গে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতের দুর্বব্যবহারের বিষয়টি অভিযোগ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে আসে। ওই ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই এ অভিযোগ করেন।
এসপি তানভীর আরাফাতের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা একটি আবেদনের কপি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
ওই আবেদনে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসান বলেছেন, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হই। এরপর ১৬ জানুয়ারি আমার দায়িত্ব পালন অবস্থায় সকাল ১০টায় ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অবস্থানকালে জনৈক ভোটারের অভিযোগের ভিত্তিতে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করি। সেখানে কতিপয় ব্যক্তিকে কেন্দ্রের বুথের ভেতর লম্বা বেঞ্চে পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে বসে থাকতে দেখি। তখন তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বললে তারা পরিচয়পত্র না দেখিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার স্বাক্ষরিত এ ফোর সাইজের কাগজ দেখান।
‘আমি সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারকে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বুথের বাইরে ডাকি। কথা বলা শুরু করতেই ওই ভোটকেন্দ্রে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত ৪০ থেকে ৫০ জন ফোর্সসহ প্রবেশ করেন। তিনি প্রবেশ করেই প্রিসাইডিং অফিসারকে উচ্চস্বরে তলব করেন। তাৎক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন ফোর্স প্রিসাইডিং অফিসারকে আমার সঙ্গে কথা বলতে না দিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করেন। তখন আমি নিজের পরিচয় দিয়ে বলি প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে একটি বিষয়ে কথা বলছি। কথা শেষ হলে ওনাকে নিয়ে যান। এরপরও এএসপি মোস্তাফিজুর রহমান ধমক দিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত আমার দিকে অগ্রসর হন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করেন আপনি কে? কী করেন এখানে?’
তিনি বলেন, আমি আমার পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষিপ্ত স্বরে বলেন, আপনি এখানে কী করেন? বেয়াদব, বের হয়ে যান এখান থেকে। আমি পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সদের আক্রমণাত্মক চরম অসৌজন্যমূলক ও মারমুখী আচরণে হতচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকি। এরপর এসপিসহ তার সঙ্গীও ফোর্স আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে উদ্দেশ্য করে একাধিকবার বলেন, এসব লোককে কে পাঠায়? বেয়াদব ছেলে। এখানে কাজ কী আপনার? বের হয়ে যান এখান থেকে। তারা কেন্দ্র থেকে চলে যাওয়ার পর আমি বিষয়টি ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অবহিত করি।
জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আবেদনে আরও বলা হয়, পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সের আচরণ স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৬৯, ৭০, ৭৪, ৮০ ও ৮১ বিধির সরাসরি লঙ্ঘন।
এফএইচ/এমআরআর/এমকেএইচ