বিশেষ প্রতিবেদন

যুদ্ধ চলছেই মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলীর

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের হুজরাপুর মহল্লার মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী একজন সফল মানুষ। তিনি শুধু রণাঙ্গনেই যুদ্ধ করেননি, সমাজের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে এখনও অব্যাহত রেখেছেন তার যুদ্ধ। পরিবারের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদেরও নেতৃত্ব দিয়ে তিনি হয়েছেন একজন সফল মানুষ।  ৭১ বছর বয়সি ওমর আলী বয়সের ভারে শারীরিকভাবে অনেক দূর্বল হলেও মানসিক জোর এখনও তরুণের মতো। তরুণদের মতোই তিনি স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। যে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে একদিন হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত। বিশ্বের মানচিত্রে শুধু স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবেই নয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে এদেশ একদিন বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। পথ দেখাবে পৃথিবীর অনেক দেশকে।  তিনি সাহসিকতার সঙ্গে জীবন যুদ্ধেও লড়াই চালিয়ে গেছেন। শত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজের সন্তানদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন বড় হওয়ার। তার সন্তানরাও বাবার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। তারা প্রত্যেকে অর্জন করেছে উচ্চ শিক্ষা। যোগ্য কারিগরের মতো সন্তানদের তৈরি করে ওমর আলী হয়েছেন সফল বাবা।  মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী ১৯৪৪ সালে জন্ম গ্রহণ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামে। পড়াশোনা শেষ করে শুরু করেন শিক্ষকতা। ছাত্র জীবনে তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতেও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। কর্ম জীবনের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। লড়াকু এ সৈনিক মহান মুক্তিযুদ্ধে জেলাকে হানাদার মুক্ত করতে বিভিন্ন স্থানে মুখোমুখি যুদ্ধে অংশ নিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দেন। এ সময় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিক বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীরের সংস্পর্শে আসেন। তার নেতৃত্বেই ৭ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন।   ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও তিনি মনে করেন, এ যুদ্ধ এখনও চলছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চলবে।   একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর সুন্দরপুর সুজন একাডেমিতে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা শুরু করেন। মাওলানা ভাসানীর অনুসারী হয়ে রাজনীতি করতেন ও ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে দেশকে হানাদার মুক্ত করতে ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ৭নং সেক্টরে প্লার্টুন কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার অধীনে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের হুজরাপুর মহল্লায় বিয়ে করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং জীবন জীবিকার তাগিদে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।  তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে ডা. আসাদুজ্জামান, এমবিবিএস পাস করে বর্তমানে একটি ওষুধ কোম্পানিতে জেনারেল ম্যনেজার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ছোট ছেলে আহসানুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসিতে মাস্টার্স করছেন এবং মেয়ে আফরোজা বানু খুলনা টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার-টিটিসিতে কম্পিউটার ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।  তিনি বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য বলেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে আরও দৃঢ় বন্ধনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে গড়ে তুলতে হবে নতুন প্রজন্মকে। তবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আকাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। কারণ বর্তমান প্রজন্মের জন্মই হয়েছে স্বাধীনতা বিরোধীদের কঠোর হাতে দমনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে একমাত্র সেই আদলে জীবন্ত রাখা। যা সহস্র বছরে পৌঁছাতে প্রেরণা জোগাবে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। বিশ্বের মানচিত্রে শুধু স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবেই নয়, অসাম্প্রদায়িক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে এদেশ একদিন বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। পথ দেখাবে পৃথিবীর অনেক দেশকে।এসএস/পিআর

Advertisement