সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আমরাও বিরোধী দলে ছিলাম। সেদিন মানুষ হত্যা করিনি। আমরা থানা আক্রমণ আর পুলিশ হত্যা করিনি।’ নূর বলেন, ‘সেদিন আমাদের কী অপরাধ ছিল। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলাম। বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছিলাম। সেটিই কি ছিল আমাদের অপরাধ?নীলফামারীতে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলা ও চার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যার ঘটনার দুই বছর পূর্তিতে সোমবার বিকেলে জেলার রামগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে টুপামারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক স্মরণ সভায় তিনি একথা বলেন।দিনটিকে স্মরণ করে নূর বলেন, ‘১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালে এই দিনে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল। আর ২০১৩ সালের এই দিনে রামগঞ্জে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছিল জামায়াত-শিবির।এর আগে, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের নিহত ওই চার নেতাকর্মীর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের খোঁজখবর নেন এবং নিহতদের কবর জিয়ারত করেন। এ সময় মন্ত্রী নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে সান্ত্বনা প্রদান করেন। পরে তিনি স্মরণ সভায় যোগ দেন।সভায় টুপামারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম শাহের সভাপতিত্বে বক্তৃতা দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল হক, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি অক্ষয় কুমার রায়, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলিমুদ্দীন বসুনিয়া, সাধারণ সম্পাদক আবুজার রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মসফিকুর রহমান, জেলা যুবলীগের সভাপতি রমেন্দ্র নাম বর্ধণ প্রমুখ।উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার রাতে নীলফামারী জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ ও পলাশবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে হামলা চালায় জামায়াত-বিএনপি। ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে বিকেলে শহরে ফেরার পথে টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ বাজারে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলা শিকার হন।হামলায় টুপামারী ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী, ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন, মুরাদ হোসেন ও আওয়ামী লীগ কর্মী লিটন হোসেন লেবুসহ অপর পথচারী আবুবক্কর ছিদ্দিক নিহত হন। এদের মধ্যে ফরহাদ ও মুরাদ দুই সহোদর।এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে ২০১৪ সালের ১১ মার্চ ২১৭ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। ওই আসামিদের মধ্যে বর্তমানে হাজতে আছেন ৭৮ জন। আদালত থেকে জামিনে আছেন ৫৬ জন এবং ৮৩ জন পলাতক আছেন বলে পুলিশ জানায়।দ্রুত বিচারের দাবি নিহতের স্বজনদের:স্বজনদের অভিযোগ, আলোচিত ওই হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই দুই বছরেও। ঘটনার এক বছর পেরিয়ে পুলিশ ২১৭ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলেও বাদ পড়েছে অনেক উল্লেখযোগ্য আসামি। এদের মধ্যে অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দম্ভের সঙ্গে।হামলায় নিহত দুই সহোদর টুপামারী ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা ফরহাদ হোসেন (২৮) ও মুরাদ হোসেনের (২৫) বাবা ফারুক হক শাহ বলেন, ‘ঘটনার দুই বছর অতিবাহিত হলেও মামলার তেমন অগ্রগতি দেখছি না। সন্তানের হত্যাকারীরা আজও ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার চারিপাশে। অপরদিকে খুনের সঙ্গে জড়িত অনেক বাদ পড়েছে পুলিশের তদন্তে। তারা এখন দম্ভ ছড়িয়ে উল্টো হুমকি দিচ্ছে আমাদেরকে। আমি দ্রুত ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি।’টুপামারী ইউনিয়ন কৃষক লীগ সভাপতি খোরশেদ আলম হত্যা মামলার বাদি তার চাচাতো ভাই রাশেদ চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, অনেক আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ দেখছে না তাদেরকে। আমরা সকলে ওই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দেখতে চাই।’অপরদিকে আওয়ামী লীগ কর্মী লিটন হোসেন লেবুর বৃদ্ধা মা মরিয়ম নেছা তাকিয়ে আছেন ছেলে হত্যা বিচারের দিকে। ছেলে হত্যার ঘটনায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আর কয় (কত) দিন লাগিবে বিচার হইতে।’পুলিশ সূত্র মতে, ওই মামলায় চার্জশিট দাখিলের পর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করনি আদালত। এদের মধ্যে ৭৮ জন বর্তমানে জেলহাজতে এবং ৫৬ জন জামিনে রয়েছেন। বাকি ৮৩ জন পলাতক।মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল খায়রুল আনাম ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবু হেলাল। আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে তারা পুলিশের চোখ এড়িয়ে দুজনেই রয়েছেন পলাতক। মামলার এমন গতিতে ক্ষুদ্ধ স্বজনসহ এলাকার সাধারণ মানুষ।জাহেদুল ইসলাম/বিএ
Advertisement