দেশজুড়ে

মানসিক আঘাতেই আত্মহত্যা করে শ্রাবণী : নকলের সত্যতা মেলেনি

নারায়ণগঞ্জ শহরের গণবিদ্যা নিকেতন স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে হাবিবা শ্রাবণীর (১৫) আত্মহননের পেছনে ‘নকল’ করার অভিযোগ তুলেছিল শিক্ষকেরা যেটা নিয়ে তাকে চপেটাঘাত ও মানসিক অপমান করা হয়। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম নিশ্চিত হয়েছে শ্রাবণী আদৌ কোনো নকলের আশ্রয় নেয়নি। বরং নকলের অভিযোগ তুলে তাকে প্রচণ্ড মানসিক আঘাত করার কারণেই শ্রাবণী আত্মহত্যার পথ হয়তো বেছে নিয়েছে।সোমবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই তদন্তে এমন তথ্য উঠে আসে। দুপুর আড়াইটায় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পরিচালনা পরিষদের (ম্যানেজিং কমিটি) সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার তদন্ত সভায় এ বিষয়গুলো উঠে আসে।এর আগে নিতাইগঞ্জ ভগবানগঞ্জ এলাকায় শ্রাবণীর বাসায় পরিদর্শনে যান ওই তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা মহাপরিচালক প্রফেসর মো. এলিয়াস, সহকারী পরিচালক আব্দুল খালেক ও জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুর সালাম। এসময় তিনি শ্রাবণীর পরিবারের মা ও দুই ভাইসহ প্রতিবেশিদের সঙ্গে কথা বলেন।এদিকে স্কুলছাত্রী হাবিবা আক্তার শ্রাবণীর আত্মহননের ঘটনায় দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা করেছে তার বাবা মো. হাবিবউল্লাহ। সোমবার রাত ৮টায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় ওই মামলাটি রেকর্ড করা হয়।শ্রাবণীর বাবা হাবিবউল্লাহ জাগো নিউজকে জানান, তার মেয়ে শ্রাবণীকে নকলের কথিত অভিযোগ এনে অপমান, চপেটাঘাত করায় আত্মহত্যা করতে সে বাধ্য হয়।নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের ওসি এম এ মালেক জাগো নিউজকে জানান, আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগ এনে কামরুল হাসান মুন্না ও নাসরিন আক্তারকে অভিযুক্ত করে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মহাপরিচালক মো. এলিয়াস তদন্ত সভা শেষে সংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা বিভিন্ন তথ্য নিয়েছি। তা শিক্ষা অধিদফতরে পাঠানো হবে সেখান থেকে তারা ব্যবস্থা নিবেন। এছাড়াও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন তদন্ত করে আইন গত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।তদন্তের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, তদন্তে উঠে এসেছে মেয়েটার মনে আঘাত লেগেছে। তার পক্ষে কেউ ছিল না। সকলেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। এমনকি শিক্ষক কামরুল হাসান মুন্না (ইতোমধ্যে সাময়িক বহিষ্কার হওয়া) তার পক্ষে না দাঁড়িয়ে বিপক্ষে গেছে। প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পেয়ে সুইসাইড করেছে। তবে তারা বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি শিক্ষকেরা। যাচাই বাছাই না করে অভিযোগ করেছেন। কেউ নকলের পর্যালোচনা করেন না। এছাড়াও ওনারা ওই শিক্ষার্থীকে অপদস্ত করার বিষয়ে অস্বিকার করেছেন।এসময় চপেটাঘাতের অভিযুক্ত খণ্ডকালীন শিক্ষক কামরুল হাসান মুন্না শ্রাবণীকে থাপ্পড় দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, শ্রাবণীর মায়ের সঙ্গে ভাই-বোনের সম্পর্কে মামা হিসেবে দাবি করে তিনি থাপ্পড় দিয়েছেন। এছাড়া আর কোনো কিছুই করেননি তিনি।ওইদিনের পরিক্ষায় পরিদর্শক ও শিক্ষিকা নাসরিন বেগম তদন্ত কমিটিকে জানান, শ্রাবণীকে নকল করতে দেখেন নাই। কিন্তু উত্তরপত্র পিনাপ করতে গিয়ে তিনি ওই ৮ পৃষ্টার কাগজ পেয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের কাছে হস্তান্তর করে।এসময় উপস্থিত ছিলেন গণবিদ্যা নিকেতনের পরিচালনা পরিষদের (ম্যানেজিং কমিটি) সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মুকুল, সচিব ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক এমএ কাইয়ুম, শিক্ষক প্রতিনিধি মাওলানা মাঈনুদ্দিন, মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, নারী শিক্ষিকা প্রতিনিধি জাহানারা বেগম, অভিভাবক সদস্য মো. আরজু আহমেদ, নুরুল ইসলাম, সদস্য শফি হোসেন মোল্লা, হেনা খাঁন, জানে আলম, সহকারী প্রধান শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত মো আব্দুল জব্বার প্রমুখ।প্রঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার শহরের গণবিদ্যা নিকেতন বার্ষিক পরীক্ষার অংশ হিসেবে পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উম্মে হাবিবা শ্রাবণী। পরীক্ষা চলাকালীন অসদুপায় (নকল) অবলম্বনের অভিযোগে পরীক্ষার পরিদর্শক নাসরিন বেগম আটক করে স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষকের কাছে নিয়ে যায়। এসময় ওই কক্ষে থাকা স্কুলের খণ্ডকালীন শিক্ষক কামরুল হাসান মুন্না শিক্ষার্থী শ্রাবণীকে উপুর্যপরি চড় থাপ্পড় মারেন এবং গালমন্দ করে পরিবারের কাছে অভিযোগ করবেন বলেন। পরে ওইদিনের পরীক্ষা থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এ অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ করে শ্রাবণীর পরিবারের সদস্যরা।এছাড়াও হাবিবা আত্মহত্যার কারণ হিসেবে স্কুলের শিক্ষিকা নাসরিন বেগম ও খণ্ডকালীন শিক্ষক কামরুল হাসান মুন্নার নাম উল্লেখ্য করে চিরকুট লিখে যায়। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আত্মহনকারী উম্মে হাবিবা শ্রাবণীর ময়নাতদন্ত শেষে তার গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। পরে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভায় কামরুল হাসান মুন্নাকে সাময়িক বহিষ্কার ও নাসরিন বেগমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।শাহাদাত হোসেন/এমএএস/বিএ

Advertisement