২১ আগস্ট ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতা। ১৫ আগস্টের বিচার করা যাবে না- এভাবে আইন করা হয়েছিল। এ-রকম নিকৃষ্ট ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে আর একটিও ঘটেনি। ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সংবাদ শুনে সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর উইলি ব্রান্ড (Willy Brandt) মন্তব্য করেছিলেন, ‘শেখ মুজিবকে হত্যার পর বাঙালি জাতিকে আর বিশ্বাস করা যায় না।’ আবার ২১ আগস্টের আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা করার পর নিজামী-খালেদা সরকার বলেছিল, ‘শেখ হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিল। এমনকি থানায় মামলা পর্যন্ত নিতে নিষেধ করা হয়েছিল। প্রয়াত আবদুল জলিলসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে রমনা থেকে মতিঝিল থানা পর্যন্ত সারাদিন লেফট-রাইট করিয়েছিল।
Advertisement
জামায়াত-বিএনপি সরকারের মদদপুষ্ট হায়েনারা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। খালেদা-নিজামী সরকারের উপমন্ত্রী পিন্টু এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতাদের একজন। কিন্তু এখনও আড়ালে রয়ে গেছে সব খলনায়ক। এই হত্যাকাণ্ডের কাজে জড়িত সব খুনিকে খুঁজে বের করতে হবে। ২৫০ পুলিশ সদস্য সেদিন এ জনসভায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। কীভাবে হত্যাকারীরা পালিয়ে গেল। একজন পুলিশ সদস্য আহত হলেন না। রহস্যটা কী? এখনও সেই পুলিশ সদস্যদের কেউ কেউ চাকরিতে আছেন। তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। কোন নরপিশাচরা সেদিন আলামতগুলো নষ্ট করেছে, তাদের খুঁজে বের করা খুব কঠিন কাজ হবে না। কোন পুলিশ সদস্যরা সেদিন হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে গুলি না ছুড়ে আহতদের ওপর গুলি কিংবা টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে। ইচ্ছা থাকলে আর মাথার বুদ্ধি খাটালে এ ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত সব পুলিশ সদস্যকে খুঁজে বের করা যায়।
গত ২১ আগস্টের আলোচনায় স্পষ্ট করে বলেছেন, জামায়াত-বিএনপির মহারথীরা এর সাথে যুক্ত ছিল। ২০০৫ সালের ২১ আগস্টের আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছেন, খালেদা জিয়া এখন হত্যাকারী পিন্টুকে সমর্থন করেন। তার প্রমাণ তার ভাইকে তিনি ছাত্রদলের সভাপতি বানিয়েছেন। পাঠকদের স্মরণে আছে নিশ্চয়, সে সময় খালেদা জিয়া, মান্নান ভূঁইয়া, খন্দকার মোশাররফ সাহেবরা ‘জজমিয়া’ নাটকের কত ফিরিস্তি না দিয়েছেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশের ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলা নিয়ে আলোচনা হয় এবং নিন্দা প্রস্তাব হয়। অথচ বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে এ নিয়ে কোনো আলোচনা করতে দেওয়া হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এই ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফাজলামো করেছে। হামলা ও হত্যার আলামত নষ্ট করার পর শেখ হাসিনার বাসভবনে গেছে তদন্তের নামে বেয়াদবি করতে। শেখ হাসিনার বুলেট প্রুফ গাড়িতে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার লেগেছে না গুলির চিহ্ন রয়েছে তা দেখার জন্য। এটা থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল হত্যাকারীরা সরকারের নিয়োজিত এজেন্ট ছিল। সারাদেশের বিবেকবান মানুষ এ হত্যার নিন্দা জানিয়েছিল। অধ্যাপক এমাজউদ্দিন বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী বলে পরিচিত, তিনি পর্যন্ত ধিক্কার জানিয়ে নিবন্ধ লিখেছিলেন।
২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট (মাত্র তিনদিন পরে) দৈনিক প্রথম আলোর এক উপ-সম্পাদকীয় লিখেছিল : ‘এই দুষ্টচক্রের ইতররা কারা, সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে এই টুকু বলব, তারা দেশের শত্রু। তারা রাষ্ট্রের শত্রু। তারা জাতীয় স্বার্থের শত্রু। তাদের সমূলে বিনাশ করা জাতীয় স্বার্থে অবশ্যই প্রয়োজনীয়।’ এত কিছুর পর বিএনপি-জামায়াত জোটের মন্ত্রীরা এটা নিয়ে মস্করা করেছিল। পৃথিবীর ইতিহাস বলে খুনি যত শক্তিশালী হোক আর যত আলামত নষ্ট করুক না কেন, হত্যাকারীরা রেহাই পায় না। গোয়েন্দা সংস্থার কারা কারা হত্যার আলামত নষ্ট করেছে, সেটি বের করা খুব একটা কঠিন কাজ না, এটা বুঝতে সমর অস্ত্রের জ্ঞান থাকার খুব একটা দরকার হয় না।
Advertisement
ফায়ার ব্রিগেডের কোন কোন সদস্য নিহতদের রক্ত ধুয়ে ফেলেছে, সেটি বের করাও খুব একটা কঠিন কাজ নয়। সেদিন ফায়ার ব্রিগেডের সে সময়কার কর্মরত সদস্যদের তালিকা দেখে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনলে খুব সহজে এদের পাওয়া যাবে। অবিস্ফোরিত গ্রেনেড কারা ধ্বংস করে ফেলেছে। এসব ক্রিমিনালকে খুঁজে বের করা এমন কোনো কঠিন কাজ হবে না। অবাক করা বিষয়, বিগত ১০ বছরেও ওই মামলার কোনো সুরাহা হয়নি। ২১ আগস্টের হত্যাযজ্ঞ সারা পৃথিবীর প্রায় সব প্রচারমাধ্যম শীর্ষ সংবাদ হিসেবে তুলে ধরেছে, আর বাংলাদেশ টেলিভিশন সেদিন তিন নম্বর সংবাদ হিসেবে তা প্রচার করেছে।
দুই.শেখ হাসিনা বহুবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু মৃত্যুভয়ে তিনি পিছিয়ে যাননি। যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনায় রয়েছে, তাই এখনই সময় এই হত্যাকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা। আওয়ামী লীগের একটা নিজস্ব ইনটেলিজেন্সি সংস্থা থাকা দরকার। আর সব সময় মনে রাখা দরকার, এই সরকারের সময়ে যেন কোনো ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটতে না পারে। না ঘটার সব প্রস্তুতি যেমন নেওয়া দরকার, তেমনি ঘটলে কতদূর তা মোকাবিলা করা যাবে তার প্রস্তুতি থাকা একান্ত প্রয়োজন। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মীর মনে রাখতে হবে শেখ হাসিনার জীবন সবার আগে। শেখ হাসিনার জীবন কর্মবহুল ও বৈচিত্র্যে ভরপুর। এখন এটা শুধু একটি নামই নয়, এটা একটি প্রতিষ্ঠান। Work is Worship, যার জীবনের মূলমন্ত্র; কর্মজ্ঞান ও ভক্তির অপূর্ব সমন্বয়ে গঠিত এক অসাধারণ জীবন তার। প্রয়াত রাজনীতি বিজ্ঞানী অধ্যাপক শামসুল হুদা হারুন শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে খুবই যথার্থ বলেছিলেন, “শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির Ralling Point, Cementing Bond|
জননেত্রী শেখ হাসিনা এদেশের জনগণের কাছে মুক্তিযুদ্ধের একটি রূপক। সুখে থাকার, স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করার আকর্ষণ মানুষের জন্য খুবই স্বাভাবিক। সাধারণের জন্য এটাই কাঙ্ক্ষিত জীবনযাপন। ত্যাগের কথা শাস্ত্রে আছে, মনীষীদের জীবন গ্রন্থে আছে, চলমান জীবনাচরণে থাকাটা অস্বাভাবিক। শেখ হাসিনার চরম শত্রুও বলবেন, শেখ হাসিনা এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। শেখ হাসিনা জেনে-শুনে এমন একটা জীবন বেছে নিয়েছেন। সমগ্র দুনিয়ায় গোটাকতক মানুষকে এ-রকম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সব সময় চলতে হয়। বিশেষ করে যে সমস্ত দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী নেতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য রাজনীতি করছেন; তাদের পদে পদে বিপদ। ঘাতকের বুলেট তাদের সব সময় অনুসরণ করতেই থাকে।” বঙ্গবন্ধু জোট সম্মেলনে স্পষ্ট করে বলেছিলেন, “আমার অবস্থা যদি চিলির আলেন্দের মতো হয়, তবু আমি সাম্রাজ্যবাদের কাছে মাথা নত করব না।” তখনই সেই সভাতেই কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, “এতদিন সাম্রাজ্যবাদের বুলেট আমাকে অনুসরণ করত; কিন্তু আজ বুঝলাম সেই বুলেট এখন থেকে শেখ মুজিবকে অনুসরণ করবে। আজ যতদিন যাচ্ছে প্রমাণিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা ছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ক্রীড়ানক।”
শেখ হাসিনা দেশে ফেরবার এর মাত্র পাঁচ দিন আগে ১১ মে তারিখে (১৯৮১ সাল) বিশ্বখ্যাত ‘নিউজ উইক’ পত্রিকা বক্স আইটেম হিসেবে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। শেখ হাসিনা যখন দেশে ফেরেন তখন সময়টা খুব খারাপ ছিল। বলতে গেলে যে কোনো সময় একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে, খুনিরা যেন সব জায়গায় ওতপেতে আছে। শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছিলেন, “তিনি নিহত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত নন; এমনকি যে সরকারের মোকাবিলা করবেন তার শক্তিকে তিনি বাধা বলে গণ্য করবেন না। জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।”
Advertisement
নিজের মনোবল কত দৃঢ় হলে এভাবে একজন মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে। পাঠকমাত্রই জানেন, অসংখ্যবার শেখ হাসিনার ওপর ঘাতকরা হামলা চালিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা চক্রান্তের সাথে পাকিস্তানপন্থি নরপিশাচরা যেমন জড়িত ছিল তেমনি শেখ হাসিনাকে তারাই টার্গেট করেছে। এমনকি ১৯৭৫-এর ১৪ আগস্ট লন্ডনে বিখ্যাত ‘টাইমস’ পত্রিকায় ঘাতকরা একটা বিজ্ঞাপন ছাপায়। সেখানে বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানকে ফ্যাসিস্ট ডিকটেটরশিপ আখ্যা দিয়ে তাকে উচ্ছেদের কাজে বিশ্ব জনমতের সাহায্য চাওয়া হয়। আবার এবারের সেই আগস্ট মাসেই হঠাৎ করে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে, শেখ হাসিনাকে গুলি করা হয়েছে। ২০০৮ সালের ১৭ আগস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তার লেখায় বলেছেন, “১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে এ-রকম অনেক ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছিল।”
শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র পাঁচ দিন আগে, অর্থাৎ ১৯৮১ সালের ১১ মে ‘নিউজ উইক’ সেই সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলতে পেরেছিলেন, “আমার একটা জেদ রয়েছে, সেটা হলো দেশকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে আসা। হৃদয়ের গভীরতম অনুভূতি দিয়ে আমি বুঝি যে জনগণের ভাগ্যকে পরিবর্তন করে দিতে পারে যে অর্থনৈতিক উন্নতি, তা আসতে পারে কেবলমাত্র রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মধ্য থেকেই।” রাজনীতির আসল সত্যটি তিনি একেবারে শুরুতেই ধরতে পেরেছিলেন। তাই তো তিনি বলতে পারেন, “আমার রাজনীতি হচ্ছে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করা। আমরা তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করতে চাই, যেখানে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র জনগণ এক মানবেতর জীবনযাপন করে।”
১৯৯৭ সালের ৪ জুলাই জাপানের বিখ্যাত ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদান করে। ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “আমি এমন একটি দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি, যে দেশের জন্য আমার পিতা, আমাদের মহান নেতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অশ্রুপাত করেছেন, ঘাম ঝরিয়েছেন ও বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। ব্যক্তিগত সকল কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে আমি এখন আমার দেশের কোটি কোটি মানুষের সাথে একই কণ্ঠে উচ্চারণ করি- আমাদের কাছে গণতন্ত্রের চেয়ে বড় কোনো আদর্শ নেই। গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীনতার চেয়ে বড় কোনো ভিত্তি নেই এবং আইনের শাসন ছাড়া স্বাধীনতার জন্য বড় কোনো গ্যারান্টি নেই।”
গত ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় স্পষ্ট করে বলেছেন, “বারবার এই খুনিদের পুরস্কৃত করার খেলাও দেখেছি। কেউ কেউ খুনিদের নিয়ে দল গঠনও করেছেন। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বঙ্গবন্ধুর খুনি হুদা ও রশিদকে নিয়ে ইত্তেফাক কার্যালয়ে বসে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। জেনারেল এরশাদ খুনিদের দিয়ে ফ্রিডম পার্টি গঠন করে কর্নেল ফারুককে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করেছিলেন। আর খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির অবৈধ নির্বাচনে খুনি ফারুক-রশিদকে সংসদে বসিয়েছিলেন। বিরোধীদলীয় নেতাও করেছেন। জিয়া-এরশাদ-খালেদা বারবার খুনিদের পুরস্কৃত করেছেন; ক্ষমতার সাথী করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে অনেক চেষ্টা হয়েছে তার নাম মুছে ফেলার। খুনিরা নীতিহীন, আর্দশহীন, দিক-নির্দেশনাহীন একটি বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিল। খুনিরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, তারা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধান ও আদর্শকে হত্যা করতে চেয়েছিল।”
আমরা সবাই ভালো করেই বুঝতে পারি, যে হত্যা ও ক্যু-এর রাজনীতি বঙ্গবন্ধুর ঘাতকরা ও তাদের মদদদাতারা শুরু করেছিল, তা এখনও অব্যাহত আছে। তাদের এখন একমাত্র টার্গেট শেখ হাসিনা। হত্যাকারীদের অনুসারীরা এখনও আমাদের আশপাশে আছে। প্রশাসনযন্ত্রের মধ্যে ঘাপটি মেরে আছে। আওয়ামী লীগকে বুদ্ধিমত্তা ও কৌশল দিয়ে তা প্রতিহত করতে হবে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সাথে অনেকগুলো খারাপ মানুষ সম্পৃক্ত ছিল। সেই সময়কার জামাত-বিএনপি জোট সরকারের প্রশাসনযন্ত্র থেকে শুরু করে তাদের রাজনৈতিক সদস্যরা সরাসরি জড়িত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটা অংশ এই ঘাতকদের হামলায় সহায়তা এবং প্রটেকশন দিয়েছে।
সেদিনকার জনসভায় দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের জিজ্ঞসাবাদ করলে খুব সহজেই এই ঘটনার মূল হোতাদের আবিষ্কার করা যাবে। সেদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে একেবারে নেতৃত্ববিহীন করতে চেয়েছিল। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় সে-যাত্রায় রক্ষা পাওয়া গেছে। তারপরও আইভি রহমানসহ এতগুলো রাজনৈতিক কর্মীর জীবন প্রদীপ নিভে গেল। এখনও অসংখ্য মানুষ গ্রেনেডের স্প্লিন্টার শরীরে নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু-কন্যার কান কোনোদিন ঠিক হওয়ার নয়। হয়তো সাথে সাথে বিদেশে যেখানে উন্নত প্রযুক্তি আছে সেখানে নিতে পারলে অপেক্ষাকৃত ভালো চিকিৎসা সম্ভব ছিল। কিছুটা হলেও ভালো অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু-কন্যার জেদ ছিল তিনি সব আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে কিছুতেই বিদেশ যাবেন না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টার, প্রতিমুহূর্তের যন্ত্রণা তাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তাই পুলিশ বাহিনীর যারা এই জঘন্য হামলার সাথে যুক্ত ছিল তাদের তিনি খুঁজে বের করতে পারবেন। এখনও এই ঘাতকরা শেখ হাসিনার দিকে তাক করে আছে। এদের সমূলে উৎপাটনের এখনই সময়। শেখ হাসিনার ওপর হামলার অর্থ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার শেষ আশ্রয়ের ওপর আক্রমণ। পক্ষ-বিপক্ষ সব মহলই স্বীকার করবেন, শেখ হাসিনা বাঙালির স্বাধীনতা ও জাতীয়তাবাদের এখন শব্দব্রহ্ম। লোকায়ত বাংলার ইহজাগতিকতার বীজমন্ত্র। কেউ এটা বুঝে তার পক্ষে থাকে; আবার কেউবা এটা জেনেই বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তাই ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতা।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
এইচআর/এএসএম