ফিচার

২৫০০ বছর ধরে টিকে আছে মশা, জানুন আরও রহস্য

ছোট্ট একটি পতঙ্গ। যার ভয়ে আমরা দিন-রাত ঘরে কয়েল বা মশাবিরোধী স্প্রেসহ আনুষঙ্গিক জিনিস ব্যবহার করে থাকি। তবুও নাছোড়বান্দা মশা ঘর থেকে তাড়ানো কষ্টকর। ছোট এই পতঙ্গের এক কামড়ে হতে পারে ভয়াবহ সব রোগ। আর এ কারণে মশা দেখে সবার ভয়!

Advertisement

আজ বিশ্ব মশা দিবস। প্রতিবছর ২০ আগস্ট বিশ্বেজুড়ে পালিত হয় এই দিবসটি। মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে সবার সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আরও এক বিশেষ সম্মানে পালিত হয় দিবসটি।

মশা দিবসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একজন বিশিষ্ট চিকিৎসকের নাম। তরোনাল্ড রস (১৮৫৭-১৯৩২) নামের এই ব্রিটিশ চিকিৎসককে সম্মান জানাতেই যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন দিবসটি পালনের সূচনা করেছিল। ১৯৩০ সালের শুরু হয় বিশ্ব মশা দিবস পালনের আনুষ্ঠানিকতা। যা দিন দিন বাড়ছে।

জানেন কি, রোনাল্ড রসের মহৎ এক কর্মের জন্য ২০ আগস্ট পালিত হয় মশা দিবস। তিনিই ম্যালেরিয়া রোগের কারণ আবিষ্কার করেন। ১৮৯৭ সালের ২০ আগস্ট তিনি এই আবিষ্কারটি করেন। এই আবিষ্কারের জন্য পরবর্তী সময়ে তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

Advertisement

বিশ্বখ্যাত চিকিৎসক রোলান্ড রসের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের আলমোড়া নামের একটি পার্বত্য এলাকায়। মাত্র ৮ বছর বয়সে রোনাল্ড রসকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়। তিনি বরাবরই প্রাণিবিদ্যায় আগ্রহী ছিলেন। পাশাপাশি ছন্দ, সংগীত ও কাব্য নিয়েও তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।

বাবার ইচ্ছায় চিকিৎসক হিসেবে লন্ডনের সেন্ট বার্থলোম্যুর হাসপাতালে যোগ দেন রস। তিনি ১৮৮১ সালে এলএসএ (লিসেনসিয়েট অব দ্য সোসাইটি অব অ্যাপোথেক্যারি) ডিগ্রি অর্জন করে ইন্ডিয়ান মেডিকেল সার্ভিসে যোগ দেন। ভারতে কাজের সময়ই তিনি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি করেন।

তার আবিষ্কারের পরও মশাবাহিত নতুন নতুন ভাইরাসের নাম এসেছে। মশাবাহিত রোগে আজও বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটছে। গবেষকেরা বলছেন, প্রতিবছর প্রায় ৮ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় মশাবাহিত ভাইরাসে।

বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। বর্ষাকাল এলেই মশার উৎপাত শুরু হয়। বিশেষ করে এডিস মশার কবলে পড়ে অকাল মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। তারপরেও মশা সম্পর্কে মজার কিছু তথ্য জানলে আপনি রীতিমতো চমকে উঠবেন-

Advertisement

>> বিভিন্ন সভ্যতার যেমন ইতিহাস আছে। তেমনি মশারও ইতিহাস আছে। দীর্ঘ ২৫০০ বছর ধরে তারা পৃথিবীর বুকে টিকে আছে।

>> পুরুষ মশা কেবল একদিন বাঁচে। তবে নারী মশা হতে সাবধান। নারী মশা সচরাচর ৬-৮ সপ্তাহ বেঁচে থাকে। আর পুরুষ মশা একদিনের বেশি বাঁচলেও; তাদের পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক হয়ে পড়ে।

>> চাইলেই মশাকে পরাস্ত করা যায়। কারণ মশারা খুব দ্রুত গতিতে উড়ে না। সেই সঙ্গে বেশি দূর চলেও যায় না।

>> মশারা চাইলে সামান্য পানিতেও প্রজনন ঘটাতে পারে। এমনকি টায়ারে কিংবা চায়ের কাপে সামান্য পানি জমলে, সেখানেও ডিম পাড়ে তারা। এ কারণে বাড়ির আশেপাশে পানি জমা থাকলে তা পরিষ্কার রাখুন নিয়মিত।

>> অনেকটা হাস্যকর হলেও সত্যিই যে মশারাও কিন্তু ভয়ে থাকে। কারণ মশা ডিম পাড়ে পানিতে। আর সেই ডিম খায় মাছ। অন্যদিকে বাচ্চা মশা ফড়িংয়ের পছন্দের খাবার। সে কারণে মাছ আর ফড়িং দেখলে মশা ভয়ে থাকে।

>> কামড় দেওয়ার জন্য মশার কোনো দাঁত নেই। তবে নিজের শুঁড় ব্যবহার করে তারা কামড় দেয়।

>> পুরুষের মতো স্ত্রী মোও গাছের কাণ্ডের রস বা ফুলের মধু পান করে বেঁচে থাকতে পারে। তবে ডিম গঠনের জন্য স্ত্রী মশকীর মানুষের রক্তের প্রয়োজন পড়ে। এ কারণেই তারা কামড়ায়

>> জীবিত মানুষের রক্ত গরম থাকে কিন্তু মৃত মানুষের রক্ত ঠান্ডা। এ কারণে স্ত্রী মশা মৃত মানুষকে কামড়ায় না। মৃত্যুর পর যতক্ষণ লাশের রক্ত গরম থাকে; ততক্ষণ এরা কামড় দেয়। এরা কার্বনডাইঅক্সাইড এর উপস্থিতি নির্ণয় করে মানুষের কাছে যায়।

>> মশার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার প্রজাতি আছে। এর মধ্যে অল্প কিছু প্রজাতিই কেবল মানুষসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীকে কামড়ায়।

>> মশা চোখ দিয়ে কম দেখলেও, গন্ধ শোষণের ক্ষমতা খুব বেশি তাদের। স্ত্রী মশা ১৩৫/১৬০ ফুট দূর থেকে বুজে নিতে পারে কোথায় তার খাবার আছে।

>> কেবলমাত্র স্ত্রী মশাই মানুষকে কামড়ায়। আর পুরুষ সদস্যরা আপনার চারপাশে শব্দ করে যাতে আপনি ব্যতিব্যস্ত থাকেন। অন্যদিকে স্ত্রী মশঅ নির্বিঘ্নে রক্ত শুষে নিতে পারে।

>> একটি মশক সেকেন্ডে প্রায় ৩০০-৬০০ বার ডানা ঝাপটায় পারে। অতি অল্প সময়ে এতবার ডানা ঝাপটানোর কারণেই গুনগুন শব্দ শুনতে পাই আমরা।

জেএমএস/এমএস